জনতার পালস মাপতে রবিবাসরীয় বাজারে কাঞ্চন

Social Share
বিধায়কের জন সংযোগ

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ হাতে মেরে কেটে দশ মাস। তারপরেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে অগ্নিপরীক্ষা বহরমপুরের বিজেপি বিধায়ক সুব্রত মৈত্র ওরফে কাঞ্চনের। আর সেই পরীক্ষার সিলেবাস জুড়ে আছে জনসংযোগের কথা, তা এতদিনে কাঞ্চন ঢের বুঝেছেন। তাই জনতার পালস মাপতে রবিবার সকালে তিনি সদলবলে হাজির বহরমপুর নিমতলার মাছ বাজারে। তা আড় চোখে দেখে কৌতূহলী জনতার প্রশ্ন ” তবে কি দুয়ারে নির্বাচন?”

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০২১ সালে নির্বাচনে জিতে কাঞ্চন একজন বিধায়ক হবেন তা দূর কল্পনাতেও আনতে পারেননি বহরমপুরের মানুষজন। আরএসপি’র জমানাকে একপ্রকার সংগ্রহশালায় পাঠিয়ে বহরমপুর শাসন করেছে কংগ্রেস। আরও পরিস্কারভাবে বললে অধীর কংগ্রেস। যা একপ্রকার অধীর গড় হিসেবে মিথে পরিণত হয়েছিল রাজ্যে। সেই মিথ ভেঙেছে বিজেপি। ৮৯ হাজার ৩৪০ ভোট পেয়ে কাঞ্চন হয়েছেন বিধায়ক।

সমাজের নিচুতলার সঙ্গে কাঞ্চনের বরাবরের যোগাযোগ একজন সমাজকর্মী হিসেবে। কংগ্রেসের কাউন্সিলর হয়ে ঘাসফুলের ঘর ঘুরে কাঞ্চন আজ গেরুয়া সৈনিক। বহরমপুরে নিজের দলের সঙ্গে তাঁর আড়ষ্টতা না কাটলেও দূরত্ব কমেছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, জয়ী বিধায়কদেরই পুনরায় ২০২৬ এর নির্বাচনে মুখ করছে বিজেপি। কাঞ্চনও বুঝেছেন “এক রহেঙ্গে তো সেফ রহেঙ্গে।”

এদিন কাঞ্চন বলেন, ” মানুষ বলছেন এই চোরেদের সরকার যত তাড়াতাড়ি রাজ্য ছাড়ে তত তাঁদের মঙ্গল, তাঁরা চাইছেন বিজেপির হাতে এই রাজ্যের ক্ষমতা দিতে।” এই হাওয়া তো বছরখানেক আগের লোকসভা নির্বাচনেও উঠেছিল। তার ফল হয়েছে উল্টো। অধীরের বিজয় রথ থামিয়ে বহরমপুরের ক্যাপ্টেন হয়েছেন বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার তৃণমূলের ইউসুফ পাঠান। দলের নোটেশন মেনে এবার সুর তুললেন কাঞ্চন। বললেন ” সনাতনি হিন্দুদের জেলা তো আর এটা নয়। মুসলামানের জেলায় আমরা তবু লড়াইতে ছিলাম।”

কিন্তু ভোট পরবর্তী পর্যবেক্ষণ, দলের একাংশের অন্তর্ঘাতেই তীরে এসে তরী ডুবেছে “ভদ্রলোক চিকিৎসক” নির্মল সাহার। সতর্ক কাঞ্চন বলেন, “দলের মধ্যে কে কী অন্তর্ঘাত করেছে তা আমি জানি না। আমি বলতেও পারব না।” এবার অবশ্য তিনি একুশের থেকে বেশি ভোটে জিতবেন বলে তাঁর বিশ্বাস। সেইমতো হোমওয়ার্ক করছেন শুভেন্দু অধিকারীর ভাবশিষ্য বহরমপুরের কাঞ্চন। সম্প্রতি লালগোলা-শিয়ালদহ শাখায় ইএমইউ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্তে তীব্র বিরোধীতা করে আগাম পথে নেমে প্রতিবাদ করেছেন বহরমপুরের বিধায়ক। পরবর্তীতে নানা মহল থেকে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিসনে প্রতিবাদ পত্র পাঠানো হয়েছে। রেল সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে। আর কাঞ্চনের এই পদক্ষেপে মন গলেছে শহরবাসীরও।

তবে ভোট বাক্সে তার প্রভাব পড়বে কি পড়বে না তা আগাম বলা বাতুলতা। এগুলো বড়জোড় লক্ষণ হতে পারে। রবিবার ন্যাজাটের সভায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হিন্দুদের একজোট হতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ” বাংলায় সবাই যোগ্য একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই অযোগ্য। তাঁকে সরাতে হবে।” তিনি ওই সভায় রাজ্য থেকে তৃণমূলকে উচ্ছেদ করবার ডাক দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ” মায়েরা ৫০০-১০০০ টাকার কাছে শাঁখা-পলা-সিঁদুর বিসর্জন দেবেন না। যেদিন বিজেপি এই রাজ্য়ে আসবে, তার পরের ১ তারিখেই ৩০০০ টাকা ঢোকাব।” দিন কয়েক আগে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা বাংলায় এসে বিজেপি সমর্থকদের উজ্জিবীত করে গিয়েছেন।

কিন্তু প্রশ্ন তবু রয়েছে। বিজেপি দল হিসেবে কতটা শক্তিশালী বঙ্গে? এখনও রাজ্যে দলের অধিনায়ক কে হবেন তা বাছাই করে উঠতে পারেননি মোদি, শাহরা। এমনকি লোকসভা নির্বাচনের পরে বছর ঘুরলেও জে পি নাড্ডার উত্তরসূরিও বাছতে পারেননি তাঁরা। তাহলে সমর্থকরা কী বুঝবেন? কাঞ্চন সেই বল দলের কোর্টে পাঠিয়ে বলেন, ” সে দায়িত্ব দলের কেন্দ্রীয় কমিটির। আমাদের কাজ মানুষের সঙ্গে থাকা। চোরেদের বিপক্ষে থাকা। আমরা সেই কাজটাই করছি।”  কাঞ্চনের আশা মানুষ দু-হাত ভরে দিলে মুর্শিদাবাদে ২৬ এ বিজেপি’র “ভিক্ষার ঝুলি” (ভোট) উপচে পড়বে।

তৃণমূল অবশ্য তাকে ” দিবা স্বপ্ন” বলতে ছাড়ছে না। তৃণমূলের বহরমপুর সংগঠনের জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার বলছেন, ” বিজেপি এখন বিভাজনের রাজনীতিতে আর আস্থা রাখতে পারছে না, সরাসরি দাঙ্গা করাতে চাইছে। ওদের আশা সাধারণ মানুষ দাঙ্গা করবে আর ওরা ফুলে ফলে ভরে উঠবে।” তিনি আরও বলেন, ” মাত্র দু’জন বিধায়ক জেলায়। তাদের পারফরম্যান্স বিগ জিরো। মানুষ ওদের ওপর নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই তৃণমূলকে পুনরায় বেছে নেবেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights