
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ পুজোর আবহে বিষাদের ছায়া মুর্শিদাবাদে। বিয়েতে বাধা দেওয়ায় নাবালক-নাবালিকা আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে শিশু কল্যাণ কমিটির। ঘটনাটি ঘটেছে বহরমপুর থানা এলাকায়।
ওই থানার অন্তর্গত রাধারঘাট পঞ্চায়েতে দশম শ্রেণির এক পড়ুয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল পাশের গ্রামের নবগ্রাম থানার এক নাবালকের সঙ্গে। সেই ঘটনা বিয়েতে গড়ায় বলে দাবি। নাবালক-নাবালিকার বিয়ের খবর যায় শিশু কল্যাণ কমিটির কাছে। অভিযোগ, তাঁরা এসে ওই নাবালক ও নাবালিকাকে কাজী নজরুল ইসলাম হোমে নিয়ে যায়। সেখানে মিমাংসা করার পর দুই জন নিজের নিজের বাড়িতেই থাকছিল। নাবালককে সপ্তাহে একদিন হাজিরা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেইমতো গত মঙ্গলবার নাবালক হোমে হাজিরা দিতে গেলে তাকে বসিয়ে একটানা জেরা করেন সিডব্লিউসি-র প্রতিনিধিরা। মৃত নাবালকের পরিবারের অভিযোগ, “কী যে বললেন ওরা তা বলতে পারব না। কিন্তু সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেলে বাড়ি আসে। পরে রাতে আত্মহত্যা করে।”
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে নাবালিকাও। দাবি, নাবালক প্রেমিকের মৃত্যু মেনে না নিতে পেরেই আত্মহত্যা করেছে ওই পড়ুয়া। পুজোর আবহে এই দুই কিশোর কিশোরীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে পাড়ায়। ঘটনার কথা জানাজানি হতে বহরমপুর থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ মৃত নাবালিকার বাড়ি যান শুক্রবার সকালে। দুই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথাও বলেন। পুলিশের দাবি, ওই নাবালক- নাবালিকা বিয়ে করেছিল বলে তাঁরা শুনেছেন। যদিও সেই দাবির পক্ষে কোনও প্রমাণ পুলিশের কাছে নেই। দুই পরিবারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে পরিস্কার কিছু বলতে পারেননি। তাঁদের কাছেও বিয়ের প্রমাণ পত্র নেই।
Murshidabad Child Welfare Committee-র চেয়ারপার্সন সোমা ভৌমিকের অবশ্য দাবি “আমরা ওদের ডাকিনি। পুলিশ ডেকেছিল। ওদের বোঝানো হয়েছিল। সাবালক না হলে বিয়ে হবে না এই মর্মে আমরা দু-পক্ষের বাবা-মাকে ডেকে মুচলেখা লিখিয়ে নিয়েছিলাম।” এই দুই নাবালক নাবালিকার মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন “এটা মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়।”
বাল্য বিবাহ রোধে সক্রিয় হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। সর্বত্র নজরদারি চলছে। আগের তুলনায় মুর্শিদাবাদ জেলায় বাল্য বিবাহ রোধের হারও বেড়েছে। কিন্তু তবুও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে বিয়েও হচ্ছে। তবু সাফল্যের চূড়ো ছুঁতে গিয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলেও মত বিশেষজ্ঞ মহলের।
সিডব্লিউসি-র চেয়ারপার্সনের মন্তব্যে অবাক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জন ভট্টাচার্য । তিনি বলেন, “উনি কী করে জানলেন যে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক ছিল না ? তিনি অন্যের উপর দোষারোপ করার চেষ্টা করছেন। নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। যারা এই ধরণের সংবেদনশীল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে জানেন না তাঁরা এই ধরণের উচ্চপদে আসীন হওয়ার যোগ্য নয়”।
তিনি আরও বলেন, ” কয়েক দিন আগেই বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস আমরা উদযাপন করেছি। ভারতে বয়ঃসন্ধীকালীন আত্মহত্যার হার উদ্বেগের। অন্যতম কারণ হচ্ছে, সম্পর্কের বিচ্ছেদ ও পরীক্ষায় ফেল করা। বিচ্ছেদ ইমপালসিভ আকার ধারণ করে ”।
তাঁর মতে “মোবাইল ফোনের কারনে পেরেন্টিং ঠিক হয় না। তাঁরা মনে করছেন এই সময়ের ভালোবাসা গাড়ির সিগন্যাল মানে না। সিডাব্লুসির কাছে যখন কিশোর কিশোরীরা যাবেন। সেখানে একজন কাউন্সিলরের যে রকম কথা বলার দরকার, সমস্যা নির্দিষ্ট করার দরকার সেটা হচ্ছে না। তাঁদের তীব্র আবেগ থাকে। আবেগের কথা মাথায় না রেখে বকাঝকা করা হয়। তাঁর ফল হিসেবে একে অন্যকে দোষারোপ করার মাধ্যমে আত্মহত্যার করলে সেটা বিপজ্জনক”।