
বিদ্যুৎ মৈত্রঃ ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে বহরমপুর বিধানসভাকে পাখির চোখ করে টিম সাজালো তৃণমূল। নেতৃত্বে ঘুরিয়ে ফেরানো হল নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়কে। দীর্ঘ চার বছর পর দলের পিছনের সারি থেকে সামনে এলেন অরিত মজুমদার। জুড়লেন নাড়ুগোপালের দলে। দল যে নবীন, প্রবীণদের নিয়েই ২০২৬ এর নির্বাচনে লড়াইয়ে নামতে চাইছে, অরিতের তালিকাভুক্ত হওয়াই তার উদাহরণ। দায়িত্ব পেয়ে খুশি অরিত শীর্ষ নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ” নাড়ুর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দলের কাজ করবো।” তাঁকে স্বাগত জানান নাড়ুগোপালও।
মহালয়ার আগের দিন সন্ধ্যায় তৃণমূলের রাজ্য নেতারা দলের ফেসবুক পেজে ব্লক ও শহরের ভারপ্রাপ্ত নেতাদের একটি তালিকা পোস্ট করেছেন। সেই তালিকা অনুসারে নাড়ুগোপালকে আহ্বায়ক করে আটজনের একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটিতে সদ্য প্রাক্তন তৃণমূলের শহর সভাপতি বাবন রায়কে চারটি ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অরিতের হাতে আছে ছ’টি ওয়ার্ডের ভার। তার একটি পুরপ্রধানের ওয়ার্ড। তাৎপর্যপূর্ণভাবে যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌমিতা রায়চৌধুরী নিজেকে দলের কাজকর্ম থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন তাঁর স্বামী হিন্দোল রায়চৌধুরীকে সেই ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব ছাড়াও ২৩ ও ২৭ এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্ষীয়ান কাউন্সিলর জয়ন্ত প্রামাণিককেও কমিটিতে রাখা হয়েছে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন সভাপতি রাম নাগকে ওই ওয়ার্ড ছাড়াও ২১ নম্বর ওয়ার্ড জুড়ে দিয়ে দুটি ওয়ার্ডে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
২০২৬ এর ভোট বৈতরণী পার করা ছাড়াও অধরা বিধানসভা জেতা যদি লক্ষ্য হয় দলের তাহলে এমন কমিটি তৈরি হতো না বলেই দাবি করছেন দলের একাংশ কর্মী। পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন অন্যপক্ষ। তাঁদের দাবি, ” শহরে এককভাবে ক্ষমতা থাকলে দলে কারও কারও মৌরসী পাট্টাকে গুরুত্ব দেওয়া হতো, উল্টে দলের ক্ষতি হতো ২০২৪ এর থেকেও খারাপ।” তবে তাঁরা মানছেন দল ও প্রশাসন একসঙ্গে দেখতে গিয়ে ভোটের আগে চাপ বাড়ল নাড়ুগোপালের।
বহরমপুর শহরের তিনি পুরপ্রধান। তাঁর হাতে শহরের উন্নয়নের ভার। তারসঙ্গে রয়েছে পুরকর্মীদের ভালমন্দ দেখার ভারও।পুরপ্রধান হয়ে এক পদ এক নেতা মেনে বাবন রায়ের হাতে শহর তৃণমূল কংগ্রেসের ভার দিয়ে হালকা হতে চেয়েছিলেন নাড়ুগোপাল। কিন্তু শহরের মধ্যে তৃণমূল নেতারা নাড়ুগোপাল ঘনিষ্ঠ হতে গিয়ে শত গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে যান। পুরপ্রধান হওয়ার আগে যাঁরা নাড়ুগোপালের পাশে ছায়ার মতো ঘুরতেন তাঁদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় তাঁর। আর একটা দল এসে সেই শূন্যস্থান পূরণ করেন। এই ‘কোন্দল’ সামলাতে পারছিলেন না বাবন। সব জায়গা সামলাতে গিয়ে অশান্তি বাড়ছিল নাড়ুগোপালের।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে শুভদীপ চট্টোপাধ্যায় ওরফে রাজাকে সামনে রেখে বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল সাজাতে চেয়েছিলেন নাড়ুগোপাল। তাতে বেঁকে বসেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের সভাপতি, পর্যবেক্ষকরা। তাঁদের কেউ কেউ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিডের দ্বারস্থ হন। কথা যায় আইপ্যাকের কানেও। সেই মতো পুরসভার অন্দরে একদিন লম্বা বৈঠক করে টিম আই প্যাক। তারপরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ডেকে পাঠান জেলা নেতাদের। সেখানে অবশ্য নাড়ুগোপাল ছিলেন না। ওই মিটিংয়েই ঠিক হয় তৈরি হবে কোর কমিটি। ২৮ টি ওয়ার্ডকে চারভাগ করে দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু বিস্তর দর কষাকষির পরে ২৮ টি ওয়ার্ড ভাঙল আট টুকরোয়। নাড়ুগোপাল বলেন, ” সবার দায়িত্ব আছে আগামী নির্বাচনে শহরের ভোট বাড়ানোর। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
তবে শহরে মূল দলে কোনও নেতা একক ক্ষমতা না পেলেও শহরে মহিলা তৃণমূলের দায়িত্ব পেয়েছেন সৌমিমা চট্টরাজ, যুব দলের দায়িত্ব পেয়েছেন পাপাই ঘোষ, শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন অরিজিৎ জোয়ারদার।