ছাব্বিশের আগে জিয়াগঞ্জ পুরসভার বদলে গেল উপ-পৌরপিতার মুখ

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে দলের ভাবমূর্তি ফেরাতে জিয়াগঞ্জ পুরসভার উপ-পৌরপিতার মুখ বদলে দিল তৃণমূল। মলয় রায়কে সরিয়ে দীর্ঘদিনের পরিচিত মুখ পরিমল সরকারকে ওই পদে বসানো হয়েছে সোমবার। দায়িত্ব নিয়ে পরিমল বলেন, ” দায়িত্ব পেয়ে অন্যদের মতো আমারও ভালো লাগছে। নির্বাচনের আগে এই দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সরকারের পরিষেবা পৌঁছে দিয়ে মানুষের কাছে আস্থা ফেরানোই আশু লক্ষ্য।”

লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভরাডুবি হয়েছিল রাজ্যের বিভিন্ন পৌর এলাকায়। আঙুল উঠেছিল দলেরই “বিভীষণ”দের দিকে। সেই দলে ছিল জিয়াগঞ্জ পুরসভারও নাম। ২৪এর একুশে জুলাই মঞ্চ থেকে দলের ‘সেনাপতি’ ঘোষণা করেছিলেন আপাদমস্তক বদলে ফেলা হবে স্থানীয় প্রশাসনের পদাধিকারীদের। যদিও সেই ঘোষণায় যতটা জোর ছিল ততোধিক জোরে পালন হয়নি নির্দেশ। সম্প্রতি রাজ্যের একাধিক পুরসভায় বদল আনতে শুরু করেছে তৃণমূল। সেই সারণীতে মুর্শিদাবাদে প্রথম বদল এল হিন্দু এলাকা জিয়াগঞ্জ পুরসভায়।

পরিমল কোনও গজিয়ে ওঠা কাউন্সিলর নয়। মানুষের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগ, দাবি দেবিপুরের বাসিন্দাদের। একসময় সিপিএমের দখলে ছিল জিয়াগঞ্জ পুরসভা। সেই পুরসভার লাল নেতারা পরিবর্তনের স্রোতে গা ভাসিয়ে ঘাসফুলে নাম লিখিয়েছিলেন তৎকালীন চেয়ারম্যান শঙ্কর মন্ডল। সেই সময় পরিমল ছিলেন তাঁর ছায়াসঙ্গী। কিন্তু শঙ্কর মন্ডল ফের সিদ্ধান্ত বদলে পদ্ম ফুলে ভিড়ে এখন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। পরিমল ডেরা বেঁধেছিলেন মুর্শিদাবাদের প্রাক্তন বিধায়ক শাওনি সিংহ রায়ের কাছে। তাঁকে উপ-পৌরপিতার পদে বসিয়ে শাওনি দিলেন বিশ্বস্ততার পুরস্কার।

এই পুরসভার চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ ঘোষ (মানু) ও দলবদলু। ফরোয়ার্ড ব্লক ছেড়ে ২০১৭ সালে ঘাসফুলে নাম লিখিয়েছেন। সেবারই কিছুদিনের শঙ্কর মন্ডলকে সরিয়ে তাঁকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অন্য অনেক পুরসভার মতো এই পুরসভার বিরুদ্ধেও নালা থেকে রাস্তা, আলো থেকে জল সবকিছু নিয়েই ক্ষোভ রয়েছে পুরবাসীর। নয়া উপ-পৌরপিতা বলেন, ” জলের লাইন ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শেষ পর্যায়ে। আলোর সমস্যা ছিল তা মিটে গিয়েছে। একাধিক হাইমাস্ট লাইট বসানো হয়েছে।”

সম্প্রতি জিয়াগঞ্জের মাটিতে ফাটল ধরেছে সম্প্রীতির। যা জেলা তথা রাজ্য প্রশাসনকে উৎকন্ঠায় রেখেছিল। রাজনীতির হাওয়া ঘুরে এই এলাকার মানুষের মনে জায়গা করেছে বিজেপি। একুশের বিধানসভা আসনও বিজেপি ছিনিয়ে নিয়েছিল স্রোতের বিপরীতে হেঁটে। এবার তাই নির্বাচনী তর্কের মাঝে জিয়াগঞ্জের দিকে নজর দিয়ে মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল সরিয়ে দিল মলয় রায়কে।

তাতেই কী মানুষের রায় বদলাবে? স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দাবি, ” প্রশ্নটা সহজ, উত্তরটা কঠিন।” বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ অবশ্য বলেন, ” তৃণমূল মানেই দুর্নীতি তৃণমূল মানেই খুন ধর্ষণ। যাকে সরিয়ে যাকেই বসানো হোক সেই দুর্নীতিগ্রস্থ। মানুষ সেটা বুঝে গিয়েছে। মানুষের মনের কোনও পরিবর্তন হবে না। ছাব্বিশের নির্বাচনে মানুষ বিজেপিকে সরকারে এনে তা বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুত।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights