
বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ বাংলা ছবি “মৌচাক” এ উত্তম কুমারের লিপে বিখ্যাত হয়েছিল মান্না দে’র গাওয়া সেই গান- “তা বলে কি প্রেম দেবে না, যদি মারি কলসির কানা নেশার ঝোঁকে”। গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের লেখা সেই গানের এই লাইনকে একটু ঘুরিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোল্লাগেড়ের মোড়ের এক পথ সভায় উপস্থিত মানুষজনের কাছে ভোট ভিক্ষে করলেন বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়। হেমন্ত সন্ধ্যায় ভিড় করে আসা মানুষজনকে ভোট বাক্সে টানতে বোঝালেন, তোমরা আবেগে ভোট দিয়েছো কংগ্রেস আর বিজেপিকে। দল, মত নির্বিশেষে আমরা কিন্তু পরিষেবা দিয়েছি ক্লান্তিহীন।
খাগড়া মোল্লাগেড়ের মোড়ে ভৈরব পুজো উপলক্ষে আয়োজিত একটি শীত বস্ত্র বিতরণের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান। ২০২১ সালে বিধানসভায় তিনিই ছিলেন তৃণমূলের বিধায়ক প্রার্থী। বিজেপি জিতলেও কংগ্রেসকে তিনে ঠেলে দুইয়ে উঠেছিল তৃণমূল। পাল্লা ভারি থাকলেও এবারও দল তাঁকেই প্রার্থী করে ভোট যুদ্ধে নামবে কি না তা এখনও পরিস্কার নয়। কিন্তু দলের নেতা হিসেবে বহরমপুরের মানুষের কাছে ভোট ভিক্ষা একটা দায়ের মধ্যেও পড়ে চেয়ারম্যান সহ অন্যদের।
সেই বাধ্যবাধ্যকতা থেকেই এদিন নাড়ুগোপাল ওই সভায় উপস্থিত দর্শকের উদ্দেশ্যে নরমে গরমে বলেন, ” যে বহরমপুরের জন্য দিনরাত কাজ করছি, সেই বহরমপুর থেকে বঞ্চিত হলাম ২০২১ সালে। কিন্তু আমরা কিছু মনে করিনি। আমরা মনে করেছি আমাদের কাজ দিয়ে একদিন আপনাদের মন জয় করবোই। আপনাদের ভালোবাসা থেকে সেদিন বঞ্চিত করতে পারবেন না। বাড়িতে কুকুর, পাখি পুষলেও মায়া দয়া হয়। আপনাদের ও হবে।”
হাজার বিতর্ক সামলে ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনের কাজ চলছে জোর কদমে। আর সেই এসআইআর বা স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিসনের হেল্পডেস্ক খুলে জনসংযোগের সুযোগে পথে নেমেছে সব রাজনৈতিক দল। চেনা শব্দ বদলে “ভোট রক্ষা শিবির” খুলে তৃণমূলও ভোট চাইতে নেমেছে মাঠে। বহরমপুর সাংগঠনিক জেলায় দুটি বিধানসভা বহরমপুর আর মুর্শিদাবাদ বাদ দিলে বাকি আসনে তৃণমূলের লড়াই টিকে থাকার। আর কোনক্রমে বহরমপুর উতরোনো নিয়েই চিন্তা ঘাসফুল শিবিরের। স্থানীয় নির্বাচন থেকে বহরমপুর লোকসভায় জোড়াফুল ফুটলেও বহরমপুর বিধানসভার মানুষ গা ভাসাননি স্রোতে। এদিন ওই মঞ্চেই নাড়ুগোপাল বলেন, ” আমাদেরকে যত দূরে সরিয়ে রাখবেন, আমরা তত আপনার কাছে ভালবাসা নিয়ে যাব।”
এদিন তাঁর লক্ষ্যবিন্দুতে ছিলেন কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী আর বিজেপি’র বিধায়ক সুব্রত মৈত্র। নাড়ুগোপালের অভিযোগ একজন দশটা দেহরক্ষী নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর একজনকে মানুষ কাজে পায় না, ডেকেও না। তবু তাঁদেরকে মানুষ ভোট দেয়। আর তৃণমূল সব কাজ করলেও মানুষ তাদের ভোট দেয় না। তবে ওই সভায় উপস্থিত রসিকজন পাল্টা দাবি করে বলেন, ” জগাই মাধাই না জিতে যদি তৃণমূল জিততো ভোটে, তাকে কি আর এইরকম পথে ঘাটে দেখতো লোকে?” আর এই প্রসঙ্গেই ফিরে আসে বহরমপুরের সাংসদ ইউসুফ পাঠানের কথা। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুব্রত সাহার দাবি, ” সাংসদ হওয়া ইস্তক ইউসুফকে দেখতে পাননি বহরমপুরের মানুষ। যেটুকু যা এসেছেন তাও দলের নেতাদের সঙ্গে “জামাই” এর বেশে। এপারা ওপারা ঘুরে আবার ফিরে গিয়েছেন “ডেরায়। তার বেলা?”