
বিদ্যুৎ মৈত্রঃ উলট পুরাণ। রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের নেতাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ জনতা। দিনরাত এমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের। আর মুর্শিদাবাদের লালগোলায় এ যেন অন্য ছবি। এখানে বিরোধী কংগ্রেস ও সিপিএম পঞ্চায়েত চালায়। সেখানে বিডিও ঘর বারান্দায় বিনা বাধায় হামলা চালাচ্ছে দুষ্কৃতিরা। এক আধদিন নয়, একেবারে মাসাধিকাল ধরে এই ঘটনা ঘটছে। মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী লালগোলা এলাকার সেই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল হতেই যদিও নড়েচড়ে বসল পুলিশ। কিন্তু জামিন পেয়ে গেলেন দুষ্কৃতিরা। আর সেই নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
যদিও তার আগে লালগোলা থানায় বিডিও একাধিকবার পুলিশকে অভিযোগ করেছেন বলে দাবি। ভিডিও ভাইরাল হতেই সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের হয় এফআইআর। সোমবার লালগোলা থানার বিলবোরাকোবরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে কামিরুল ইসলাম ওরফে বাবু ও সেসোমায়েউদ্দিন ওরফে সেসম নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের ধৃতরা তাদের দোষ স্বীকারও করেন। তারপরে ওই দুই ব্যক্তিকে লালবাগ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
সরকারি আইনজীবী আবিদ হাসান বলেন, ” কাগজ দেখেই বিচারক ধৃতদের শর্তসাপেক্ষে অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছেন।” কোন কাগজ? পুলিশ যে কাগজ ধৃতদের উদ্দেশ্যে বিচারকের সামনে হাজির করেছেন সেই কাগজ। পুলিশ আজ কোনও কেস ডায়েরিও আনেনি জানিয়ে ওই আইনজীবী বলেন “ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ ৩২৯(৫), ৩২৪(৪),৩৫১(২) ও ৩/৫ ধারায় মামলা দিয়েছিল। এই ধারাগুলি সবই জামিন যোগ্য ধারা।” কোন শর্তে জামিন মিলেছে? আইনজীবী বলেন, ” সপ্তাহে দুদিন থানায় গিয়ে ধৃতদের হাজিরা দিতে হবে।” পুলিশের দাবি, “যা প্রয়োজন ছিল তা জিজ্ঞাসা করেই জানা গিয়েছে। ঘটনার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।”
কিন্তু বিডিও কোয়ার্টারে হামলার ঘটনায় দোষীদের স্বীকারোক্তির পরেও কেন পুলিশ জামিন যোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে? তবে কি পুলিশ বিষয়টিকে লঘু করে দেখাতে চাইছে? এই প্রশ্নেই উত্তাল সাধারণ প্রশাসন। ক্ষোভ জন্মাচ্ছে পুলিশের প্রতি,দাবি সূত্রের। লালগোলার বিধায়ক মহম্মদ আলি অবশ্য বলেন, ” সরকারের দুটি ভিন্ন দফতরের মধ্যে কী সমীকরণ হবে তারাই জানেন। তাঁদের ঊর্ধতনরাই ঠিক করবেন কী সিদ্ধান্ত হবে? তাছাড়া ওই পঞ্চায়েত চালায় কংগ্রেস ও সিপিএম জোট। তারাই এসব বলতে পারবে। তাদের কোনও অভিযোগ নেই তাই রাজনৈতিকভাবে আমার এখানে কিছু বলার নেই।”
লালগোলার বাসিন্দা জেলাপরিষদের কংগ্রেস সদস্য তৌহিদুর রহমান ওরফে সুমন অবশ্য ধৃতদের জামিন প্রসঙ্গে কোনও কথা না বলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, “এটা আমাদের কাছে লজ্জার। একজন আমলা যদি নিরাপত্তা না পান সাধারণ মানুষের হবে কী?” পদাধিকার বলে বিডিও পঞ্চায়েত সমিতির কার্যনির্বাহি আধিকারিক। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কংগ্রেস ও সিপিএম জোটের এই পঞ্চায়েত সমিতিতে বিডিওর সঙ্গে নেতাদের সৎভাব নেই কোনওদিনই। জোটের নেতাদের একাংশের দাবি, “বিডিও তৃণমূলের দালালি করেন। সব কাজ আগে তৃণমূলকে দেন। এর আগে যেখানে পোস্টিং ছিলেন সেখানেও তৃণমূলের দালালি করতেন বলে শুনেছি।”