খেলার মাঠের বুক চিরে পুজোর কার্নিভাল, ক্ষুব্ধ ক্রীড়াপ্রেমী

Social Share
কার্নিভালের মঞ্চে যাচ্ছেন জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বহরমপুরের ওয়াইএমএ মাঠে শনিবার হয়ে গেল চলতি বছরের পুজা কার্নিভাল। দশটি পুজো কমিটি এবার এই কার্নিভালে অংশ নিয়েছিল। যদিও বিসর্জনের এই বিশেষ শোভা যাত্রার আনন্দ মাটি করেছে মুষলধারে বৃষ্টি। অনুষ্ঠান উতরোনো নিয়ে কার্যত চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। বিকেল চারটের সময় শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা প্রায় এক ঘন্টা পিছিয়ে যায়। অন্যবছর এই মাঠেই বিসর্জনের শোভাযাত্রা দেখতে ভিড় করেন বহরমপুরের মানুষজন। কিন্তু এবার বৃষ্টির কারণে সেই শোভাযাত্রা দেখা থেকে বঞ্চিত হলেন তাঁরা।

জল কাদার মধ্যেই চলে অনুষ্ঠান

শোভাযাত্রা শুরুর পর বৃষ্টি থামলেও জল কাদায় ভরা মাঠ ছিল চলাচলের অযোগ্য। ফলে মাঠে প্রবেশ করতেও পারেন নি যাঁরা তাঁরা রাস্তা থেকেই যতটুকু সম্ভব দেখেছেন শোভাযাত্রা। বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। বাধ্যতামূলক ছিল পুজা কার্নিভালের আয়োজনও। আর এই দু’দিক সামলাতে গিয়ে কার্যত নাকানিচোবানি খেয়েছে জেলা প্রশাসন।

মাঠের বেহাল দশায় মঞ্চেই রায়বেঁশে নৃত্য পরিবেশিত হয়

এমনিতেই চারপাশে কংক্রীটের ফুটপাত থাকায় বৃষ্টির জল জমে যায় মাঠে। কড়া রোদের দেখা নেই পুজো শুরু থেকেই। ফলে শোভাযাত্রার জন্য মঞ্চ তৈরির আগে নরম ছিল মাটি। তাই গার্লস কলেজের যাওয়ার রাস্তা থেকে সোজা পরের মাথা পর্যন্ত পাথরকুচি ফেলে অস্থায়ী রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। শোভাযাত্রা শুরুর আগে পরপর দু’বার মুষলধারে বৃষ্টি এসে জল ঢেলে দিয়েছে সেই পথে। জেলাশাসক সেই পথ হেঁটে গেলেও নির্বিকারে গাড়ি নিয়ে মঞ্চের কাছে পৌঁছে যান, বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রীরা। গাড়ির চাকায় আরও বসে যায় নরম মাটি। আর মাঠের এমন বেহাল দশা দেখে ক্ষোভ গোপন করতে পারেননি ক্রীড়াপ্রেমীরা।

ভিজে মাঠেই চলে নৃত্য প্রদর্শনী

এই মাঠে প্রতিদিন ক্রিকেট খেলা শেখায় ছ’টি ক্লাব। তাছাড়াও কিশোর থেকে যুবকরা নিজেদের মতো খেলতেও মাঠে আসেন। অনেকে আসেন শরীরচর্চা করতেও। জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত একাধিক ফুটবল কিংবা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নিয়মিত হয় এই মাঠে। পুজোর ছুটি শেষে শীতকাল পর্যন্ত নিয়মিত খেলা তো হবেই, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি টুর্নামেন্টও হবে বলে দাবি খেলোয়ারদের। মাঠের এমন হাল দেখে ওয়াইএমএ ক্লাবের সম্পাদক অরুণ বিকাশ দাম বলেন, ” এই মাঠকে খেলার মাঠ হিসেবে দেখেন না প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদেরকে বলতে গেলে শুনতে হয় উল্টো কথা। আমরা অনেক জায়গায় খেলার মাঠ ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছি কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না।”

প্রস্তুত ছিল সবকিছু। নিয়ম করে বেজেছে ঢাকও।

এই মাঠ দখল করে মাসের পর মাস পরে থাকে ডেকরেটরের জেনারেটর, লরি ও অন্য সামগ্রী। অরুণ বলছেন ” দেখারও কেউ নেই, বলারও কেউ নেই, শোনারও কেউ নেই।” জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিশ্বজিৎ ভাদুড়ী বলেন, ” একটা বিকল্প ব্যবস্থা না তৈরি হলে খেলার মাঠ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে খেলাধুলার।” প্রশাসন চাইলে সংশোধনাগারের লম্বা ও চওড়া রাস্তায় এই অনুষ্ঠান করতে পারত। কিংবা ব্যারাকস্কোয়ারের এক পাশে কিংবা তার চারপাশের রাস্তায় এই অনুষ্ঠান অনায়াসে করা যেত বলে মনে করেন ওই সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক জগন্ময় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ” মাঠের বিকল্প অনেক জায়গা আছে যেখানে প্রশাসন চাইলেই এই ধরনের অনুষ্ঠান ভালভাবে করতে পারে কিন্তু সেখানে না করে মাঠ নষ্ট করেন।” তিনি দাবি করেন, ” কলকাতা বইমেলার জন্য যদি নির্দিষ্ট জায়গা থাকে তাহলে জেলাতেও তেমন একটা জায়গা প্রশাসনকে খুঁজে বের করতে হবে। তবেই বাঁচবে খেলার মাঠ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights