কমিশনের স্বীকৃতিও মেলেনি শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা মঞ্চের মুর্শিদাবাদ জেলার প্রতিনিধি হাবিবউল্লা নওপাড়া জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক। তাঁর মতো রাজ্যের ১৯ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী যোগ্য হওয়া সত্বেও অযোগ্য বলে ঘোষিত হয়েছেন। হাবিবউল্লাদের আক্ষেপ, “২০১৮-১৯ এ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হলেও আজ পর্যন্ত সেই চাকরির কনফার্মেশন বা স্বীকৃতি মেলেনি।” তার জন্যও বারবার এসএসসির দুয়োরে ধর্ণা দিয়েছেন তাঁরা কিন্তু প্রতিবারই ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে। কেন? উত্তর নেই। অনেকেরই স্বগোতোক্তি, হয়ত এই দুর্দিন আসবে জানতেন কমিশনের লোকজন তাই এড়িয়ে গিয়েছেন।

শুধু পরীক্ষা দেওয়া নয়। পরীক্ষার ফল বেরনো থেকে হাতে নিয়োগপত্র পাওয়া পর্যন্ত দফায় দফায় আন্দোলন করতে হয়েছে তাঁদের। রীতিমতো লড়ে নিতে হয়েছে চাকরি। তবু শেষরক্ষা হল না। চলতি সপ্তাহের সোমবার আদালতের ‘বাতিল’ তকমায় মূহুর্তে জীবন বদলে গিয়েছে রাজ্যের ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর। বাদ নেই মুর্শিদাবাদও।

আরও পড়ুনঃ চাকরিহারা শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা তোলার অভিযোগ মুর্শিদাবাদে

অথচ কেন এমন হল স্কুল সার্ভিস কমিশনের বর্তমান কর্তারা সে বিষয়ে আজও কোনও সদুত্তর দিতে পারছেন না। উল্টে ৫ হাজার ২৫০ জন ‘অযোগ্য’ বলে আদালতকে জানিয়েছিলেন তাঁরা, তাতেই আটকে আছেন বলেও ক্ষোভ চাকরিহারাদের। তাঁদের প্রশ্ন ” তবু আদালত ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিল করেছে কোন যুক্তিতে?”

আইনজীবী শুভাঞ্জন সেনগুপ্ত বলছেন, ” কারা যোগ্য আর কারা অযোগ্য তা বাছাই করার দায়িত্ব আদালতের নয়। বারবার বলা সত্বেও এসএসসি সেই তালিকা দিতে না পারায় পুরো প্যানেল বাতিল করেছেন মহামান্য আদালত।” আর বাতিল হওয়া শিক্ষকদের যাঁরা নিজেদের যোগ্য প্রমাণে মরিয়া হয়ে এই চরম গরমে দ্বারস্থ হয়েছেন শীর্ষ আদালতের তাঁদের দাবি ” তার দায় আমরা নেব কেন?”

বাম শিক্ষক সংগঠনের মিছিল বহরমপুরে

তাঁদের যুক্তি, তাঁদের কাছে ফর্ম ফিল ইন থেকে নিয়োগ পত্র পাওয়া এমনকি আদালতের নির্দেশে OMR SHEET যা স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছিল সব আছে। এক আধবার নয় তথ্য যাচাইয়ের নামে কম করে দশ-বারোবার প্রতিলিপি জমা পড়েছে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের মাধ্যমে। কখনও সরাসরি কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে। তবু কেন এসএসসি সেগুলো জমা দেয় নি এর উত্তর তাঁদেরও অজানা। তবে নবম-দশম শ্রেণির OMR SHEET ওয়েবসাইটে দিলেও আজ পর্যন্ত একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির OMR SHEET ওয়েবসাইটে আপলোড করেনি কমিশন? কেন সে উত্তরও খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাবিবউল্লার সহযোদ্ধারা দাবি করছেন “সেই OMR SHEET ও প্রকাশ করুক এসএসসি”।

এরসঙ্গে জুটেছে সুদসহ বেতন ফেরত দেওয়ার তকমাও। যদিও আইনজীবী শুভাঞ্জন বলেন, ” যাঁরা ফাঁকা খাতা জমা দিয়েছেন, যে তালিকা এসএসসি আদালতে জমা দিয়েছেন তাঁদেরই বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকিদের নয়।” তবে এসএসসি’র তালিকাভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বন্ধের প্রথম নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গতবছর মার্চ-এপ্রিল মাসে। সেই সময় তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা শীর্ষ আদালতে গেলে সেই রায়ে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। ফের তাঁরা বেতন পেয়েছেন। চলতি মাসের বেতনও তাঁদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। হাবিবউল্লাদের প্রশ্ন “এরপরেও অযোগ্য বাছতে অসুবিধা হয়েছে আদালতের?”

এদিকে এবিটিএ ও এবিপিটিএ মুর্শিদাবাদ জেলা শাখার উদ্যোগে যোগ্য শিক্ষক শিক্ষাকর্মী দের সম্মানের সাথে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পুনর্বহালের দাবিতে শুক্রবার বিকেলে বহরমপুর টেক্সটাইল মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। সভা শেষে সংগঠনের সদস্যদের প্রতিবাদ মিছিল বহরমপুর শহর পরিক্রমা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights