জেলাপরিষদের কাজের অভিযোগ জানাতে তৈরি হবে গ্রীভেন্স সেল

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বিরোধীরা তো ছিলই, মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের স্থায়ী সমিতির সভায় বসে জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের কাছেই শুনলেন হাজার অভিযোগ। কোথাও রাস্তা নিয়ে, কোথাও পানীয় জলের সমস্যা, কোথায় কতো সম্পত্তি রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের, সে সবই সদস্যরা জেলাশাসক তথা জেলা পরিষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করেছেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলাপরিষদের সভাধিপতি, মেন্টর, কোমেন্টররাও।
জেলা পরিষদের সদস্যদের গুরুত্ব বাড়িয়ে যে এলাকায় যে সদস্য আছেন তাঁকে সেই কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে বলে অতিরিক্ত জেলাশাসককে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। এতদিন যা নিয়ে শাসক বিরোধী উভয়ের অভিযোগ ছিল পরিষদের একাংশ ক্ষমতাসীন নেতার প্রতি। সূত্রের দাবি, জেলাশাসক বলেছেন কোনও রাস্তার উদ্বোধনও করবেন সেই এলাকার সদস্যরা। সেই রাস্তার ভালমন্দ নিয়ে জবাবদিহিও করবেন তিনি।
এদিনের সভায় একগুচ্ছ অভিযোগ উঠেছে WBSRDA-র বিরুদ্ধে। অভিযোগ, জেলা পরিষদ বা পূর্ত দফতরের যে ডিপিআর তৈরি হয় যে কোনও কাজের জন্য সেই ডিপিআরের সঙ্গে কোনও মিল নেই জঙ্গিপুর মহকুমার WBSRDA-র কাজের ডিপিআরের। জেলা পরিষদের সদস্যরা প্রশ্ন তোলেন তাহলে সেই ডিপিআর তৈরি করল কে? WBSRDA-র পক্ষ থেকে বেছে বেছে নির্দিষ্ট এজেন্সিকে কাজ দেওয়া হয়েছে ওই মহকুমায়। পাঁচশো মিটার রাস্তা তৈরির জন্য যে দর হাঁকা হয়েছে তা দেখে হতবাক জেলা পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। সূত্রের দাবি, এক্ষেত্রে এক সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধেই যাবতীয় অভিযোগ। সেই অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন নবাগত জেলাশাসক।
এদিন জেলাশাসককে জেলাপরিষদ কী করেছে না করেছে সেই সম্পর্কিত একটি তথ্য দিয়ে জানানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সদস্যদের অভিযোগ এতবড় জেলাপরিষদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ কত তা জানানো হয়নি জেলাশাসককে। এক সদস্য বলেন, “জেলাপরিষদের সম্পত্তি দুটি নামে আছে। এক জেলা বোর্ড আর একটি জেলাপরিষদের নামে। জেলা পরিষদের কাছে যে সম্পত্তি আছে তা বিভিন্ন জন দখল করে আছে বিভিন্ন প্রান্তে। জায়গার অভাবে অনেক সময় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারি না, কিন্তু জেলাপরিষদের জায়গার পরিমাণ প্রচুর।” ওয়াকফ সম্পত্তিতে জেলাপরিষদ দোকান তুলেছে এমন অভিযোগেও সরগরম হয়েছে মুর্শিদাবাদ। সূত্রের দাবি এদিন বৈঠকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অতিরিক্ত জেলাশাসককে ডেকে তিন মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন জেলাশাসক। তারমধ্যে আমিন দিয়ে জমি জরিপের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন নবাগত জেলাশাসক। এদিন বৈঠক শেষে খুশি শাসক তো বটেই বিরোধীরাও।
জেলাপরিষদ নিয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য বিশেষ তিনটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়ে চালু করা হবে গ্রিভেন্স সেল। মুর্শিদাবাদ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাসপাতাল নিয়ে জেলাপরিষদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন জেলাপরিষদে কংগ্রেস সদস্য আবদুল্লাহীল কাফি। এদিন তিনি বলেন, “প্রত্যেকবার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু তার কোনও উত্তর আসে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাসপাতাল বন্ধ তা চালু করার কোনও সিদ্ধান্ত হয় না।” আর এসব বলতে গিয়ে শিক্ষাকর্মাধ্যক্ষ সফিউজ্জামান শেখের কাছে অপমানিত হতে হয় বলেও দাবি করেন কংগ্রেস-সিপিএমের সদস্যরা। সূত্রের দাবি, জেলাশাসক নিজে গিয়ে বিশয়টি তদন্ত করে দেখবেন।
এদিন কাফি জেলাপরিষদের কাজে দরপত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। কাফি বলেন “ পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ভুয়ো ঠিকাদারদের দিয়ে ভুয়ো দরপত্র ডেকেছিলেন তৃণমূলের সদস্যরা। সেটা বাতিল হয়েছে। কিন্তু এইরকম প্রমাণ না পেলে ভুয়ো কাজ করে নিজেদের পকেট ভরাতে সিদ্ধহস্ত তৃণমূলের নেতারা। সেটাই আজকের বৈঠকে বলতে চেয়েছিলাম।” সিপিএম সদস্য ইমরান হোসেন বলেন, “ জেলাশাসক অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন,সদস্যদের গুরুত্ব বাড়িয়েছেন। আজকের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে।” অশেষ ঘোষ, শ্বাশত মুখোপাধ্যায় থেকে মেন্টর সোহরাব হোসেন, কোমেন্টর শাওনি সিংহরায়রাও জানিয়েছেন এদিন নবাগত জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁরা খুশি। অভাব,অভিযোগ থেকে সমস্যা সমাধানে সময় বেঁধে দেওয়ায় বহরমপুর তৃণমূল সংগঠনের মহিলা সভাপতি ফতেমা বিবি জেলাশাসককে বলেন, “ স্যার স্বপ্ন দেখছি না তো?” পাল্টা জেলাশাসক তাঁকে বলেন “ It’s not a joke”.