থানার কম্পিউটার অপারেটর হুমায়ুন কেন অপহরণে জড়ালো ভাবাচ্ছে সহকর্মীদের

Social Share
ধৃতরা

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রাজ্যের ভূমি দফতর যে ঘুঘুর বাসা তা নিজেই স্বীকার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ডোমকল ব্লকের ভূমি দফতরের ‘দালাল’ সুমন মন্ডল। সুমন অর্থের বিনিময়ে জমির রেকর্ড বদলানো থেকে চরিত্র বদলের কাজ করে দিতো বেআইনিভাবে, তার বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ বলে জানতে পেরেছে। ডোমকলের এক ব্যাবসায়ীকে অপহরণ কান্ডে বৃহস্পতিবার তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, মোটা টাকার বিনিময়ে সুমনই ছিল ওই ঘটনার মাস্টার মাইন্ড।

একইসঙ্গে ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করার অভিযোগডোমকল থানার সিভিক ভলান্টিয়ারকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম হুমায়ুন কবীর। ডোমকল থানার কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে তার সুনামও ছিল যথেষ্ট। ডোমকলের প্রয়াত বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের সম্পর্কে তার আত্মীয় হওয়ায় কমবেশি খাতির ছিল থানার অফিসারদের সঙ্গে। সম্পত্তি নিয়ে অন্য এক পরিবারের ঝামেলায় নিজেকে জড়িয়ে চাকরি খোয়ানোর মতো ‘নির্বুদ্ধিতার’ কাজ কেন করল সে, তা ভাবাচ্ছে ডোমকল থানায় কর্মরত তার সহকর্মীদের। থানায় থাকার সুবিধার্থে সুমনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল হুমায়ুন।

জানা যায়, ডোমকলের দক্ষিণ নগরের বাসিন্দা লাল চাঁদ ও তার সৎভাই আজিজুল শেখ ও রবকুল শেখের মধ্যে পারিবারিক একটি জমিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের বিবাদ। জমি বিক্রির জন্য লাল চাঁদের সাক্ষরের প্রয়োজন। কিন্তু সে সাক্ষর না করায় তাঁকে অপহরণের ছক কষে আজিজুলরা। পুলিশের দাবি, পরিকল্পনা ছিল তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে কলকাতার পথে যাওয়ার। মাঝখানে আজিজুলরা এসে দলিলে সই করিয়ে নিয়ে যাবে। পরে লালকে ছেড়ে দেওয়া হবে। সেইমতো ছক সাজানো হয়েছিল। আর এই কাজের জন্য থানার কম্পিউটার অপারেটর সিভিক ভলান্টিয়ার হুমায়ুন কবীরকে কাজে লাগানো হয়েছিল।

লম্বা রোগা আজমির মন্ডলকে পুলিশের দারোগা সাজিয়ে দুই গাড়ি লোককে বুধবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ লাল চাঁদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। একটি গাড়িতে সাঁটানো ছিল পুলিশের স্টিকার। পুরোদস্তুর পুলিশের আদব কায়দায় জামার কলার ধরে টানতে টানতে লালচাঁদকে দ্রুত গতিতে গাড়ি ছুটিয়ে এলাকা ছাড়ে দুষ্কৃতিরা। মাঝরাস্তায় একটি গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ায় হুমায়ুনের ফোনেই চলে এসেছিল আরও একটি স্করপিও। থানার গাড়ি চালক নয়ন শেখকে এই কাজের জন্য ডেকেছিল হুমায়ুনই।

তাদের পিছনে পিছনে ছুটে আসেন লাল চাঁদের অন্তঃস্বত্বা স্ত্রী শিউলি বিবি ও আত্মীয়রা। কিন্তু জানতে পারে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেনি। তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ ভাশসালা থেকে প্রথমে দুটি গাড়ি ও পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। পরে সিভিক ভলান্টিয়ার সহ আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতরা হল মহম্মদ আলি মোবারক, মমিনুল ইসলাম, সুমন মন্ডল, আজমির মন্ডল, ইমান উল কবির ,আনসারুল আনসারী, নয়ন শেখ ও হুমায়ুন কবীর। ধৃত আটজনকে আদালতে তোলা হলে পুলিশ সুমন মন্ডল, আজমির মন্ডল, ইমান উল কবিরকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। বাকিদের চোদ্দ দিনের হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

ডোমকলের মাটিতে দাঁড়িয়ে মাস চারেক আগে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ বলেছিলেন ” পুলিশকে বাইপাস করার চেষ্টা করবেন না।” আইনের হাত থেকে কেউ রেহাই পাবে না বলেও সেদিন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। ডোমকলের প্রয়াত বিধায়ক জাফিকুল ইসলাম তখনও বেঁচে ছিলেন। সেদিন মঞ্চেও ছিলেন তিনি। চারমাস পরে আজ বৃহস্পতিবার ডোমকলে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হল এক সিভিক ভলান্টিয়ার। তবে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে সে পুলিশের জেরায় দাবি করেছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights