কাঁটাতারের বেড়ায় যত সতর্ক হচ্ছে প্রহরী, সিঁদ কেটে ঠিক ওপারের জঙ্গি ঢুকে যাচ্ছে এপারে। হয় ছদ্মবেশে না হয় নজর এড়িয়ে।

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বাংলার দুয়ারে প্রতিবেশী জঙ্গি। ভারতে বসে যে ষড়যন্ত্রকারীরা নাশকতার ছক কষছিল, মুর্শিদাবাদের দুই ব্যক্তি সেই চক্রের অংশীদার। অসম পুলিশ তাদের বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছে। আর তাই নিয়ে দিনভর হুলস্থুল দিল্লি।
কাঁটাতারের বেড়ায় যত সতর্ক হচ্ছে প্রহরী, সিঁদ কেটে ঠিক ওপারের জঙ্গি ঢুকে যাচ্ছে এপারে। হয় ছদ্মবেশে না হয় নজর এড়িয়ে। তারপর জানাজানি হলে চলছে ধরপাকড়। আর সরগরম হচ্ছে আইনসভা। শাসককে খোঁটা দিয়ে বিরোধীরা বলছে, জঙ্গি ঢুকলে তৎপরতা বাড়ে। শাসকের তামাদি হয়ে যাওয়া পাল্টা জবাব- কাঁটাতারে রয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা। মাছি গলবারও সাধ্যি নেই। যদিও তা কথার কথা হয়ে দাঁড়ানোয় মন্ত্রী সান্ত্রীর এহেন মন্তব্য মানতে নারাজ দেশবাসী। বৃহস্পতিবারের ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়।
কুয়াশা সরিয়ে দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে টিভির দৌলতে তখন বহড়ান পঞ্চায়েত শুধু নয়, দেশ জেনেছে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছে হরিহরপাড়ার ওই দু’জন।
পাসপোর্ট জালিয়াতি নিয়ে এমনিতেই বুধবার থেকে সরগরম রাজ্য। পাঁচ জন ব্যক্তিকে জাল পাসপোর্ট তৈরির অভিযোগে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এমন সময় বৃহস্পতিবার রাত তিনটে নাগাদ কয়েকগাড়ি পুলিশ এসে চুপিসাড়ে তুলে নিয়ে গেল মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার নিশ্চিন্তপুরের বাসিন্দা আব্বাস আলী ও মাগুড়া গ্রামের মনিরুল ইসলামকে। আঁধো আলোতে যখন তাদের নিয়ে গন্তব্যের দিকে রওনা দিয়েছে পুলিশ তখনও গাঁয়ে পুলিশ ঢোকা নিয়ে খুব একটা গা করেননি এলাকাবাসী। পুলিশের গাড়ির আওয়াজে ঘুম ভেঙে বাড়ির বাইরে আসা মানুষজন ভেবেছেন ওই পাসপোর্ট চক্রের সঙ্গেই যোগ রয়েছে এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষক বলে পরিচিত ওই দু’জনের।
কিন্তু কুয়াশা সরিয়ে দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে টিভির দৌলতে তখন বহড়ান পঞ্চায়েত শুধু নয়, দেশ জেনেছে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছে হরিহরপাড়ার ওই দু’জন। বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগ থাকার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এসটিএফের সহায়তায় তাদের গ্রেফতার করেছে অসম পুলিশের এসটিএফ-এর আধিকারিকেরা।
ধৃতদের বিরুদ্ধে অসম পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬১(২),১৪৭,১৪৮ এবং ১৪৯ ধারা এবং ইউএপিএ-র ১০,১৩,১৬, ১৮(বি) ও ২০ ধারায় মামলা রুজু করেছে। তাছাড়া পাসপোর্ট আইনের ১২ (১)(এ) ধারাতেও ধৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে ভারতে বসে এদেশে নাশকতার ছক কষছিল সাদ রাদিই। আর সেই কাজে তাকে সাহায্য করছিল মৌলবাদী মানসিকতার মুর্শিদাবাদের আব্বাস আলী ও মনিরুল।
এলাকায় আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে দুষ্কর্মের অভিযোগ থাকলেও পাম্প মেশিনের মিস্ত্রি মণিরুলকে নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। পরিবার অবশ্য দাবি করেছে, পুলিশ কেন মনিরুলকে ধরে নিয়ে গিয়েছে তাঁরা জানেন না। কিন্তু পুলিশ বা প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেবে তা তাঁরা মেনে নেবেন বলেও জানিয়েছেন মনিরুলের দাদা শামসুর শেখ। ধৃতদের কাছ থেকে পুলিশ অ্যানড্রয়েড ফোন, কী-প্যাড ফোন সহ মোট চারটি ফোন, পেন ড্রাইভ ও কিছু আপত্তিকর নথি বাজেয়াপ্ত করেছে বলে জানা যায়।
একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আসাম পুলিশ জানিয়েছে, কেরালা থেকে সাদ রাদি ওরফে শাব শেখ নামে বাংলাদেশের রাজশাহির এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করেছে তারা। যার কাছে এদেশে বসবাসের কোনও বৈধ নথি ছিল না। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে ভারতে বসে এদেশে নাশকতার ছক কষছিল সাদ রাদিই। আর সেই কাজে তাকে সাহায্য করছিল মৌলবাদী মানসিকতার মুর্শিদাবাদের আব্বাস আলী ও মনিরুল।
জেহাদিদের মূল লক্ষ ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এবং অন্যান্য হিন্দু নেতাদের হত্যা করা।
একইভাবে আসামেরও বেশ কয়েকজন সমমনস্কের সঙ্গে যোগাযোগের সুতো জুড়েছিল সাদ রাদি। বাংলাদেশের জঙ্গি যোগের কারণে তাদের মধ্যে পাঁচ জনের খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারও করেছে তাদের। ধৃতরা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নিষিদ্ধ জঙ্গিদের সঙ্গে সন্দেহজনক মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে যোগাযোগ করত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ তাদের গোপন কর্মকান্ড ও মোডাস অপারেন্ডি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। আসাম পুলিশ জানিয়েছে ওই গ্যাং সারা দেশে বিশেষ করে আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গে স্লিপার সেল তৈরির কাজ করছিল। যারা ভারতে ধর্মীয় বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে নাশকতার ছক কষছিল। ধৃতরা সকলেই সাদ রাদির মাধ্যমে বাংলাদেশী নাগরিক ফারহান ইশরাকের সাথে যোগাযোগ করেছে। ফারহান ইসরাক এবিটি প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানির ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ধৃত নুর ইসলাম মন্ডল ও মজিবর রহমানের তৈরি স্লিপার সেলকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছিলেন ফারহান ইশরাক।
ABT (Ansarullah Bangla Team) এবং AQIS(al-Qaeda in the Indian subcontinent) এর মতো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের কার্যকলাপ এলাকার যুবকের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নুর ইসলাম মন্ডল ও মজিবর রহমান পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গা পরিদর্শন করেছে। মুর্শিদাবাদ এবং ফালাকাটায় বেশ কয়েকটি সভার আয়োজন করেছিল। আসাম পুলিশ ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এও জানিয়েছে, জেহাদিদের মূল লক্ষ ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এবং অন্যান্য হিন্দু নেতাদের হত্যা করা।