নওদায় দলের কোন পক্ষেই যেতে চান না তাহের

Social Share

২০২৪-র লোকসভা নির্বাচনে নওদায় অধীর চৌধুরী নিজের ভোট প্রচারে গেলে সেখানে তাঁকে দেখে গো-ব্যাক শ্লোগান দিয়েছিল হাবিব ও তাঁর অনুগামীরা। সেবারও বিধায়ক হাবিবের সমালোচনা করে ঘটনার নিন্দা করেছিলেন।

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ নওদায় ফের প্রকাশ্যে বিধায়ক ও ব্লক সভাপতির দ্বন্দ্ব। তৃণমূলের নওদা ব্লক সভাপতি সফিউজ্জামান ওরফে হাবিবের নির্দেশেই সোমবার থেকে নওদা ব্লকের দশটি পঞ্চায়েতে কোন প্রধান, উপপ্রধান, যাবেন না। ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি ,কেউ যাবে না নওদা ব্লকের সমস্ত সদস্য পদত্যাগ করবে। যতদিন পর্যন্ত দল এলাকার বিধায়িকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিচ্ছে ততদিন তাঁদের এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন হাবিব। সেই ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল।

তাঁর সেই দাবি বিধায়ককে ভয় দেখানোর জন্য, পাল্টা এমনটাই দাবি করেছেন নওদার বিধায়ক সাহিনা মমতাজ খান। রবিবার নওদার বিএড কলেজ মাঠে দলীয় অনুগামীদের নিয়ে একটি সভা করেন হাবিব। সেখানে তিনি তাঁর দল ও পুলিশকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তবে মুর্শিদাবাদের সাংসদ তথা তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা আবু তাহের খান এদিন বিধায়ক কিংবা ব্লক সভাপতি কারও পক্ষ নিতে চাননি।এমনকি এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্যও করতে চাননি তিনি।

নওদায় তৃণমূলের মিছিল ও প্রতিমা নিরঞ্জনকে কেন্দ্র করে ৩ জানুয়ারি গুলি চালানোর ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত নওদা পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। একইসঙ্গে চলতি সপ্তাহে নওদা ব্লক অফিসের এক সরকারি কর্মীকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগও উঠেছে ওই বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ তমাল শেখের বিরুদ্ধে। দুটি ঘটনাতেই নওদা থানার পুলিশ তমালকে গ্রেফতার করেছে। আর সেই ঘটনাতেই জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সফিউজ্জামান শেখকে নেপথ্যে থাকার সন্দেহে পুলিশ সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব ডেকে সতর্ক করেছেন। তারপরেই নওদায় ফের বিধায়ক ও ব্লক সভাপতির গোষ্ঠীর মধ্যে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

পুলিশের খাতায় নাম উঠেছে হাবিব ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের। হাবিবের অভিযোগ, প্রশাসন বিধায়কের কথায় গুরুত্ব দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে হাবিবের বিরুদ্ধে এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ তুলছেন তৃণমূলের বিধায়ক সাহিনা মমতাজ খান। এদিনও তিনি বলেন, ” আমি চাই আমার এলাকা শান্ত থাক।” ২০২৪-র লোকসভা নির্বাচনে নওদায় অধীর চৌধুরী নিজের ভোট প্রচারে গেলে সেখানে তাঁকে দেখে গো-ব্যাক শ্লোগান দিয়েছিল হাবিব ও তাঁর অনুগামীরা। সেবারও বিধায়ক হাবিবের সমালোচনা করে ঘটনার নিন্দা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে লোকসভায় তৃণমূলের জয় হাবিবকে মানসিকভাবে শক্তি জোগায়।

সামনের বছর রাজ্যের বিধানসভা ভোট। এলাকার একাংশ তৃণমূল নেতার মতে, ২০২১ সালের সাহিনা, বিধায়ক হওয়া ইস্তক এলাকায় একদিকে তাঁর বিরোধিতা করে তাঁর মামা আবু তাহের খানের নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে এলাকায় নিজস্ব নেটওয়ার্ক তৈরি করেন হাবিব। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে একেবারে জেলাপরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষের মতো পদও পান হাবিব মাস্টার। একাধিকবার ওই এলাকায় দলীয় সভা ডেকে নিজের লোকবলের পরিচয় দেন তিনি দলের জেলা নেতৃত্বকে সাক্ষী রেখে। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতে পরপর কয়েকটি ঘটনায় খানিকটা ব্যাকফুটে চলে যান তৃণমূলের এই উঠতি নেতা।

প্রথমে তাঁর এলাকা থেকে বাংলাদেশি জঙ্গী ধরা পড়া ও পরে গুলি চালনা ও সরকারি কর্মীকে মারধরের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠে তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে। সূত্রের দাবি, এই দুটি ঘটনাতে তাঁর দলও তাঁকে সমর্থন দেয়নি। একইসঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় কৌশলে তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে নেয় জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব।

এই অবস্থায় কোণঠাসা হাবিব জনসমক্ষেই পুলিশের সমালোচনা করেন। বলেন, ” পুলিশ নিজের দায় নিতে পারত। এটি পুলিশি ব্যর্থতা। অতবড় মিছিলে একজন পুলিশ অফিসার ও একজন সিভিক পাঠিয়ে ছিল। কেউ সে কথা বলছে না। এটি পুলিশের অজ্ঞতা।” এমনকি রবিবার বিকেলের ওই সভায় তিনি বলেন, ” নওদা থানার অফিসার জেগে ঘুমোচ্ছে। ওই ঝামেলাই তৈরি হতো না পুলিশি ব্যবস্থা নিলে। কিন্তু সেই দায় তারা নিল না। আমাদের ওপরে দায় চাপানো হচ্ছে। আমরা মাথা মেতে সেই দায় নিচ্ছি।” একইসঙ্গে তিনি দলেরও সমালোচনা করেন।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights