‘জিজীবিষা’— একটি আদ্যোপান্ত আশাবাদী নাটক

Social Share

তুহিন শুভ্রঃ সৃষ্টির আদিকাল থেকে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে কতশত প্রাণীকূল পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছে, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নানান প্রতিকুলতার সাথে লড়াই চালিয়ে গেছে। কখনো সফল হয়েছে, কখনো হয়নি। আবার কখনো শুধুমাত্র প্রজন্মের অস্তিত্ব রক্ষা করতে গিয়ে পারিপার্শ্বিকতার সাথে আপোস করে নিতে বাধ্য হয়েছে। আর সেটা করতে গিয়ে কেউ কেউ পরিবর্তীত করেছে নিজেদের খাদ্যাভ্যাস, প্রজনন-শর্ত; আবার কারো সম্পূর্ণ জীবনচক্রটাই বদলে গেছে অস্তিত্বের দাবিতে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যে সংগ্রাম-প্রক্রিয়াকে আমরা নাম দিয়েছি অভিযোজন। কখনো বা ‘যোগ্যতমের উদবর্তন’ বলে আখ্যায়িত করেছি।

এই বৃহৎ প্রাণীজগতের পিঁপড়ে, প্রজাপতি, মানুষ, কাঠবিড়ালি, মাছের মতো কেউ কেউ এভাবেই নিজেদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। ম্যামোথ, ডোডো-পাখির মতো কেউ কেউ এই লড়াইয়ে হেরে গিয়ে কালের গর্ভে চিরতরে বিলীন হয়েছে। শ্লথ, ওরাংওটাঙের মতো আবার কেউ কেউ এখনো এই লড়াই জারি রেখেছে। আসল কথা হলো বাঁচার তাগিদে লড়াই জারি রাখা— যা কিনা জীবনের প্রথম শর্ত। এই বিষয়কে আশ্রয় করে নেপালের নাট্যদল মাণ্ডালা থিয়েটার ঋত্বিকের দেশ-বিদেশের নাট্যমেলায় উপহার দিলো একটি চোখজুড়ানো নাটক ‘জিজীবিষা’-(Desire to Live) বা বাঁচার আকাঙ্খা।

এই বৃহৎ প্রাণীজগতের পিঁপড়ে, প্রজাপতি, মানুষ, কাঠবিড়ালি, মাছের মতো কেউ কেউ এভাবেই নিজেদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। ম্যামোথ, ডোডো-পাখির মতো কেউ কেউ এই লড়াইয়ে হেরে গিয়ে কালের গর্ভে চিরতরে বিলীন হয়েছে।

এই নাটকের প্রতিটি চরিত্র একেকটি মাছের ভূমিকায় অবতীর্ণ। মঞ্চ তাদের মুক্ত জলজ অঞ্চল। প্রযুক্তি আর আলোর কৌশলগত প্রক্ষেপনে মঞ্চ হয়ে উঠল বিস্তীর্ণ, গভীর সমুদ্র। প্রত্যেক চরিত্র তাদের দুর্দান্ত মেক-আপে, বিশেষ কস্টিউমে, ভাসমান অঙ্গ সঞ্চালনে একেকটি ভিন্ন প্রজাতির মাছ হয়ে উঠলো। দলবেঁধে তাদের বিচরণে, উইং ধরে প্রবেশ-প্রস্থানে মাছের চলনের অবিকল ছায়া ফুটিয়ে তুললো অসম্ভব পারদর্শিতায়।

পাখনার ওঠানামায় জল কেটে এগিয়ে যাওয়া, কিংবা চলতে চলতে আচমকা লেজের ঝাপটায় বিপরীত দিকে বাঁক নেওয়া, কিংবা মুখে বুদবুদ নিয়ে জলের নীচ থেকে উপরের দিকে উঠে আসা— এইসব আশ্চর্য দৃশ্যের জন্ম হতে লাগলো চোখের সামনে।

ভাবলে অবাক হতে হয়, একেকটি দৃশ্য তৈরির পিছনে কোরিওগ্রাফারের কতখানি মেধা, অভিনেতাদের কত অনুশীলন, কত পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়! নির্দেশক রাজন খাটিওয়াড়া ও কোরিওগ্রাফার জেডি তামুকে কুর্নিশ। আলাদা করে বলতে হয় এই নাটকের মিউজিকের কথা। মিউজিক করেছেন উৎসব বুদ্ধাথোকি। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত, চোখের সামনে কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়, কবিতায় ইমেজারির মতো।

সেইসব দৃশ্য আর মিউজিকের যোগ্য সংগতে এ যেন এক সার্থক দৃশ্যকাব্য। নাটকের ভিতরে প্রবেশ করতে এবং তার অন্তরটুকু ছুঁয়ে আসার পথে একমাত্র অন্তরায় ছিলো সংলাপের ভাষাগত অসুবিধা। গভীর জীবনবোধ থেকে নিংড়ে নেওয়া সংলাপ ও গানের কথার সারমর্ম অনেকখানি অধরাই থেকে গেলো শুধু সংলাপের ভাষা নেপালী বলে। এটুকুই আক্ষেপ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights