কাজের ভাষা আর প্রাণের ভাষার টানাটানি একুশেও

Social Share
বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে পালিত হয় আন্তর্জাতিত মাতৃভাষা দিবস

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বাংলা কাজের ভাষা না কি প্রাণের ভাষা হবে তাই নিয়ে ভাষাদিবসের দিন টানাটানি চলল দুপক্ষের মধ্যে। একপক্ষ চাইছেন বাংলায় সরকারি দফতরে সব কাজ হোক বাংলা ভাষাায়। আর এক পক্ষের পাল্টা দাবি, বাংলায় সব কাজ হলে সীমিত হয়ে যায় কাজের জগৎ। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় বিশ্ব আজ গ্রাম। সেখানে ইংরেজিই যোগাযোগের সহজ মাধ্যম। সেক্ষেত্রে কাজের জায়গায় বাংলা চালু হলে গতি কমে যাবে।

একটি বহুজাতিক সংস্থার দিল্লি দফতরে কর্মরত বহরমপুরের বাসিন্দা তিতাস মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ” বাংলা গান শুনতে, বাংলা উপন্যাস পড়তে, কবিতা পড়তে ভালবাসি। কিন্তু যেখানে কাজ করি সেখানে ইংরেজিতে অভ্যস্ত কাজ করতে। তাই বলে কি বাঙালি সহকর্মীদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলি না?” আবার বহরমপুরের এক কলেজ পড়ুয়া সত্যজিৎ মণ্ডলের দাবি, ” সর্বত্র বাংলায় চালু হোক। আমাদের এই ভাষা আজ ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকক্ষেত্রেও বাংলা ভাষা আজ গ্রহ্যণযোগ্যতা পেয়েছে। ২২টি সাংবিধানিক ভাষা আছে। তামিল ভাষায় যদি সরকারি কাজ হতে পারে তাহলে বাংলা ভাষায় নয় কেন?”

কৃষ্ণনাথ কলেজ ক্যাম্পাসে আবুল বরকতের স্মৃতিতে মাল্যদান করা হয়।

তবে উভয়েরই দাবি, ” বাঙালি আজ তার সংস্কৃতি বদলে ফেলে হিন্দি বলয়ের সংস্কৃতি আমদানি করছে কি সমাজে কি ঘরে। হিন্দি ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্থ হচ্ছে। এই সংস্কৃতিই বাংলার পরিধি ছোট করছে।” অধ্যাপক দেবব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ” আজ বাঙালি গুগলকে অনুসরণ করে বাংলা বানান লেখে। যুক্তাক্ষর আজ হারিয়ে যেতে বসেছে কম্পিউটারের দৌলতে।”

মুর্শিদাবাদে দিনভর সরকারি বেসরকারি নানাস্তরে পালিত হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে নাচ, গান, কবিতার মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়। শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থা ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিল। আজ শুক্রবার একাংশ সরকারি, বেসরকারি স্কুলেও ভাষাদিবস উদযাপিত হয়। কৃষ্ণনাথ কলেজ অধুনা মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভাষা শহীদ আবুল বরকতের স্মৃতিস্তম্ভে মাল্যদান করে ভাষাদিবসে শহীদদের স্মরণ করা হয়।

মুর্শিদাবাদের সালার থানার বাবলা গ্রামই বরকতের জন্মভিটে। ১৯২৭ সালের ১৩ জুন ওই গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমে শহীদ হন বরকত। শহীদ হন আরও আট জন। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে তাই রাষ্ট্রসংঘ মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। শুক্রবার বিকেলেও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উপলক্ষে ছিল নানান অনুষ্ঠান শহর বহরমপুরের এদিক ওদিক।

পৌর কর্মচারীদের নিয়ে একটি মিছিল শহর পরিক্রমা করে

মুর্শিদাবাদ বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা কার্যালয়ের সামনের ফাঁকা জায়গায় মঞ্চ বেঁধে তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষা সেলের পক্ষ থেকেও ভাষা দিবস পালিত হয়। পৌর আর্ট গ্যালারি “শিল্প তীর্থে” বহরমপুর পুরসভার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস পালন করা হয় ওইদিন সন্ধায়। তার আগে পৌর কর্মচারীদের নিয়ে একটি মিছিল শহর পরিক্রমা করে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় ও কাউন্সিলর আবুল কাউসার, প্রবীণ তৃণমূল নেতা অশোক দাস প্রমুখ। শহীদ ক্ষুদিরাম পাঠাগারের উদ্যোগে তাঁদের ইন্দ্রপ্রস্থ কার্যালয়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

আরও পড়ুনঃ বার বার ফিরবে একুশ, ফিরবেন প্রতুলও

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights