কেএন কলেজের ঘাট ঢেলে সাজাচ্ছে পুরসভা

Social Share

সংবাদ প্রতিনিধি, বহরমপুরঃ বহরমপুর কেএনকলেজ ঘাটের পার সাজানোয় হাত দিয়েছে বহরমপুর পুরসভা। শিশুদের খেলার পার্ক থেকে সব বয়সী মানুষজনের বসার জায়গা সহ ভাগীরথী্র পারে বিনোদনের সব ব্যবস্থাই থাকছে। বাঁধানো হয়েছে নদীর পারও। যা দৃশ্যনন্দনও হচ্ছে, বলছেন সাধারণ মানুষ।

বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে ভাগীরথী নদী। সেই নদীর নানান ঘাট। কোথাও স্নানের ঘাট, কোনওটা আবার খেয়াঘাট, কোথাও আবার ক্ষৌরকার্য করার ঘাট, কোথাও অল্প বয়সীরা আড্ডা মারার জন্য বেছে নিয়েছেন নদী পারের একাংশ। তারও নাম আছে এক এক জায়গায় এক এক রকম। আর এভাবেই বহু নামে পরিচিত ভাগীরথী নদীর এপার-ওপার।

যেমন কৃষ্ণনাথ কলেজ সংলগ্ন স্থানীয় কালীমন্দিরের উল্টোদিকে বয়ে যাওয়া ভাগীরথীর একটা অংশ ‘কামান ঘাট’ নামে পরিচিত। সেখানে সাধারণত অশৌচের কাজকর্ম হয়। এই ঘাটেই ক্ষৌরকার্য সেরে পাশের মূল ঘাটে স্নান সেরে ফিরে যান শোকার্ত পরিবার। শুধু বহরমপুর নয়, বহরমপুরের আশেপাশের মানুষজনও ভাগীরথী ঘাটে নাইতে যেমন আসেন তেমনি নানান ধরনের আচার অনুষ্ঠানের জন্যও এই ঘাটকে বেছে নেন। ভাগীরথীর ঘাটের পারগুলি এতই অগোছালো ছিল যে কলেজ পড়ুয়ারাও মুখ ফেরাচ্ছিলেন নদীর দিক থেকে।

আরও পড়ুনঃ নির্বাচনের শেষ ল্যাপে ফিরল মেরুকরণের সুড়সুড়ি

এই ‘কামান’ ঘাটে কংগ্রেস আমলে শিশুদের খেলার জন্য পার্ক তৈরি হয়েছিল। সময়ের স্রোতে ভেসে সেই পার্কের দখল নিয়েছিল আগাছা। দখলে গিয়েছিল অন্ধকারের কারবারীদের। সেসব সরিয়ে নতুন রূপে পুরসভা সাজিয়ে তুলেছে কলেজ ঘাটের ওই অংশ। এই ঘাটে বিশেষ করে মহিলাদের পোশাক পরিবর্তনের জায়গা ছিল না। নয়া পরিকল্পনায় সংযোজন হয়েছে তাও। থাকছে আলোর ব্যবস্থাও। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে আনুমানিক ৬০ লক্ষ টাকা। ঘাটের নাম পাল্টে রাখা হয়েছে বীনাপাণি ঘাট। এই ঘাটে থাকবেন সবসময়ের নিরাপত্তারক্ষীও।

বহরমপুর পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পরে কলেজ ঘাটের এই অংশ। এলাকার কাউন্সিলর পেশায় শিক্ষক আবুল কাউসারের উদ্যোগেই সেজেছে ঘাটের পার। এর আগেও একুশ ধাপিকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে এসেছেন কাউসারই। তাঁর কথায় “যে কোনও বয়সের মানুষ গঙ্গার ধারে বসে গঙ্গা উপভোগ করতে চায়। কিন্তু উপায় ছিল না। এই জায়গাগুলো দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহারের ফলে কোথাও জঙ্গলে ভরে গিয়েছিল, কোথাও দুষ্কৃতিদের ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেসব সরিয়ে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করে মানুষজনকে গঙ্গা উপভোগ করবার সুযোগ করে দিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পুরসভার পক্ষ থেকে।”

পুরপ্রধান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “অধীর চৌধুরী তাঁর কুকুরের নামে রেশমা পার্ক তৈরি করেছিলেন ওখানে। সেটা পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল কুড়ি বছর। সেই পার্ক আমরা সাজিয়ে দিলাম সাধারণ মানুষের নানানবিধ ব্যবহারের জন্য। বিসর্জন, স্নান, ক্ষৌরকর্মক্রিয়া এবং আবালবৃদ্ধবনিতাদের বসার জন্য,কীর্তন সহ নানাবিধ ধর্মীয় অনুষ্ঠান যাতে করা যায় সেইভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুরবোর্ডে তৃণমূল ক্ষমতায় এসে বহরমপুরবাসীর সবদিকে নজর দিয়েছে। ভাগীরথীর ধারগুলো দখল হয়ে যাচ্ছিল। মানুষজন যে একটু গঙ্গার ধারের হাওয়া খাবেন। একটু গল্পগুজব করবেন সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। আপনি শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ যেদিকে যাবেন সেদিকে দেখবেন সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে নদীর পার। ”

তবে কেএনকলেজ লাগোয়া ফেরিঘাটে দিনভর খেয়াপারাপার করে। চাঁদিফাটা রোদই হোক আর মুষলধারে বৃষ্টি কিংবা শীতের সকালে হিমের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেই সেখানে। আক্ষেপের সঙ্গে সে কথা জানাচ্ছিলেন গোরাবাজারের ব্যবসায়ী সৌরভ সাহা। বিষয়টি তাঁদের নজরে আছে জানিয়ে কাউসার বলেন, “ওই এলাকা আমার ওয়ার্ডের মধ্যে হলেও ফেরিঘাট জেলাপরিষদের দখলে। ওখানে কিছু করতে গেলে জেলাপরিষদের সঙ্গে আলোচনা ও সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights