
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ হেমন্তের বিকেলে জীবনের ছেদ টানলেন এক প্রৌঢ়া। বহরমপুরের এক বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। ঘটনাটি ঘটেছে খাগড়া (হরিবাবু ঢালু) এলাকায়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃতের নাম রেখা মুখোপাধ্যায় (৭০)। বহরমপুর খাগড়া এলাকার বিবি সেন রোডের একটি বস্ত্র বিপণীর ওপরের আবাসনে থাকতেন নিঃসন্তান সঞ্জীব ও রেখা মুখোপাধ্যায়। আবাসন সূত্রে জানা যায়, ওই দম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। অসুস্থতার জন্য মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে ওই আবাসনের একাধিক বাসিন্দার দাবি। তবে ওই মহিলা কেন বহুতল থেকে ঝাঁপ দিলেন তা জানাতে পারেনি পুলিশ। তাঁরা জানিয়েছেন শুধুই কি পারস্পরিক অসুস্থতা না কি পেছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ওই মহিলা আবাসনের বাসিন্দাদের সঙ্গে যে খুব বেশি মেলামেশা করতেন এমন নয়। কিন্তু তিনি যে বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়ে ‘আত্নহননের’ পথ বেছে নেবেন তা কোনওভাবেই আন্দাজ করতে পারেননি বলে জানান আবাসনের সম্পাদক অংশুমান মাইতি। ওই আবাসনের পাশেই বাবুপাড়া ক্লাব। ওই ক্লাবের সম্পাদক অরিন্দম দাস বলেন, ” আমরা জানতাম অসুস্থ স্বামীর সেবা করতেন ওই মহিলা। কিন্তু তিনি যে বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়ে জীবনের ইতি টানবেন তা বিশ্বাস হচ্ছে না।” তিনি শুনেছেন আজ শনিবার চিকিৎসকের কাছেও গিয়েছিলেন রাখী। তাঁর চলাফেরায় অবসাদ টের পেতেন কেউ কেউ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে খাগড়া ফাঁড়ির পুলিশ। রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করলে দেহ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
মনোবিদ নির্মাল্য সাহা বলেন, ” বয়স্কদের জেরিয়াট্রিক ফাস্ট্রেসন থেকে ডিপ্রেসন আসে। এই ঘটনা থেকে মানসিক অবসাদ আসতেই পারে। তাঁদের দেখভালের কেউ নেই। স্বামীর দেখাশোনা যিনি করতেন তিনি এটাও ভাবতে পারেন স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁকে কে দেখবে। তাই নিয়ে হতাশা জন্মাতে পারে।” তবে এর জন্য তিনি একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে যাওয়াকেই দায়ি করেছেন। তাঁর দাবি, ” কয়েক স্কোয়ারফিটের জীবনে বন্ধুহীন, আত্মীয় পরিজনহীন হয়ে পড়লে কথা বলার লোক কমে যায়, তখন মানুষ একলা হয়ে পড়ে। মনের কোণে মেঘ জন্মায়। তখনই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে ইচ্ছে হয়।” তাই তো জীবনানন্দ লিখেছিলেন, “জীবনের এই স্বাদ– সুপক্ব যবের ঘ্রাণ হেমন্তের বিকেলের–তোমার অসহ্য বোধ হ’লো;মর্গে কি হৃদয় জুড়োলো, মর্গে— গুমোটে থ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে।”