অতিরিক্ত ফি নেওয়ার প্রতিবাদ করতে গিয়ে গোরাবাজার আইসিআই স্কুলের শিক্ষকদের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছিল এসএফআই কর্মীদের।

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সরকার স্কুলের ভর্তি ফি বেঁধে দিয়েছে ২৪০ টাকা। মুর্শিদাবাদ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক লিখিত নির্দেশ পাঠিয়ে জেলার স্কুলগুলিকে সে কথা স্মরণ করিয়ে ভর্তি বাবদ অতিরিক্ত ফি নিতে নিষেধও করেছেন। তবু জেলার অধিকাংশ স্কুলই অতিরিক্ত টাকা ভর্তির জন্য নিচ্ছে বলে অভিযোগ। তার পক্ষ নিল তৃণমূল।
আর এই অতিরিক্ত ফি নেওয়ার প্রতিবাদ করতে গিয়ে গোরাবাজার আইসিআই স্কুলের শিক্ষকদের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছিল এসএফআই কর্মীদের। বুধবার তাঁদের বিরুদ্ধেই পাল্টা মারের অভিযোগ তুললেন আইসিআই স্কুলের শিক্ষকরা। নিরাপত্তা চেয়ে দ্বারস্থ হলেন পুলিশের।
বহরমপুর গোরাবাজার আইসিআই স্কুল ২৪০ টাকার পরিবর্তে ১১৫০ টাকা করে ভর্তি ফি নিচ্ছে। সরকারি নির্দেশ না মানার প্রতিবাদ করতে গিয়ে মঙ্গলবার ওই স্কুলের শিক্ষকদের হাতে তাঁদের মহিলা কর্মীদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ তুলেছিল এসএফআই। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তিও হতে হয়েছিল দুই মহিলা এসএফআই কর্মীকে।
বুধবার স্কুলের প্রবেশ দ্বার রুদ্ধ করে সেই ঘটনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই। সেখানেই তাঁদের বিরুদ্ধে পাল্টা শিক্ষকদের মারের অভিযোগ তুললেন ওই স্কুলের শিক্ষকরা। তাঁদের অভিযোগ, ওই স্কুলের এক শিক্ষাকর্মী শচীনাথ মাজিকে প্রকাশ্যে প্রথমে থাপ্পড় ও পরে কান ধরে ক্ষমা চাওয়া করিয়েছে এসএফআই কর্মীরা। তাই নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে স্কুলের শিক্ষকরা পুলিশের দ্বারস্থ হলেন বুধবার সন্ধ্যায়। বহরমপুর থানায় এসএফআইয়ের কর্মীদের বিরুদ্ধে হাঙ্গামার অভিযোগ তুলে লিখিত অভিযোগ করলেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক আশীষ মণ্ডল।
আর এই অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে শীতে উত্তাপ ছড়াল শহর বহরমপুরে। বুধবার সন্ধ্যায় গোরাবাজার নিমতলা মোড়ে পথসভা করে এসএফআই সহ সিপিএমকে রীতিমতো হুমকি দিলেন তৃণমূলের বহরমপুর বিধানসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়।
ওই স্কুলের শিক্ষাকর্মীকের গায়ে এসএফআই কর্মীদের গায়ে হাত তোলা প্রসঙ্গে স্কুল পরিচালন কমিটির অন্যতম সদস্য বিপ্লব কুন্ডু বলেন, ” শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়ে এসএফআই কর্মীরা যা করেছে তা নিন্দার ভাষা নেই। এটা মেনে নেওয়া যায় না। একজন শিক্ষাকর্মীকে যেভাবে কান ধরিয়ে অপমান করা হয়েছে তা পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।” এসএফআইয়ের প্রাক্তন রাজ্য কমিটির সদস্য উৎসব ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, ” পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করুক। আমাদের ডাকে সাধারণ অনেক মানুষ এসেছিলেন অভিভাবকরাও ছিলেন। কারা উত্তেজিত হয়েছে এই কাজ করেছে তা জানি না। যদি করে থাকে তাহলে অন্যায় করেছে। ”
