সরকারি কর্মী নিগ্রহে গ্রেফতার কর্মাধ্যক্ষ, শাসকের বিরুদ্ধে সরব শাসক নওদায়

Social Share

নওদার ঘটনায় বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরী তীব্র নিন্দা করেন শাসক দলের।

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ নওদার তৃণমূল ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সফিউজ্জামান শেখকে ডেকে পাঠিয়ে সতর্ক করলেন মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব। সূত্রের দাবি, চলতি মাসের চার তারিখ নওদার সর্বাঙ্গপুর এলাকায় প্রতিমা নিরঞ্জনকে কেন্দ্র করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি স্থানীয় যুবক রিন্টু বিশ্বাস। সেই ঘটনায় নাম জড়ায় সফিউজ্জামান শেখ ওরফে হাবিব মাস্টারের।

একইভাবে চলতি মাসের ন তারিখ নওদা ব্লক অফিসে ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির ফোন না ধরায় শারীরিকভাবে নিগৃহিত হতে হয় তন্ময় দাস নামে ওই ব্লক অফিসের এক কর্মীকে। সেই ঘটনাতেও হাবিব ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতাদের জড়িত থাকার কথা উঠে আসে। ওই ব্লক অফিস সূত্রে জানা যায়, নওদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির ফোন ধরেননি নওদা ব্লক অফিসের কোষাধ্যক্ষ তন্ময় দাস।

সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার ওই সভাপতি সরকারি কর্মীকে সকাল সাড়ে দশটা এগারোটা নাগাদ  বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলেন। কিন্তু ওই সরকারি কর্মী কাজে ব্যস্ত থাকায় সেই ফোন ধরতে পারেননি। পরে উভয়ের কথা হলে  ওই সভাপতির ঘনিষ্ঠরা তন্ময়কে প্রথমে ধমকানি দেয় পরে প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া  হয় বলে অভিযোগ। নওদা ব্লক অফিসের একাংশ কর্মীর দাবি, কোষাধ্যক্ষকে কিল চড় ঘুঁষি মেরে তাঁর চেয়ার থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এমনকি বাঁশ দিয়ে মারতে উদ্যত হয় তৃণমূলের লোকজন।

কেন গ্রেফতার পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ

পরে বিডিওর গাড়ির চালক আটকালে প্রাণ রক্ষা হয় তন্ময়ের। তাঁকে ওই অবস্থায় উদ্ধার করে বিডিও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা হয়। তাঁর বুকে ও হাতে প্রচণ্ড জোর আঘাত লাগার কথা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়। সেখানে ঘন্টাখানেক পর্যবেক্ষণে রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ঘটনার জেরে কাজ বন্ধ করে প্রতিবাদে শামিল হন ব্লক অফিসের কর্মীরা। এরপরেই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। নওদা থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়। জেলাশাসকের কাছে পশ্চিমবঙ্গ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (নবপর্যায়) পক্ষ থেকে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয় শুক্রবার দুপুরে। নওদা থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়। জেলা প্রশাসন থেকে সবরকম সহযোগিতা করার আশ্বাস ও দেওয়া হয় ওই কর্মীকে। গ্রেফতার করা হয় নওদা পঞ্চায়েত সমিতির বনভূমি কর্মাধ্যক্ষ তমাল শেখকে।

বিষয়টি জানতে আক্রান্ত তন্ময় দাসকে ফোন করলে তিনি ঘটনার ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। ফোন ধরেননি নওদার বিডিও দেবাশিস সরকারও। এদিকে দুপুরে দলবল নিয়ে বহরমপুর ব্যারাকস্কোয়ার মাঠে এক সরকারি মেলার উদ্বোধনে আসেন শিক্ষা কর্মাধক্ষ্য। তার গাড়ি তল্লাশী চালায় বহরমপুর থানার পুলিশ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ সুপার নিজের অফিসে ডেকে পাঠান। সেখানে জেলার শীর্ষ কর্তারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বহরমপুর থানার আইসিও। সেখানে তাঁকে ডেকে সতর্ক করা হয় বলে দাবি সূত্রের। যদিও তাঁকে প্রশাসনিক ব্যাপারে আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছিল বলে জানান পুলিশ সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব।

হাবিবও বলেন “ পরপর দুটি ঘটনাতে যাদের নাম জড়ায় তারা আমাদেরই লোকজন। স্বাভাবিকভাবেই আমার নামও আসে। সেই কারণে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।” তবে নওদার ঘটনায় বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরী তীব্র নিন্দা করেন শাসক দলের। তিনি বলেন-“ তৃণমূলের কর্মাধ্যক্ষ ব্লক অফিসের কর্মীদের মারধরের অধিকার রাখে। মহিলা থেকে আধিকারিক কেউ বাদ যায় না। বাংলায় এই নৈরাজ্য কতদিন চলবে।“ নওদার বিধায়ক সাহিনা মমতাজ বলেন, “ আমি চাই না আমার এলাকায় কোনও ভাবে শান্তি বিঘ্নিত হোক।” এমনকি শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষের ইন্ধনেই নওদায় তৃণমূলের নাম খারাপ হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights