
বিদ্যুৎ মৈত্রঃ পারিবারিক রীতি মেনে দশমীর পুজো সারা হল বহরমপুরের ভট্টাচার্য বাড়িতে। যা একপ্রকার এই বাড়ির ঐতিহ্যও বটে। দশমীর পরে বাড়ির মেয়েরা সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। আর সিঁদুর খেলা শেষে বাড়ির চন্ডীমন্ডপে হয় কড়ি খেলা। যা এই পারিবারিক পুজোর এক প্রথাও বটে। কড়ি আর সুপুরি মিশিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। যাঁরা কড়ি কুড়োতে পারবেন আগামী বছর তাঁরা আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হবে্ন আর যাঁরা সুপুরি কুড়োবেন তাঁরাও ঠকবেন না। তাঁরা হবেন যশস্বী। তাঁদের নামডাক হবে। বাড়ির কনিষ্ঠ সদস্যেরও এই প্রথায় আছে গভীর আস্থা। তাঁরাই বললেন, ” দশমীতে আমাদের বাড়ির প্রতিমা নয়, এতো আন্তরিকতায় বিদায় জানানো হয় মনে হয় যেন বাড়ির মেয়ে উমা ফিরে যাচ্ছে শ্বশুর বাড়ি।”

গত ৭৫ বছর ধরে বহরমপুরে এই পুজো হচ্ছে পারিবারিক নিয়ম মেনে। ১৯৫১ সালে প্রয়াত দেবতোষ ভট্টাচার্যের উদ্যোগে এই পুজো শুরু হয়েছিল বহরমপুরের তন্তুজের গলির ২০ নম্বর মহারাজা শ্রীশ চন্দ্র নন্দী রোডে। এখানেই জন্ম হয় বহরমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মনোজ চক্রবর্তীর। এই বাড়ি তাঁর মামার বাড়ি। চন্ডীমন্ডপের গা ঘেঁষা ঘরটিতেই তাঁর জন্ম হয়। পুজোর চারদিন দলের কাজকর্মের সঙ্গে সঙ্গে সময় করে মামাবাড়িতে আসতে আজও ভোলেন না জাতীয় কংগ্রেসের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি। তিনিও কখনও কুড়িয়েছেন কড়ি কখনও সুপারি। এই বাড়ির পুজোয় ব্যস্ত থাকেন তাঁর স্ত্রী, পুত্রবধুও।

তবে এই পুজোর আদতে বয়স ৩০০ বছরেরও বেশি। পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভট্টাচার্যদের আদি বাড়ি জিয়াগঞ্জের বাহাদুরপুর গ্রামে। মূলত রাজাদের আর্থিক সহায়তায় সেখানে এই পুজো হতো। ১৯৪৭ সালে রাজতন্ত্রের অবসানে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয় দেশে। সেই সময় রাজাদের আর্থিক সহায়তা কমে যাওয়ায় পুজোর জাঁকজমক কমে যায় ভট্টচার্য বাড়িতে। সেই অবস্থার পরিবর্তন করতে বহরমপুরে পরিবার নিয়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো বহরমপুরে বসত বাড়িতেই তৈরি হয় চন্ডীমন্ডপ।
সেখানেই তৈরি হয় একচালা ঠাকুর। প্রতিমা তৈরি করেন বাড়িরই কোনও না কোনও সদস্য। এটাও ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোর রীতি। বর্তমানে এই বাড়িতে দুই প্রবীণ সদস্য দেবতোষ ভট্টাচার্য আর একজন দিপ্তোষ ভট্টাচার্য। তাঁদের তিন সন্তান। দেবতোষের সন্তান দ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য এ বছর মুর্তি তৈরি করেছেন। আর দেবতোষের কাঁধে ছিল পুজোর ভার। গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা মেনে এখানে পুজো হয়। অষ্টমীতে নিয়ম মেনে বলি দেওয়া হয়। পশু বলি তবে হয় না। এই পুজোকে কেন্দ্র করে সবাই আসেন এক জায়গায়। আসেন দূর-দূরান্তের আত্মীয়রাও। পুজোর ক’দিন বহরমপুরের তন্তুজের গলির এই ভট্টাচার্য বাড়ি হয়ে ওঠে যৌথ পরিবার।