রাজ্যে অতীত অধীর কংগ্রেস, শুভঙ্করের সামনে লক্ষ্য ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ টালবাহানার অবসান। বাংলায় প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে তাঁর লম্বা ইনিংস শেষ করলেন ‘অস্থায়ী’ অধীর চৌধুরী। মল্লিকার্জুন খড়গে, রাহুল গান্ধীরা ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে বেছে নিলেন ‘স্থায়ী’ শুভঙ্কর সরকারকে। যদিও সেই দৌড়ে ছিলেন অনেকে।

প্রদেশ সভাপতি হিসেবেও প্রাক্তন হলেন অধীর। এখনও তাঁকে আলাদা কোনও দায়িত্ব দেয়নি কংগ্রেস হাইকমান্ড। যদিও কিছুদিন আগে রাহুল গান্ধী তাঁকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দলকে চাঙ্গা করার কথা বলেছিলেন। অধীর ঘনিষ্ঠরা সেই সময় ভেবেছিলেন তাঁকে হয়ত স্থায়ী সভাপতির দায়িত্ব দিতেই এই ইঙ্গিত দিয়েছেন রাহুল।

সোমেন মিত্রের মৃত্যুর পর ২০২০ সালে টালমাটাল কংগ্রেসের দ্বিতীয়বার হাল ধরেছিলেন বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ। নিজের মতো করে দল পরিচালনা করতে গিয়ে প্রতি পদে ঠোক্কর খেতে হয়েছে বলেই মত অধীর ঘনিষ্ঠদের। এমনকি চলতি বছর লোকসভা নির্বাচনেও অধীরকে একপ্রকার একাই লড়াই করতে হয়েছে। তাঁর হয়ে প্রচার করতে আসেননি সর্বভারতীয় কোনও নেতৃত্ব। উল্টে তাঁর মুখে তৃণমূল বিরোধীতা শুনে ভোট মরসুমে বাংলায় এসে তাঁকে একপ্রকার শাসিয়ে গিয়েছিলেন মল্লিকার্জুন খড়গে। অভিমান হয়েছে প্রবীণ অধীরের।

ভোটে হেরে যাওয়ার পর পায়ের তলার জমি আরও আলগা হয়েছে। দিল্লিতে গিয়ে তাঁকে পেতে হয়েছে ‘প্রাক্তন’ তকমাও। তা নিয়ে জলঘোলাও কম হয়নি। অধীরের নিজের কথায় তিনি একাধিকবার প্রদেশ সভাপতির পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন, কিন্তু মল্লিকার্জুন খড়গেরা সেই দাবি মানেননি। এই অধীরকেই মন্ত্রী থেকে লোকসভার নেতা বানিয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধীরা।

তবে কংগ্রেসের একটি অংশের দাবি, নাগাড়ে তৃণমূল বিরোধীতাই কাল হয়েছে অধীরের। লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরেও অধীর তাঁর এককাট্টা তৃণমূল বিরোধীতা থেকে সরে আসেননি। এমনকি আরজিকর কান্ডের প্রতিবাদে নেমে প্রতি মূহুর্তে সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। এই আরজিকর কান্ড যখন বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে, তাৎপর্যপূর্ণভাবে তখনও তেমনভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীরা। অধীর কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল। লোকসভায় তাঁর হেরে যাওয়ার পর তৃণমূল শিবির একটি ফিল গুড বার্তা পাঠিয়েছিল কংগ্রেস শিবিরকে। রাজ্য সভাপতি বদল হওয়ায় ফের কংগ্রেস ও তৃণমূলকে এক ছাতার তলায় দেখা যাবে কি না সেই প্রশ্নই ঘুরছে শনিবার রাত থেকে।

অথচ অধীরের দাবি ছিল, এই তৃণমূল দলটাই কংগ্রেসকে সাইনবোর্ড দলে পরিণত করেছে। যদিও মুর্শিদাবাদের বিধায়কদের একটা বড় অংশ যাঁরা একসময় কংগ্রেস করতেন তাঁদের মত এর ঠিক উল্টো। তাঁদের একাংশের দাবি, ” একসময় বহরমপুর, পরে জেলা তারও পরে প্রদেশের দায়িত্ব নিয়ে অধীর চৌধুরী জাতীয় কংগ্রেস নয়, অধীর কংগ্রেস গড়ে তুলেছিলেন রাজ্যে। আর তা করতে গিয়ে দলের মধ্যে গোষ্ঠী তৈরি করে নেতাদের তাঁর তল্পিবাহক করে তুলেছিলেন বলেই কংগ্রেস সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে। সবকিছুরই অবসান হয় কালের নিয়মে। অধীরও ব্যতিক্রম নয়।”

ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা শুভঙ্করের কাঁধে এখন দলের হারানো জমি পুনুরুদ্ধারের গুরু দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব সামলে রাজ্যের ক্রান্তিকালে দলকে কতটা প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারবেন তার উত্তর দেবে সময়, দাবি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। তাঁকে যে বড় পদে আনা হতে পারে বিধানভবনের আশেপাশে সেই গুঞ্জনও উঠেছিল ২০২৪ সালের ৩০ অগস্ট। যেদিন সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন শুভঙ্কর। মেঘালয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি  ও মিজোরাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির স্টেট ইন চার্জের দায়িত্ব দিয়ে তাঁকে কিছুটা পোক্ত করেই রাজ্য কংগ্রেসের প্রধান হিসেবে স্থায়ীভাবে পাঠানো হয়েছে বলে মত কংগ্রেসেরই একাংশের। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights