সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ একটি নারী হত্যা শেষপর্যন্ত মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলকে হাতে হাত রাখতে বাধ্য করবে কেউ কোনওদিন ভেবেছিল? ভেবেছিল সব ভুলে মহামেডানের পতাকা উড়বে লাল-হলুদ, সবুজ-মেরুনের সঙ্গে? না ভাবেনি। কিন্তু রবিবার সেই বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকল বৃষ্টিস্নাত বিধাননগর।
আরজিকরের তরুণী চিকিৎসক হত্যাকান্ডের জেরে দিকে দিকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। একদিকে সেই ঝড়ের মোকাবিলা অন্যদিকে ফের হাসপাতালগুলোকে সচল করা সরকারের কাছে এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যত্র ভাঙচুর না হলেও আরজিকর হাসপাতাল ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে দুষ্কৃতিরা। অথচ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা বহু মানুষের নিরাময়ের ঠিকানা ছিল সরকারি অন্য হাসপাতালের মতো এই হাসপাতালও। জুনিয়র চিকিৎসকরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু রোগ থেমে নেই। মুমূর্ষু রোগীর ঠাঁই হচ্ছে বাকি হাসপাতালে।
পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষীর কথা ছেড়ে দেওয়া হলেও সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক কম, নার্স কম, টেকনিশিয়ান কম। আলো কম, হাওয়া কম, পানীয় জল কম, শৌচাগার কম, ওষুধ কম, আনুষঙ্গীক সামগ্রী কম,রোগীর জন্য শয্যা কম। যেদিকে তাকানো যায় সব কিছুই বাড়ন্ত। তবু সেখান থেকে একাংশ রোগী হাসিমুখে ফিরতে পারেন স্বজনের কাছে। এও কম বড় পাওয়া নয়। সেই হাসপাতাল রক্ষা করতে গিয়ে যাদের আঘাত লাগল তারাও প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু সেদিন পেয়েছেন ভেঙে পড়া সেই আরজিকর হাসপাতাল থেকেই।
আরজিকর হাসপাতালের প্রাক্তন ও বর্তমান চিকিৎসকদের একটা অংশ “ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও চিন্তিত” তছনছ হয়ে যাওয়া হাসপাতাল নিয়ে। ওই হাসপাতালের একজন তরুণ সিনিয়র চিকিৎসক বলছিলেন, “ সেদিনের তান্ডব অনেক কিছু গুঁড়িয়ে দিয়েছে। পুরো জরুরি বিভাগ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। দামি দামি ওষুধ, অক্সিজেন পাইপ লাইন, ভেন্টিলেটর, বাইপাপ সেটিংস (নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর), এসি, এইচডিইউ মনিটর ভেঙেছে।“ থামলেন না। বললেন, “ভাবুন এক শ্বাসকষ্টের রোগী যাঁর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিংবা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এমন রোগী হাসপাতালে এল। এখন আমরা কী করবো? যে যন্ত্রগুলো ভেঙেছে তা দিয়ে আমরা প্রথমেই তাঁকে সাময়িক সুস্থ করতাম। সে সব উন্মাদের মতো ভেঙে দিয়ে চলে গেল ওরা। ভাবল না কাল ওর বাড়ির লোকেরই হয়ত প্রয়োজনে লাগত এই মেশিনগুলো। কার রাগ কার ঘাড়ে তুললো বলুন তো?” কে তারা? আজও খুঁজছে পুলিশ ।
যে রোগীর তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন সেই রোগীই আসেন জরুরি বিভাগে। সেখানেই ছিল এইচডিইউ মনিটর। তান্ডবকারীরা তাও বাদ দেয়নি। গুঁড়িয়ে দিয়েছে শক দেওয়ার যন্ত্রও। কিচ্ছু রাখে নি। রক্তের চাপ বাড়ানো যন্ত্র থেকে স্যালাইনের বোতল সব শেষ করে দিয়েছে। এখন উপায়? ওই চিকিৎসক বললেন, “ কিছুই তো নেই, না আছে ওষুধ, না আছে ইন্সট্রুমেন্ট। কী দিয়ে চিকিৎসা করব?” নিজেই উত্তর দিলেন। বললেন, “ তবুও দিনের শেষে আমি তো চিকিৎসক। গুরুত্বপূর্ণ রোগী এলে সোজা ওয়ার্ডে পাঠাতে হচ্ছে। আর কীই বা করতে পারি আমরা?”
বেলগাছিয়ার বাসিন্দা তারক বিশ্বাস বলছেন, ” কোথা থেকে কী হয়ে গেল ঠাওর হচ্ছে না। যারা ভাঙল যারা ভাঙাল তারা সমান দায়ি। পুলিশ, সিবিআই দোষীদের হয়ত সাজা দেবে। কিংবা দেবে না। কিন্তু এর ফাঁক গলে বিনা চিকিৎসায় ঝড়ে যাবে কত প্রাণ। কে তার খেয়াল রাখে?”