
অনির্বাণ দাস, বহরমপুরঃ ” ১৮৬১ সালের ২ অগস্ট আমি জন্মগ্রহণ করি। এই বৎসরটি রসায়নশাস্ত্রের ইতিহাসে স্মরণীয়, কেননা ঐ বৎসরেই ক্রুক্স ‘থ্যালিয়ম’ আবিষ্কার করেন। ” প্রফুল্লচন্দ্রের ‘ আত্মচরিত” শুরু হচ্ছে এই কথাগুলি দিয়ে। অধ্যাপক ড: শ্যামল চক্রবর্তী ‘পরের পৃষ্ঠা’ আয়োজিত তৃতীয় বই আলোচনার শুরুটা করলেন এই লাইনটা দিয়ে। আর প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন শ্রোতাদের দিকে যে, এত ঘটনা থাকতে তাঁর জন্মদিনের সঙ্গে কেন এই ঘটনা সম্পর্কিত করলেন প্রফুল্ল?
এবং পরের এক ঘন্টা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনলাম বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে গিয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সার্থক চেষ্টা । আলোচনায় উঠে আসে আচার্যের জীবনের বিভিন্ন দিক। জামসেদজী টাটার ইস্পাত তৈরির কারখানা স্থাপন করায় প্রফুল্লচন্দ্র বলেন, এবার সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরির দায়িত্ব আমার উপর বর্তায়। এবং মানিকতলার পরে পানিহাটিতে কারখানা স্থাপন করেন এই লক্ষ্যে। তবে আলোচনায় জেলার ভূমিপুত্র দানবীর মণীন্দ্রচন্দ্রের কথাটা অনুল্লেখিত থেকে গেল হয়তো সময়াভাবেই। তবে স্যারের আরেকটি গ্রন্থ ঐতিহ্য উত্তরাধিকার ও বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র-তে এর উল্লেখ আছে যে আচার্যের ছাত্রদের ব্যবসা করার জন্য তিনি অর্থ সাহায্য করেছিলেন।
বিজ্ঞানে অনাগ্রহের কারণ হয়তো এই বিষয়গুলো পড়ে চাকরি পাওয়ার সুযোগ কম!
আলোচনার শেষে চিত্রকর শুভময় মজুমদার জানান তাঁর প্রধানশিক্ষক মাতামহ আচার্যের চেষ্টায় কিভাবে হয়ে উঠেছিলেন শহরের প্রতিষ্ঠিত জুতোর ব্যবসায়ী। যা এখনও সফলভাবে বয়ে নিয়ে চলেছেন তাঁর উত্তরসূরীরা। দর্শক শ্রোতার আসনে ছিলেন বহরমপুর শহরের প্রায় ৮০-৮৫ জন সুধীজন। ছিলেন জেলার ভূমিপুত্র অধ্যাপক আব্দুল কাফি, অধ্যাপক মনন কুমার মন্ডল, প্রাক্তন অধ্যক্ষ সনৎ কর, অধ্যাপক হাসনাত স্যার, বিশিষ্ট ইতিহাসবেত্তা নাজিম আহমেদ সহ শহরের শিল্পী, চিত্রকর, সাহিত্যিক,ডাক্তার, অধ্যাপক, শিক্ষক, ছাত্র, গবেষক,সাংবাদিক সহ প্রায় সব পেশার গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তবে উপস্থিতজনেরা বেশিরভাগই ছিলেন শহরের প্রবীণ ও মধ্যবয়সী মানুষ।
স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি কম ছিল। বর্তমান সময়ে মূলধারার বিজ্ঞান পাঠক্রমে ক্রমাগত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। এবছর স্নাতক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে কম। বিজ্ঞানে অনাগ্রহের কারণ হয়তো এই বিষয়গুলো পড়ে চাকরি পাওয়ার সুযোগ কম! ব্যাপারটা আশঙ্কাজনক। অথচ বিজ্ঞানের ছাত্রদের দিশা দেখাতে পারে প্রফুল্লের “আত্মচরিত”। সেক্ষেত্রে প্রফুল্লচন্দ্রের জীবনচরিত থেকে এই শিক্ষাটা যদি তাদের মধ্যে সঞ্চারিত করা যায় যে বিজ্ঞান পড়ে শুধু চাকুরি না করেও সফলভাবে ব্যবসা করা সম্ভব তাহলে হয়তো তাদের ভাবনার জগতে একটা আন্দোলন আনা যাবে। কারণ আমাদের মধ্যে বাঙালি উদ্যোগপতির সংখ্যা কম।
তাই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই ধরণের আলোচনায় আরো বেশি করে আনা দরকার। এ ব্যাপারে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে সংখ্যাধিক্য শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত ছিলেন বইয়ের ঠেকে, তারা উদ্যোগ নিলে সুফল মিলবে। আয়োজকদের এদিকটাতে নজর দেওয়া প্রয়োজন। আশা থাকল পরবর্তীতে এই রকম আলোচনা আরো হবে নিজেদের ঋদ্ধ করার জন্য।
অসাধারণ প্রতিবেদন। ধন্যবাদ প্রতিবেদককে।
তবে যতদূর জানি বিভিন্ন স্কুল কলেজপ কে যুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পূজোর ছুটি চলায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। চেষ্টা জারী রাখতে হবে।