
বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ শাহানাজ বেগম যেদিন ফের কংগ্রেসের পতাকা ধরলেন, সেদিন ওই মঞ্চ থেকেই ভিন দলের নেতাদের কংগ্রেসে ফেরার ডাক দিলেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর রঞ্জন চৌধুরী। বললেন, “অন্য দলে থেকে যাঁদের রাজনৈতিক শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তাঁরা আসুন কংগ্রেসে।” সেই বার্তা শুধু সমাজ মাধ্যমেই আটকে ছিল না। তার মাধ্যমে পৌঁছেছে গ্রাম-বাংলার চায়ের আসরেও। শাহানাজের জাতীয় দলে যোগদান উৎসাহিত করবে কংগ্রেসকে, দাবি করলেন রাজনৈতিক মহলও। তার আভাস পাওয়া গেল ডোমকলে অধীরের নেতৃত্বে হওয়া কংগ্রেসের মিছিলেও।
রাজ্যে পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতিরও পরিবর্তন হয়েছে। জনপ্রতিনিধি কেনাবেচার সংস্কৃতি আমদানি হয়েছে ভিন রাজ্য থেকে, তাও ঘাসফুল জমানায়। সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে জেলায় কংগ্রেস। আটকানোর চেষ্টাকে বালির বাঁধের সঙ্গেও তুলনা করেছিলেন অনেকে। তার রেশ ধরেই আজ অধীর বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ।
কিন্তু ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়। শনিবার শাহানাজ সেটাই দেখালেন। দশ বছর আগে ২০১৬ সালে ক্ষমতার নিরিখে তৃণমূল তখন বছর পাঁচেকের শিশু। সেই সময় মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্যদের ভাঙিয়ে ঘাসফুলের নৌকায় যিনি তুলেছিলেন তিনি আজকের বিরোধী দলনেতা বিজেপি’র শুভেন্দু অধিকারী। যাঁকে আড়ালে “সওদাগর” বলে ডাকেন তৃণমূলের নেতা নেত্রীরা। সেদিন তাঁর নৌকার যাত্রী ছিলেন শাহানাজ বেগম। তৃণমূলে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদও সামলেছেন পেশায় অধ্যাপিকা শাহানাজ। আজ শনিবার থেকে তিনি কংগ্রেস নেত্রী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পরিষদের এক তৃণমূল সদস্য বলেন, “ শাহনাজ হুমায়ুন কবীরের দলে নাম না লিখিয়ে কংগ্রেসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন।”
২০১৬ থেকে ২০২৫ না ২০২৬ ই বলা ভাল। দশ বছর পর অধীর চৌধুরীর পাশে বসে চড়া সুরে তৃণমূলকে তুলোধনা করলেন সংবাদ মাধ্যমকে সামনে রেখে। সাংবাদিক হয়ে সংবাদ মাধ্যমকেই সাক্ষী রেখে বললেন, “ দুর্নীতির দায়ভার নিয়ে চোরের দলে থাকার চেয়ে যে দল রাজ্য ও কেন্দ্রে ক্ষমতায় নেই সেই দলে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম।”
ওই মঞ্চেই শাহানাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন অধীর। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে ফেরা জালাল শেখের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “ কংগ্রেস দলকে খতম করতে চেয়েছিল তৃণমূল। তাই কংগ্রেস দল থেকে বেরিয়ে এসে দলটাকে ভাঙতে প্রশাসন, প্রলোভন, চুরি, বাটপারি দুর্নীতির আশ্রয় নিতে উস্কে ছিল নেতাদের। জালাল অবশ্য সে দলে নাম লেখায়নি।”
আরও পড়ুনঃ শাহনাজ বেগমের দাবি ওড়ালেন শাওনি সিংহরায়
নির্বাচন সামনে এলে এমনিতে দুলে ওঠে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়। ভোটে দলের টিকিট পেতে কংগ্রেসকে মুলো হিসেবে ব্যবহার করেন তৃণমূলের নেতারা, এমন কথার চলও আছে তৃণমূলের অন্দরে। দরদামে পুষিয়ে গেলে ফের কংগ্রেসকেই আক্রমণ করেন তাঁরা। না হলেও ছক কষে ভোট বানচালের জন্য পাল্টা বাজি খেলেন দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে, আস্তিনে গোটানো থাকে সেই কংগ্রেসই। এবার অবশ্য অধীর আগ্রহে জেলা। কিন্তু সেখানে পথের কাঁটা কংগ্রেসই।
মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস বলতে জেলার মধ্যবয়স্করা অধীর চৌধুরীকেই চেনেন। তাঁকে জেলার অভিভাবক হিসেবে আড়ালে গুরুত্ব দেন তৃণমূল, বিজেপি সহ অন্য দলের তাবড় নেতারাও। অধীর ছায়া সরে গেলে মুর্শিদাবাদের যে নেতারা অস্তিত্বের সংকটে পড়বেন কংগ্রেসের মধ্যেই সেই অংশ অধীরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। চাইছেন নেতৃত্বে বদল আসুক জেলায়। সে কথাও অধীর জানেন বিলক্ষণ। তাই সেই গোষ্ঠীকেই পরোক্ষে বার্তা দিতে তিনি বেছে নিয়েছেন শনিবারের যোগদান মঞ্চ। বলেছেন, “এখন তৃণমূল তার পন্থা বদলেছে। কারা কারা কংগ্রেসে থেকে কংগ্রেসকে দূর্বল করতে পারে তাদের খোঁজ শুরু করেছে। তাদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে, প্রতারণা করে কংগ্রেস দলের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে।” ঘর ওয়াপসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে শাহানাজ বলেছেন, “কংগ্রেসকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করবো।” তিনি দাবি করেন, “আগামী দিনে অনেকেই কংগ্রেসে ফিরবেন। শুধু সময়ের অপেক্ষা।” মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস ভবনের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে সে কথা কান পেতে শুনছেন জেলার নেতা তহিদূর রহমান (সুমন), অরিন্দম দাসরা।