
বিদ্যুৎ মৈত্রঃ মানি ব্যাগ বের করে দাম মেটানো আজ ব্যাকডেটেড। উল্টে মোবাইল অ্যাপে কিউআর কোড স্ক্যন করে দাম মেটানোয় দেখানো যায় স্মার্টনেশ আর বৈভব। তার জেরে বাজারে খুচরোর হাহাকার। তার আড়ালে বাড়ছে কালোবাজারি। বাড়ছে দ্রব্যমূল্যও। ইউপিআই নিয়ে কেন্দ্রের ঢক্কানিনাদকে যা কটাক্ষ করছে উৎসবের মরশুম।
ঘটনা একঃ কল্যাণী রেলওয়ে স্টেশন। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে মশলা মুড়ি বিক্রি করেন এক মহিলা। দাম ১০টাকা থেকে শুরু, আর একটু বেশি নিলে ১৫ টাকা। এইভাবে ১০,১৫,২০ তিন ধরনের দামে মুড়ি বিক্রি করেন তিনি। এক ভদ্রলোক ১৫টাকার মুড়ি নিতে গিয়ে বাড়িয়ে দিলেন একশো টাকার নোট। বিক্রেতা বললেন, ” খুচরো দিন। পাঁচ টাকা ফেরত দেওয়া মুশকিল।” ক্রেতার জবাব ” খুচরো নেই। তাহলে কিউআর কোড দিন। ওখানেই দাম মিটিয়ে দেব।” আর একজন মহিলা এলেন একই দাবি নিয়ে। কিন্তু তাঁর কাছে মোবাইলে দাম মেটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। অগত্যা তাঁকে ১০ টাকার মুড়ি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল। দোকানি বললেন “১৫ টাকার মুড়ি বিক্রি বন্ধ করে দিতে হবে খুচরো পয়সা না থাকায়।”
ঘটনা দুইঃ বহরমপুরের স্বর্ণময়ী বাজার। পোলট্রির মাংস বিক্রি করেন একজন যুবক। তাঁর কাছে খরিদ্দারের অভাব নেই। কিন্তু শঙ্কা আছে ডিজিটাল লেনদেনে। অ্যানড্রয়েড ফোন ব্যবহারে অপটু বলার আড়ালে তিনি এড়িয়ে যেতে চান ব্যাঙ্কের লেনদেন। অগত্যা তাঁকে ভরসা করতে হয়েছে পাশের আর এক তরুণ দোকানীকে। ক্রেতা দাম মেটাতে কিউআরকোড চাইলে তিনি ক্রেতাকে নিয়ে যান পাশের সেই দোকানে। ক্রেতার মেটানো দামের থেকে অতিরিক্ত দশ থেকে বিশ টাকা সেই দোকানদার আদায় করেন মাংস বিক্রেতার কাছ থেকে, ইউপিআই ভাড়া বাবদ।
যে ইউপিআই বা Unified Payment Interface ভারতে নগদবিহীন অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে সেই ইউপিআইয়ের দৌলতেই বাজার থেকে উধাও খুচরো। আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে আমজনতাকে। আনাজ বাজার শুরু করে টোটোর ভাড়া মেটানো পর্যন্ত সর্বত্র খুচরোর আকাল। পাঁচ টাকা, দশ টাকার লেনদেন করতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে মোবাইলও। সেখানে আইএসপি’র দুর্বল নেটওয়ার্ক থাকলে দাম মেটানো দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এই ঘটনা শুধু বহরমপুরের নয়, সর্বত্র বিশেষত গ্রাম বাংলায় খুচরোর অভাবকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি ইউপিআইয়ের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনকে আয়ের উৎস বানিয়ে নিয়েছেন। একইভাবে কারও কাছে নগদ না থাকলে সেই নগদ দেওয়ার জন্যও বাড়তি কড়ি গুনতে হচ্ছে মানুষকে। এরজন্য সাধারণ মানুষ ব্যঙ্কের এটিএমে নগদ দশ, বিশ টাকা না থাকাকেও দায়ি করছেন। তারজন্য কোথাও নেই কোনও নজরদারি। স্টেট ব্যাঙ্কের স্থানীয় কর্তাকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, ” ইউপিআই লেনদেনের সঙ্গে ব্যঙ্কের কোনও যোগ নেই। এব্যাপারে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা বলা মুশকিল। ” তবে ব্যাঙ্কে গেলে মিলবে খুচরো, দাবি এক বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্তার।

প্রেস ইনফরমেশন ব্যূরো বা PIB দেওয়া তথ্য অনুসারে, জুন ২০২৫ এর হিসেবে প্রতিদিন ৬৪০ মিলিয়ন মানুষ ইউপিআই লেনদেন করেন। ব্যাঙ্কের ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে এত মানুষ টাকা লেনদেন করেন না। শুধু জুন মাসেই ২৪.০৩ লক্ষ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় জুন পর্যন্ত লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩২ শতাংশ। পিআইবি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে প্রতি মাসে বিশ্বের মধ্যে দ্রুতি গতির এই প্ল্যাটফর্মে ১৮ বিলিয়ন অর্থ লেনদেন হয়।