
বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ মাঠে মাঠে সোনালি ধান। কোথাও কোথাও গোলায় উঠছে সেই নবান্ন। মনে এসআইআরের ধন্দ নিয়েও চাষিরা ব্যস্ত ক্ষেতে খামারে। আর কান্দি তো ধানেরই জমি। হেমন্তের এমনই পড়ন্ত বিকেলে বিধানসভার বিরোধী দলনেতাকে সেই কান্দিতে এনে গাঁ গরমের চেষ্টা করল বহরমপুরের বিজেপি। আর কংগ্রেস ও সিপিএমকে ব্রাত্য করে বিধানসভা নির্বাচনের লড়াই যে বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যেই হতে চলেছে ছাব্বিশে, মুর্শিদাবাদে এদিন তা প্রায় প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেলেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিনের মঞ্চে বিরোধী দলনেতা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্র, বহরমপুর সংগঠনের সভাপতি মলয় মহাজনরা।
বড়ঞা বিধানসভা মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের ক্ষতস্থান। এই বিধানসভার বিধায়ক আপাতত জেলবন্দি। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর নাম জড়িয়েছে। একবার নয়, দু-বার কেন্দ্রের দুই এজেন্সি সিবিআই ও ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন জীবন কৃষ্ণ সাহা। প্রথমবার ছাড়া পেলেও, দ্বিতীয়বার এখনও জামিনের জন্য বারবার আবেদন করেও বেল পাননি বিধায়ক।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখিয়ে দলের পক্ষ থেকে বড়ঞার দায়িত্বে থাকা বর্তমান সভাপতি মলয় মহাজন বুঝিয়েছেন, বড়ঞার মানুষ ভ্রুপল্লবে ডাক দিয়েছে পদ্মকে। বিধানসভায় ঘর বাঁধবার স্বপ্নে তাই সেখানেই প্রথম মাচা বেঁধে ভোটের প্রচার শুরু করল গেরুয়া শিবির এমনটাই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। তৃণমূলের এই “বদনাম” বিজেপিকে ভরসা দেবে বিধানসভা ভোটে, এই ধারণা থেকেই শনিবার বিকেলে ডাকবাংলা, হাট ময়দানে ভোটের বাদ্যি বাজিয়ে দিলেন শুভেন্দু। কোন কোন বিধায়ক নিয়মিত ইডি, সিবিআইয়ের ঘরে হাজিরা দিয়ে আসেন আবডালে, উপস্থিত জনতাকে তার ফিরিস্তি দিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে উসকেও দিয়েছেন তিনি।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছিলেন শুভেন্দু। আজকে সোনার ধান যেমন ছড়িয়ে রয়েছে কান্দিতে সেদিন মুর্শিদাবাদের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে ছিল ঘাসফুল। এগারোর পরে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে শুভেন্দুই তাঁদের অধিকাংশকে রোপণ করেছিলেন তৃণমূলে। ভিত নড়ে গিয়েছিল অধীর চৌধুরীর সংসারে। সেই যে কংগ্রেসের শরীর ভাঙল আজও তা ফেরেনি স্বমহিমায়, মনটাও ভেঙে টুকরো হয়ে গিয়েছে লোকসভায় অধীর চৌধুরীর পরাজয়ের পর। এদিন তাঁর ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে শুভেন্দুও বলেছেন, ” তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা কংগ্রেসের নেই।” মজবুত সংগঠন নয়, বিহারে ভোট জয়ের গন্ধেই মুর্শিদাবাদ তথা বাঙলার মন জিতবে বিজেপি, ঘুরিয়ে এদিন এমনই দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা।
রাজ্যে মেরুকরণের যে হাওয়া উঠেছিল একুশে সেই ঝড় ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনেও থিতিয়ে যায়নি বঙ্গে। তৃণমূল না কি অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার বানিয়ে ব্যঙ্ক তৈরি করেছে বলে দিন দুয়েক আগে গলা চড়িয়েছেন মুর্শিদাবাদের বিজেপি নেতা শাখারভ সরকার। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বিজেপি মুর্শিদাবাদের দুটি বিধানসভা তো বটেই বাকি কুড়িটি বিধানসভাতেও সভা বা সমিতি করে মানুষের হৃদয়ের সম্রাট তো দূর, দুয়োরে পৌঁছতে পারেনি বলেই দুয়ো দেয় রাজনীতিক মহল। তবু এসআইআর আবহে ফের জেগেছে গেরুয়া শিবির। মুর্শিদাবাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুও বলেছেন ” আমরা শরণার্থীদের পক্ষে কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের বিপক্ষে।”