সংবাদ প্রতিনিধি, মুর্শিদাবাদঃ রেমাল প্রভাবে সোমবার দিনভর ভিজল মুর্শিদাবাদ। সোমবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলায় কখনও হালকা কখনও ভারি বৃষ্টি হয়েছে। কোথাও আবার ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়েছে । উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) মোহনলাল কুমার বলেন, “মুর্শিদাবাদ জেলায় সকাল সাতটা পর্যন্ত ১৫.৬ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৪৩.৬ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে বহরমপুরে। সবচেয়ে কম ৫ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে শমসেরগঞ্জে।” যদিও এই বৃষ্টিতে ফসলের কোনও ক্ষতি হয়নি বলে জানান তিনি।

জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অমিতদেব মন্ডল বলেন, “বহরমপুর শহরে দু-একটি গাছ পড়েছে। সেগুলি দ্রুততার সঙ্গে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া বড়সড় তেমন দুর্ঘটনা ঘটে নি।” যদিও ফেরিঘাট থেকে সর্বত্র সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বিশেষ টিম তৈরি করে বিপদের আশঙ্কায় সজাগ ছিল বহরমপুর পুরসভাও। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমন কোনও বিপর্যয় ঘটেনি বলে দাবি করেন উপ-পুরপ্রধান স্বরূপ সাহা । আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী পাঁচদিন জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হবে।

রবিবার মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশ এবং সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। রাজ্যে দু-জনের মৃত্যু ছাড়াও ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উপকূলবর্তী এলাকায়। সুন্দরবনের গোসাবা এলাকায় ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে একজন ও কলকাতার বিবিরবাগান এলাকায় অবিরাম বর্ষণে দেওয়াল ধসে একজন নিহত হয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লক্ষাধিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল আগেই। তবে রেমালের প্রভাব ছড়িয়েছে রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই। যদিও আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা মেনে সর্বত্র প্রশাসনের পক্ষ থেকে চুড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।

নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “…সাইক্লোন ‘রেমালে’র প্রভাবে আমাদের রাজ্যে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হল ও হচ্ছে। কিন্তু সবার উপরে মানুষের জীবন। সৌভাগ্যক্রমে এবং অবশ্যই রাজ্য প্রশাসনের তৎপরতায় এবার জীবনহানি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। নিহতদের পরিবারবর্গকে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই, তাঁদের নিকটজনের হাতে অবিলম্বে আর্থিক সহায়তা পৌঁছাবে।” রাজ্যবাসীকে ভরসা দিয়ে আরও লিখেছেন, “‘আমি বিশ্বাস রাখি, সকলের সহযোগিতায় এই ঝড়ও আমরা কাটিয়ে উঠব। আমি জানি, এই দুর্যোগে আপনারা চিন্তিত। আমরাও চিন্তিত। কিন্তু ভয় পাবেন না, চিন্তা করবেন না।”

তাঁর এই বার্তাকে কটাক্ষা করতে ছাড়েনি বিজেপি। সমালোচনা করেছে কংগ্রেসও। মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা কিছুই করেননি। মাঠে-ময়দানে নেমে মানুষের পাশে দাঁড়াতে যা করার এনডিআরএফ ও বিজেপি নেতারাই করেছে বলে তাঁর এক্স হ্যাণ্ডেলে দাবি করেছেন অমিত মালব্য। অধীর চৌধুরী বলেছেন, ” ওড়িশা সরকার গত প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবিলা করতে যেভাবে প্রস্তুত করেছে রাজ্যকে, তার ছিটেফোঁটাও নেই আমাদের রাজ্যে। রেমাল সামলানো সাধারণ মানুষ। দিদি থাকলেন ভোট সামলাতে।”
আরও পড়ুনঃ ‘প্রান্তিক’এ আশ্রয় মমতার, বিঁধল সিপিএম