অ্যালবার্টের নেতৃত্বে পায়ের তলায় মাটি খুঁজছে আরএসপি

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্রঃ লালসালুর ওপরে আঁকা কোদাল বেলচা। এই প্রতীক কোন রাজনৈতিক দলের ? ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে অভ্যস্ত প্রজন্মকে প্রশ্ন করলে উত্তর মিলবে ‘ জানি না’, একথা লিখেই ফেলা যায়। অথচ আরএসপি বা Revolutionary Socialist Party (RSP) বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক দল একসময় উত্তরবঙ্গ থেকে মধ্যবঙ্গ বেশ শক্তিশালী ছিল।

৩৪ বছরের বাম সরকারের পতনের পর এই দলটি টিকে ছিল জনমুখে ত্রিদিব চৌধুরী, ননী ভট্টাচার্যের দল হিসেবে। মেঘনাদ সাহা যে দলের প্রতীকে জিতেছেন সেই দলের প্রতীকের ব্যবহারে অসুবিধা না থাকলেও বিধানসভায় একটি আসনও না জেতায় রাজ্য দলের তকমা হারিয়েছে আরএসপি।

সদ্য প্রয়াত হয়েছেন বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ প্রমথেশ মুখোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন আরএসপি’র শেষ সাংসদ মুর্শিদাবাদে। তাঁর প্রয়াণের দিন মুর্শিদাবাদের আরএসপি নতুন নেতা বেছে নেয়। শেষ জেলা সম্মেলনে পার্টি কর্মীরা অঞ্জনাভ দত্তকে নেতা মেনে লড়াইতে নেমেছিল, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে। কিন্তু অসুস্থ হয়ে অকালে প্রয়াত হন অঞ্জনাভ। তাঁর জায়গায় মনোজ ভট্টাচার্য, তপন হোড়রা বেছে নেন বছর পঁয়ত্রিশের নওফেল মহা. সফিউল্লা ওরফে অ্যালবার্টকে।

ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি বঙ্গ তথা দেশের উন্নয়নের কাঁটা এমন দাবি বাম সহ ধর্ম নিরপেক্ষ সব রাজনৈতিক দলের। তা স্বত্বেও ধর্মের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচনকে ঠেকাতে অপারগ রাজ্য ও শাসক বিরোধী বামেরা। রাজনীতির অলিগলিতে কান পাতলে শোনা যায়, ধর্মীয় মেরুকরণকে গুরুত্ব দিয়ে জেলা থেকে রাজ্য সর্বত্র নেতা বদলে দিয়েছে বামফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএম। মুর্শিদাবাদ জেলায় সংখ্যালঘু মুসলিমরা এখানে সংখ্যাগুরু। সেই রাস্তায় হেঁটে জামির মোল্লাকে জেলা সম্পাদক করেছে সিপিএম। সেই একই পথে হেঁটে অ্যালবার্টকে নেতা করা হয়েছে বলে মত আরএসপি’রই একটা অংশের। তবে মনোজ ভট্টচার্যদের যুক্তি ছিল পক্ককেশের বদলে তরুণদের ওপরেই ভরসা রাখতে চাইছে দল, তাই এই সিদ্ধান্ত।

শূন্যে বিলীন হয়ে যাওয়া একটি দলের নেতা হিসেবে কেমন লাগছে? অ্যালবার্ট বলেন, ” এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেছি।” তিনি আরও বলেন, ” ত্রিদিব চৌধুরী, ননী ভট্টচার্যদের নাম এই দলটির সমার্থক। সেই দলের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা সবসময় গর্বের। আমি এই সময়টাকে Opportunity হিসেবে দেখছি।” গত আড়াই মাসে তিনি নিজেকে অবশ্য ত্রিদিব চৌধুরীদের উত্তরসূরী হিসেবে কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে আশা জুগিয়েছেন। নাম কিনেছেন সুবক্তা হিসেবে।

অন্য রাজনৈতিক দলের মতো আরএসপির’র গণ সংগঠন আছে, যুব সংগঠন আছে। এইসবকে সামনে এনে দলের ভোল বদলানোর চেষ্টা শুরু করেছেন অ্যালবার্ট। সারা বাংলা অঙ্গনওয়ারী ও সহায়িকা কর্মী সমিতিদের নিয়ে ডিএম ডেপুটেশনের মতো কর্মসূচি পালন করেছেন। উপছে পড়া ভিড় না হলেও বৃষ্টিস্নাত বহরমপুরের টেক্সটাইল কলেজ মোড়ে সভা করেছেন নিজে সামনে দাঁড়িয়ে। প্রয়াত প্রমথেশ মুখোপাধ্যায়ের স্মরণসভাকে দলের মধ্যে কুক্ষিগত না করে সর্বদলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ভিন দলের নেতৃত্বের। বানের জলে ভেসে যাওয়া সর্বহারাদের পাশে দাঁড়াতে বামফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গে পা মিলিয়েছেন। ভাঙন দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলের নেতাদের নিয়ে।

যুব সংগঠন আরওয়াইএফ কে নিয়ে নিজেদের শক্ত ঘাঁটি কুলি, সালার হয়ে জেলা ঘুরেছেন অধিকার যাত্রার সঙ্গী হয়ে। ফিকে হয়ে যাওয়া দলীয় পতাকা কি ফিরবে রাঙা হয়ে ? পিএসইউ-র প্রাক্তন সর্বভারতীয় নেতা আত্মবিশ্বাসী অ্যালবার্ট বলেন, ” মুর্শিদাবাদে রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকদল যে রাজনীতি চালাচ্ছে তা একই স্রোতে চিরকাল চলতে পারে না। যে জেলায় গঙ্গা ভাঙন চলছে, যে জেলায় কৃষি ভিত্তিক শিল্পের কোনও দিশা নেই, যে জেলায় রুটি রুজির জন্য মানুষ ভিটে ছেড়ে চলে যাচ্ছে সেখানে শুধুমাত্র ধর্ম জাতিকে ভিত্তি করে টিকে থাকতে পারে না কোনও রাজনৈতিক দল। মানুষের মধ্যে জীবন যন্ত্রণার দাবি ফিরে আসবে। বামপন্থার প্রয়োজন হবে। সেদিন ত্রিদিব চৌধুরী, ননী ভট্টাচার্যদের প্রাসঙ্গিকতা ফিরবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights