জেলাশাসকের ‘সাডেন ভিজিট’ হাসপাতালে, খুশি রোগীর আত্মীয়রা

Social Share
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন জেলাশাসকের

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ জেলার দায়িত্ব নিয়েছেন এখনও সাত দিনই হয়নি। সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘সাডেন ভিজিট’ করলেন জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া। সদর মহকুমা শাসক শুভঙ্কর রায়, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) চিরন্তন প্রামাণিককে সঙ্গে নিয়ে ঘুরলেন হাসপাতালের এক অলিন্দ থেকে আর এক অলিন্দে। তাঁর পিছু পিছু প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে হাঁটলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক, প্রশাসকরা। ঘুচল প্রশাসন ও হাসপাতালের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্বও।

আরজিকর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর পরে কথা ছিল ঢেলে সাজানো হবে রাজ্যের হাসপাতালগুলি। নিরাপত্তার নিরিখে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো কলেজগুলিতে আগের তুলনায় সংখ্যায় সিসি ক্যামেরা বেড়েছে। সক্রিয় নিরাপত্তারক্ষীরা ” ধরে আনতে বললে বেঁধে নিয়ে আসেন”। কিন্তু অভিযোগ, হাসপাতালে তলানিতে ঠেকেছে পরিষেবা। দালালদের রমরমা। নেপথ্যে না কি হাসপাতালেরই চিকিৎসকরা। এমনটাই দাবি রোগীর পরিবার আত্মীয়দের।

চিকিৎসকের ছোঁয়ায় সেরে ওঠেন রোগী। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে “রোগী যেন কয়েদি”। রোগ বাঁধিয়ে অপরাধ করে ফেলেছেন তিনি। অসুস্থ হওয়ার দায় যেন রোগীর আত্মীয় পরিজনদের। ভাবটা যেন ” কেন রোগ হয়?” আর রোগই যদি হবে তো “হাসপাতালে আসো কেনো বাপু?” হাসপাতালের যে কোনও ইউনিটে রোগী আর চিকিৎসকের সম্পর্ক যেন চোর পুলিশের।

অথচ একটা সময় জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা শেষে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে হাসিমুখে ফিরেছেন জীবনে। এখনও ওই হাসপাতালে আছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, আছেন গুণী চিকিৎসকও। তবুও চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ওঠে ভুরি ভুরি অভিযোগ। মেডিসিন বিভাগে গেলে দেখা যায় এক বিছানায় শুয়ে তিন রোগী। মরদেহ সরানোর সময়টুকুও অনেক বেশি মনে হয়।

তার পাশেই শয্যা পাতেন আর এক রোগী। মুমূর্ষু রোগীর জন্য আইসিইউ, সিসিইউ প্রয়োজন হলেও মেলে না শয্যা। এরপরে আছে একাংশ চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ। এমনকি রোগী পরে থাকে শয্যায়, চিকিৎসক হয়তো লিখে দিয়েছেন পথ্য কিংবা বিভিন্ন ধরনের মেডিক্যাল টেস্ট সেসব দেখার সময়টুকুও পান না সংশ্লিষ্ট কর্মীরা। অথচ সবই “সচল”। সূত্রের দাবি, চিকিৎসক ‘গুরুর’ দায় মাথা পেতে নেন ‘একলব্য’ ইন্টার্নরা।

পরিষেবা বিঘ্নিত হলে কিংবা অবহেলিত হলে রোগীর পরিবার প্রশ্ন করার সুযোগ পান না হাসপাতালে, এমনটাই অভিযোগ। আর তা যদি কোনওক্রমে বিতর্কে মোড় নেয় রোগীর নাকি ট্রান্সফার বাঁধা। যদিও এই অভিযোগ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জন্মলগ্ন থেকেই। এখনও হাসপাতালে নেই হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর জন্য চিকিৎসা। নেই কিডনি রোগীর পরিষেবা। ডায়ালিসিস হয় ঠিকই, কিন্তু মাঝে মধ্যেই না কি ঝোলানো থাকে নোটিশ , “আজ নয় কাল আসুন”।

এদিন জেলাশাসক ঘুরে ঘুরে সব দেখেছেন। রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। চিকিৎসক নার্সদের সঙ্গে কথা বলেছেন। হাসপাতালের প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, ” বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয় করে হাসপাতালে যে কাজগুলি চলছে তা যেন মান বজায় রেখে দ্রুতগতিতে শেষ হয় সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চিকিৎসা পরিষেবা উন্নত করতে যা যা প্রয়োজন তা আমরা স্বাস্থ্যভবনকে জানিয়েছি। আবার জানানো হবে।”

লাগুক না লাগুক রোগীর বাড়ির লোকজনকে রক্তের জোগান রাখতে বলে চিরকুট ধরিয়ে দেয় বেসরকারি হাসপাতাল। সেই রক্ত না লাগলে তা কোথায় যায়? মেলেনি উত্তর। এই অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরব মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্ল্যাড ব্যাঙ্কের চিকিৎসক। এদিন সেই অভিযোগও মন দিয়ে শুনেছেন জেলাশাসক। হাসপাতাল সুপার অনাদি রায়চৌধুরী বলেন, ” জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যে পরিষেবা এখনও চালু হয়নি তা নিয়ে কথা হয়েছে। হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর কথা আলোচনা হয়েছে।”

রোগীর আত্মীয় পরিজনরা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন তা স্বচক্ষে। পরস্পরকে আশ্বস্ত করলেন তাঁরা। বললেন ” ঘন্টা কয়েকের টানা বৃষ্টিতে আর হয়তো হাসপাতালের রাস্তা ভেসে যাবে না। হাসপাতালই হয়ে উঠবে না ডেঙ্গির আঁতুর ঘর।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights