অন্য পুলিশঃ রিক্সা চালকের হাতে রাখি পড়িয়ে দিলেন মনোজ পোদ্দার

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বহরমপুরে দু-চাকা কিম্বা চার চাকা নিয়ে পথে নামলে যে কয়েকটি খাঁকি উর্দি চালকের নজর টানবে তার মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনি মুর্শিদাবাদ জেলা ট্রাফিক পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর মনোজ পোদ্দার। সাদা হেলমেট মাথায় চাপিয়ে, বুলেট চেপে সাদা গোঁফের মনোজ দিনভর চরকি পাকের মতো চক্কর কাটেন বহরমপুর। তাঁর কড়া নজরদারিতে শহরের ভিড়েও শহরবাসী অভ্যস্থ সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফে।

টোটোর দৌরাত্মীতে বহরমপুরের প্রাণ এমনিতেই ওষ্ঠাগত। পরিবহন দফতরের আঞ্চলিক শাখা থেকে পুলিশের বড় কর্তারা বারবার নিয়ম ভেঙে নতুন নিয়ম তৈরি করেছেন শহরে টোটোর দৌরাত্মে রাশ টানতে। কিন্তু ঠিক রাস্তার ফাঁক গলে শহরে ঢুকে পড়ে গাঁয়ের টোটো। কড়া নজর মনোজের। তাঁর চোখের দিকে তাকালেই বেপরোয়া টোটো নিয়মে বাঁধা পড়ে যায় নিমেষে। তবে সব সময় রক্তচক্ষুই যে শেষ অস্ত্র এমন নয়, তাঁর গলার জোরেও পথ চলতি মানুষ ট্রাফিক আইন মেনেই রাস্তা পার হন। এমন সাক্ষী হাত বাড়ালেই মিলবে শহরে।

সেই ‘রাগী’ পুলিশ রাখি পুর্ণিমার দিন যেন অন্য পুলিশ। সেই রাগ, সেই শাসন গলে উধাও। অগুণতি টোটোর মাঝখানে হাতে গোনা কয়েকটি রিক্সার এখনও দেখা মেলে বহরমপুর স্টেশনে। মনোজ সেই হাতে গোনা বয়স্ক রিক্সা চালকের হাতে রাখি পড়িয়ে মিষ্টি মুখ করালেন তাঁদের। হাতে তুলে দিলেন নতুন পোশাক। বয়সের ভারে নুব্জ সেই মানুষগুলোকে শেষ কে কবে আদর করে ডেকেছে, আজ আর তাঁদের মনে নেই। বয়স্ক পা দুটোতে প্যাডেল ঠেলে টোটোর ভিড়ে আজও তাঁরা ছুটছেন দু’টো পয়সা রোজগারের আশায়। এদিন মনোজের দেওয়া উপহারে তাঁদের কারও কারও চোখের কোণা ভিজে গিয়েছিল আনন্দে। এই পুলিশ কি সেই পুলিশ। ধন্দে পড়ে কেউ কেউ তাঁর হাত দুটো ছুঁয়ে দেখলেন। পুলিশের এমন কান্ড দেখে মনোজের হাতে পাল্টা রাখি পড়িয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে এক রিক্সাযাত্রী বললেন “রাখি পূর্ণিমার এও এক অন্য উদযাপন।” আর মনোজ ? বুলেট ঘুরিয়ে এগিয়ে গেলেন যানের জট ছাড়াতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights