
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বহরমপুর শহরে টোটো চালকদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ শহরবাসী। বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বহরমপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকাকে কেন্দ্র করে যে টোটো চলে দৈনিক, তাঁদের বিরুদ্ধে অন্তহীন দুর্ব্যবহারের অভিযোগ। সেই রকমই এক অভিযোগ ঘিরে নিজেদের মধ্যে বাগবিতন্ডায় জড়ালেন বহরমপুরে শহরের দুই কাউন্সিলর। অথচ উভয়েরই নিজেদের এলাকায় রয়েছে জনসংযোগের সুনাম।
তাঁদের একজন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ভীষ্মদেব কর্মকার অন্যজন ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবাশিস ঘোষ ওরফে সোনু গোয়ালা। যা বহরমপুর পুরসভার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ঘটনা। আর তাদের বিবাদের জেরে আড়ালে চলে গেল টোটো চালকদের দৌরাত্ম। যদিও তৃণমূলের এক পোড় খাওয়া নেতার দাবি, ” অনেকদিন ধরেই ওই দুই কাউন্সিলরের মধ্যে তুষের আগুন জ্বলছিল। ইভটিজিং সেটাকেই অগ্নিকান্ডে পরিণত করেছে।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সন্দীপন দাস তৃণমূলকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ” শহরের সব কটা কাউন্সিলরই তোলাবাজ। পুকুর ভরাট সহ হেরোইন পাচারে মদত দেওয়ার কথা শহরবাসী জানেন। ঠগ বাছতে গেলে গাঁ উজার হয়ে যাবে।”
কলেজ পড়ুয়া এক তরুণীর অভিযোগ, শহরের এক টোটো চালক তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর ভিডিও করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সন্ধ্যায়। আর সেই ঘটনার প্রতিবাদ করলে প্রতিক্রিয়া মেলে তার ২৪ ঘন্টা পর। অর্থাৎ শনিবার। ওইদিন সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সামনে তরুণীর দাবি, তাঁর দুই মামাকে ডেকে একপ্রকার প্রাণে মারার হুমকি দেয় একদল দুঃষ্কৃতি। আর কোনওরকম প্রতিরোধ না করে সেই হুমকি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শোনেন বহরমপুর পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবাশিস ঘোষ ওরফে সোনু।
তাঁর মামা অজয় বিশ্বাসের দাবি,”ভাগ্নির কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে আমরা ওই টোটো চালকের খোঁজ খবর নিই। শনিবার গোরাবাজার এলাকার বটতলায় ওই টোটো চালকের সঙ্গে দেখা করতে যখন যাই তখন আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দেওয়া হয়। মারধর করা হয়। এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয়। ১৫-২০ জন লোক নিয়ে এসে দেবাশিস গোয়ালা এসব করে।” তাঁর প্রশ্ন ” তৃণমূলের কাউন্সিলর বলে কী তিনি যা খুশি তাই করবেন?”
আর এসব শুনে কাউন্সিলর দেবাশিস ঘোষ ওরফে সোনু গোয়ালা রবিবার দাবি করেন তিনি নির্দোষ। তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন দলেরই কেউ। তাঁর দাবি, ” সরস্বতী পুজোর বিসর্জনে যাওয়ার আগে ওই এলাকায় চা খেতে গিয়েছিলাম। সেই সময় ওই এলাকায় একদল লোক নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করছিল। ওদের মুখ আমার চেনা। আমি সে সব দেখে ঝামেলা মেটাতে গিয়েছিলাম। আর তা করতে গিয়ে এখন দেখছি আমার নামে বদনাম করা হচ্ছে। আমি ওই মহিলাকে চিনিও না। জানিও না।”
এরপরেই তাঁর অভিযোগ, এসব করছেন তাঁরই দলের তাঁরই সহকর্মী ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ভীষ্মদেব কর্মকার। ভীষ্মর বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, ” কাউন্সিলর হয়ে ভীষ্ম একজন তোলাবাজ হয়ে উঠেছে। আমরা বাধা দিচ্ছি বলেই এই ধরনের ষড়যন্ত্র করছে সে।”
তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওই কাউন্সিলর ব্যক্তিগতভাবে করছে জানিয়ে ভীষ্মদেব বলেন, ” সবার অধিকার আছে ব্যবসা বানিজ্য করে খাওয়ার। যদি কারও বিরুদ্ধে কোনও খারাপ কাজ করার অভিযোগ থাকে তাহলে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।” তিনি আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, ” বহরমপুর পুরসভা সুষ্ঠভাবে চলছে। যে বা যারা এই সুস্থতা সহ্য করতে পারছে না সে যদি এইরকম বক্তব্য রাখে তাহলে তার উচিত দলের সঙ্গে কথা বলা।প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সামনে এই ধরনের অভিযোগ করে নিজেকে হাইলাটট করা ঠিক নয়।”
দেবাশিস ওরফে সোনুর নাম না করে ভীষ্ম আরও বলেন, ” ওই কাউন্সিলর ভাল কাজ করেন বলে শুনেছি। বহরমপুরের মানচিত্রে দু’জন দুমাথার কাউন্সিলর। তিনি কেন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তা আমার জানা নেই। দলের কেউ খারাপ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাদের ওপর সর্বোপরি প্রশাসন, চেয়ারম্যান, দলের নেতৃত্ব সবার নজর আছে। কেউ খারাপ কাজ করে পার পাবে না।”
তবে দুই কাউন্সিলরের কেউই টোটো চালকের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। শহরের বাইরের টোটো চালকও ঢোকে বহরমপুরে। নানান অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। শহরের দুই বিবাদমান তরুণ কাউন্সিলর এ বিষয়ে মুখ না খুললেও দলের শ্রমিক সংগঠনের বহরমপুর শহর সভাপতি নীলিমেষ বিশ্বাস অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ” সব টোটো চালক আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না।” পুলিশ অবশ্য অভিযুক্ত টোটো চালককে গ্রেফতার করেছে।