স্কুলের পক্ষ নিয়ে বিপ্লব বলেন, ” স্কুলের মান ধরে রাখার জন্য পড়ুয়াদের কাছ থেকে নূন্যতম টাকা অতিরিক্ত খরচের জন্য নেওয়া হয়। সরস্বতী পুজো, নিরাপত্তা রক্ষীর বেতন সহ টুকটাক কিছু খরচের জন্য সরকারের কোনও আলাদা তহবিল থাকে না। তাই মোট ১১৫০টাকা নেওয়া হয়। তারমধ্যে কম্পিউটারের চারশো টাকা ঐচ্ছিক।” তিনি আরও বলেন, ” বিদ্যালয় পরিদর্শক নির্দেশ দেওয়ার অনেক আগেই স্কুলে ভর্তি শেষ হয়ে গিয়েছে।”
স্কুলে অতিরিক্ত ফি নেওয়া হয়নি। গত বিশ বছর ধরে যে ফি নেওয়া হচ্ছে তাই নেওয়া হয়েছে বলে জানান তৃণমূলের বহরমপুর বিধানসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ” রাস্তায় নেমে চাঁদা তুলে একসময় সিপিএম নেতাদের ভোগবিলাস চলতো পার্টি অফিস থেকে। সেই চাঁদা এখন উঠছে না। ওদের ভোট ২০১১-র তিরিশ শতাংশ থেকে ২০২৪ এ ৫.৭২ শতাংশে নেমে এসেছে বাংলায়। বাংলায় কোথাও কোনও জনপ্রতিনিধি নেই। ফলে পার্টি অফিসে যে সমস্ত ভোগবাদী নেতা রয়েছেন তাঁদের লালন পালনের জন্য সিপিএম এই ভেন্ডালিজম রাজনীতি শুরু করেছে। সেখানে বাদ যাচ্ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। সেখানে ঢুকে পড়ুয়াদের সামনে শিক্ষকদের মারধর করছে টিআরপি বাড়াতে যাতে চাঁদা সংগ্রহ বেশি হয়।”
সিপিএম জেলা কমিটির সদস্য সন্দীপন দাস বলেন, “পরিচালন কমিটি ২৪০ কে বাড়িয়ে ১১৫০ করেছে। এই অতিরিক্ত টাকা বকলমে পরিচালনা কমিটির পকেটে ঢোকে। যারা স্কুলের গণ্ডি পেরোয়নি তারাই এখন পরিচালন কমিটির মাথা। এই অতিরিক্ত টাকা তাদের চাপে পরেই নিতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। তৃণমূল আবাস থেকে বালি, গরু, কয়লা কিছুই বাদ দেয়নি। এবার স্কুলও ছাড় পেল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ২৪০ নির্ধারণ করে দিয়েছে। তৃণমূলের পরিচালন কমিটির সদস্যরা সেই নির্দেশকে পাত্তা দিচ্ছে না।”
প্রসঙ্গত, পার্ক সার্কাসের সেভেন পয়েন্ট সংলগ্ন মর্ডান স্কুলের এক ছাত্রী নাসিমা মোল্লা আত্মহত্যা করেছে। অভিযোগ, ভ্যানচালক বাবার পক্ষে স্কুলের ভর্তি ফি বাবদ ১৮০০ টাকা জোগাড় করতে না পারায় সে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি পরিবারের। অভিযোগ পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ওই স্কুলের পড়ুয়াদের ভর্তির ২৪০ টাকা নেওয়া হলেও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ১৬০০ টাকা নেওয়া হয়েছে ডোনেশন বাবদ। এ ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ মুখ খোলেনি। মডার্ন স্কুলে ১০০ শতাংশ পড়ুয়াই সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের।