নির্বাচনের আগে কাছাকাছি নাড়ু-সৌমিক, সে কি নিছক কাকতালীয় ?

Social Share
দেব ও শহর বহরমপুর

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ পুজোর আগে রূপালী পর্দার নায়ক দেব মাতিয়ে গেলেন শহর বহরমপুর। পরীক্ষার মরশুমে খোলা মাঠে এমন বিনোদন নিয়ে আপত্তি ছিল সুশীল সমাজের। অথচ সেই আপত্তি উড়িয়ে ওয়াইএমএর জমা জলে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে স্রোতে গা ভাসাল জেন ওয়াই, জেডও। যাঁদের অনেকেই ছিলেন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থী।

জেলা প্রশাসন ঝেড়ে কাসেনি। পুলিশ বিতর্কে রাশ টানতে মাঝমাঠে অনুষ্ঠান করার পরামর্শ দিয়েছে আয়োজকদের। আর এই আয়োজকদের প্রতিই ক্ষুব্ধ একাংশ শহরবাসি। একটি বাংলা ছবির প্রচারে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ঘুরছেন ছবির নায়ক তথা তৃণমূল সাংসদ দেব। বহরমপুরেও এসেছিলেন। তবে এই শহরে তাঁর এই প্রচারে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন রানিনগরের বিধায়ক সৌমিক হোসেন। সৌমিক বলছেন, ” ওয়াইএমএ মাঠের যে অংশে ওই অনুষ্ঠান হয়েছে তার চারপাশে কোনও বাড়ি ছিল না যেখানে পরীক্ষার্থী আছে। তাছাড়া আওয়াজও চড়া ছিল না। পাশের পাড়াতেও আওয়াজ পৌঁছয় নি।”

বাংলা সিনেমার হিরো-হিরোইনদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সাধারণ মানুষকে বিনে পয়সায় বিনোদন উপহার দেওয়ার সুনাম সৌমিকের বরাবর। সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়। দুর্গাপুজো থেকে সরস্বতী পুজো সবেতেই নাড়ুগোপালের ডাকে বহরমপুরে ফিতে কাটতে আসেন বাংলা ছবি কিংবা সিরিয়ালের পরিচিত মুখ। যা নিয়ে একসময় তৃণমূলের অন্দরেই চলতো টিপ্পনি “এ বলে আমায় দেখ ও বলে আমায়।”

সময় বদলেছে। রাজনীতির মাঠে নাড়ুগোপাল ও সৌমিক নিজেদের এলাকা নিয়ে ব্যস্ত। তবু বহরমপুরে আইনি পথে যে কোনও অনুষ্ঠান করতে গেলে অনুমতি প্রয়োজন। সেই অনুমতি দেওয়ার অন্যতম অংশীদার পুরসভা। নাড়ুগোপাল সেই পুরসভার চেয়ারম্যান। তাঁকে টপকে পুলিশকে ম্যানেজ করে বহরমপুরে তাঁর ছবির প্রচার যে করা যাবে না তা বিলক্ষণ জানতেন দেব। তারপরে দু’জনেই একই দলের সদস্য। কিন্তু যা জানা গেল দেবের আবেদন নাকচ না করে সৌমিককে ঘুরিয়ে দায়িত্ব দেন নাড়ুগোপাল। বিশেষ কাজে তিনি কলকাতায় থাকায় সৌমিক সেই দায়িত্ব “দাদা” নাড়ুগোপালের নির্দেশ ও সহযোগিতায় উতরে দিয়ে উল্টে দেব এবং তাঁর টিমের কাছে মুখ রেখেছেন শহরবাসীর।

রাজনীতিতে সৌজন্যতা হারিয়ে গিয়েছে ঘাসফুল জমানায়। নিত্য গোষ্ঠীকোন্দলে ফালাফালা জেলার প্রতিটি ব্লক থেকে বিধানসভা। লোকসভা এলাকাতেও ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে ঝামেলা তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের। কে যে কখন কার পাটাতনে টান মেরে ফাঁসিয়ে দেয় সেই আশঙ্কায় অনিদ্রা রোগে ভোগেন কত তরুণ নেতা। স্বাভাবিকভাবেই একের জমিতে অন্যের চাষ হলে রে রে করে উঠবেন যাঁর জমি তাঁর অনুগামীরা। ক্ষমতার মায়া এখানেই, বলছিলেন এক প্রৌঢ় রাজনীতিক।

বহরমপুর শহরের কানাগলিতে পা রাখলেই জিজ্ঞাসা ” চেয়ারম্যানকে না কি সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে? কোনও খবর আছে?” কে যে কার কাছে খবর চায় সেটাও এই জমানায় ধোঁয়াশা। বিরোধী পক্ষ ছাড়াও নেতাও লোক পাঠায় জনমত কোনদিকে জানতে। মানুষ কিন্তু সব দেখছে, বলে প্রৌঢ়ের দার্শনিক বার্তায় তাঁকেই পাল্টা শুনতে হয় ” দেখছে বলেই সরকার টিকে আছে। আগামীতেও থাকবে।” “দু-হাজার ছাব্বিশে বহরমপুর বিধানসভায় নাড়ু দা-র টিকিট বাঁধা।” বলে সেই অনুগামীও ঠেক থেকে ঠেকে ভাসিয়ে রাখে নেতার নাম। নেতার অবশ্য দাবি ” এসব আপনাদের গালগপ্পো। আমি দলের একজন সাধারণ সৈনিক। দল যা বলে সেই মতোই চলি।”

সদ্য প্রয়াত ডোমকলের বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের সঙ্গে রানিনগরের বিধায়ক সৌমিকের টানাপোড়েনের কথা সীমান্তে আজ বাসি। উল্টে হাওয়ায় ঘুরছে ডোমকল পুরসভায় ফিরতে পারে সৌমিক জমানা। বহরমপুরে তাঁর ফ্ল্যাট বাড়িতে থেকে হয়ত সৌমিক বহরমপুরের কাছে “ট্রেনিং নিচ্ছে” বলে খোঁটা দেয় তারই বিরোধী পক্ষ। সৌমিক সে কথায় ফুঁসে ওঠে বলেন ” আপনারা এসব আখছাআখছি ছাড়া কিছুই জানেন না? নাড়ু দা আমার বড়। এই অনুষ্ঠান ওর সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব হতো না।” আরও বলেন ” নাড়ু দা বহরমপুর শহরে প্রচুর কাজ করছেন। পুরসভা কীভাবে চালাতে হয় ওঁর মতো কেউ জানে না। যতই কেউ হঠাতে চাক, ওর বিকল্প কেউ নেই।”

ডোমকল পুরসভার চেয়ারম্যান থেকে এখন রানিনগরের বিধায়ক সৌমিক। নাড়ুগোপালও সেই পথেরই যাত্রী। চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল থেকে বিধায়ক নাড়ুগোপাল হয়ে ওঠার ব্যাপারে অবশ্য কোনও শুভেচ্ছা আগাম জানানানি সৌমিক। তিনি প্রথম থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। দলে অভিষেকই এখন সব। তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের পরিধি বেড়েছে কয়েকগুণ। নতুন পরিধিতে আছেন নাড়ুগোপালও। জেলার দুই নেতাই নয়, তাঁদের অনুগামীদের সুরও বদলেছে। শান্ত অথচ দৃঢ় এবং সতর্ক। সে কি নিছক কাকতালীয় না কি অপেক্ষা করছে কোনও রাজনৈতিক মোচড়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights