ভাসল রাজধানী,রাজ্য জুড়ে ঘোষিত ছুটিতে বিতর্ক স্কুলে

Social Share
প্রতীকী ছবি

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ একরাতের টানা বৃষ্টিতে জলে ভেসেছে রাজধানী তিলোত্তমা। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে আট জনের। ঘরবন্দি মানুষজন। সরকারের সামনে ছুটি দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। মঙ্গলবার স্ববেতন কর্মীদের ছুটি তো দিলেনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেসরকারি সংস্থাকেও ছুটি দেওয়ার জন্য আবেদন করলেন তিনি। সেই সঙ্গে পুজোর ছুটি বাড়িয়ে দিলেন আরও দু’দিন। স্কুল কলেজ সব বন্ধ আগামীকাল থেকেই। আর তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

সবে শেষ হয়েছে উচ্চমাধ্যমিকের তৃতীয় সিমেস্টার। একাদশের পরীক্ষা কোথাও কোথাও চলছে। এই দুটি পরীক্ষার জন্য বন্ধ ছিল পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পড়াশোনা। একদিন তা শুরু হতে না হতেই লম্বা ছুটি পেয়ে গেল পড়ুয়ারা। কালীপুজো ভাইফোটা কাটিয়ে স্কুল খুলতে অক্টোবর শেষ। নভেম্বরে শুরু স্কুলগুলির বার্ষিক পরীক্ষা। এখনও সিলেবাসে শেষ হয়নি বহু স্কুলে। হাতে দুদিন সময় পেলেও তা একটু এগিয়ে যেত বলে মনে করছেন স্কুল শিক্ষক তপেন পাল। তাঁর দাবি, ” ভাসল কলকাতা। আর রাজ্য জুড়ে পড়ে গেল স্কুলের ছুটি। এটা তুঘলকি সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে?”

তাঁর সঙ্গে সহমত একাংশ শিক্ষক। তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন ” কিছুদিন আগে আমাদের মুর্শিদাবাদ জেলার অনেক ব্লক ডুবে গিয়েছিল বানের জলে। শেষবেলার প্রস্তুতিটুকুও নিতে পারেনি উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া্রা। তখন সরকার কোথায় ছিল?” নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির নেতারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। সংগঠনের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক দুলাল দত্ত বলেন, ” আমাদের জেলার লালগোলা, সমসেরগঞ্জ সহ একাধিক নদী তীরবর্তী এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে। সেখানকার ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে বসতবাড়ি খুঁজে চলেছে হন্যে হয়ে।” তিনি আরও বলেন, ” সরকার তাঁদের কিছুজনের জন্য অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে স্কুল বাড়িকে বেছে নিচ্ছে। অথচ সেই আশ্রয় স্থানে যে পড়ুয়ারা আছে তাদের লেখেপড়ার খবর নিচ্ছে না। দিনের পর দিন স্কুল বন্ধ থাকছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি এই সরকার শিক্ষা বিরোধী। না হলে ভাসল কলকাতা, আর ছুটি হোক রাজ্যের সব স্কুল, এমন সিদ্ধান্ত নিতো না।”

তৃণমূলের শিক্ষা সেলের ( মাধ্যমিক ) সভাপতি সুদীপ সিনহা রায় অবশ্য সরকারের সিদ্ধান্তে কোনও ভুল দেখছেন না। তিনি বলেন, ” প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে পারা যায় না। আজও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। পরিস্থিতি যে কোনও জায়গায় খারাপ হতে পারে। সেই সব চিন্তা করেই পুজোর ছুটি দুদিন এগিয়ে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী।” সিলেবাস শেষ হওয়া না হওয়া প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ” সব স্কুল সময়েই পরীক্ষা নেবে আর তা সিলেবাস শেষ করেই নেবেন। পরীক্ষার্থীদের কোনও অসুবিধা হবে না।”

আগামীকাল রানীতলার তোপিডাঙা হাইমাদ্রাসায় স্মার্ট বোর্ড বসানো ও আধুনিক কম্পিউটার ল্যাবরেটরি উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। পরিকল্পনা ছিল পুজোর ছুটির পরে পড়ুয়াদের সেই ক্লাসে পড়ানো হবে। উৎসাহিত হয়ে একটা জেলার এক প্রান্তিক এলাকার পড়ুয়ারা স্কুলে আসবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিল বৃষ্টি। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সৈয়দ মামুন আলবেরুণী বলেন ” সরকার ছুটি ঘোষণা করায় আপাতত ওই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।”

তোপিডাঙায় ঘোষিত কর্মসূচি বাতিল হলেও জঙ্গিপুর মুনিরিয়া হাইমাদ্রাসা স্কুলে বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। ওই অনুষ্ঠানে উদ্বোধনও করা হবে স্কুল লাইব্রেরী, নতুন প্রশাসনিক ভবন। জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসরারুল হক মন্ডল। তিনি জানিয়েছেন, ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) জয়ন্ত হালদার, জেলা সংখ্যালঘু উন্নয়ন আধিকারিক রেনুকা খাতুন সহ বিশিষ্টজনেরা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights