হুমায়ুনেকে ছাঁটতে দলে অনুঘটককের ভূমিকায় কারা ? উঠছে প্রশ্ন

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ যে কায়দায় হুমায়ুন কবীরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে তা মেনে নিতে পারছেন না মুর্শিদাবাদ তৃণমূলের একটা অংশ। তাঁদের দাবি, খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাতে অনুঘটকের কাজ করেছেন মুর্শিদাবাদের নেতাদের একটি অংশ। ওই অংশেরই বক্তব্য, চিত্রনাট্য আগেই লেখা হয়েছিল। সেই মতো নিজের নিজের ভূমিকা পালন করেছেন ফিরহাদ হাকিম, আখরুজ্জামান, নিয়ামত শেখরা। একরোখা হুমায়ুন কবীরকে সাসপেন্ড করে দলনেত্রী রাশ টানতে চেয়েছিলেন বিতর্কে। হুমায়ুনও আন্দাজ করেছিলেন তাঁকে দল সাসপেন্ড কিংবা বহিষ্কার করতে পারে।

তিনি সন্দেহ করেছিলেন, কিন্তু তা যে একেবারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভামঞ্চের আগেই ঘটে যাবে তা এক বিন্দুও টের পাননি ভরতপুরের বিধায়ক। সেই ধাক্কা সামলাতে যেটুকু সময় লেগেছে সেই সময়টুকু তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন তাঁর দলের জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার। মাঠের মধ্যে তিনিই হাত বাড়িয়ে জলের বোতল এগিয়ে দিয়েছেন হুমায়ুনকে। সেই ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল। সংবাদ মাধ্যমের সামনে হুমায়ুন দাবি করেছেন, ফোন করে তাঁকে সভায় আসতে বলেছিলেন অপূর্বই।

এক বছর আগে থেকে বেলডাঙায় বাবরি মসজিদ তৈরির কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন হুমায়ুন। যদিও তা নিয়ে দোলাচলে ছিলেন নিজেই। দলের অন্দরে একাধিকবার দাবি তুলেছিলেন তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের দুই ব্লক সভাপতি যাঁরা একাধিকবার তাঁর পথ আটকেছেন তাঁদেরকে সরিয়ে দিতে। শেষ ঘোষিত ব্লক কমিটি থেকে তাঁদের বাদ দেওয়া হলেও নতুন নামও ঘোষণা করেনি দল। কার অঙ্গুলী হেলনে? উঠছে প্রশ্ন? দলেরই একটা অংশের দাবি, সব বিধায়কই নিজের এলাকায় দল সাজাতে নিজের লোককেই পছন্দ করেন। সেইভাবেই সাজানো হয়েছে ভগবানগোলা, কান্দি, বেলডাঙা, রেজিনগর সহ অন্য বিধানসভা। তাহলে কেন ব্রাত্য ভরতপুর?

মৎস্য কর্মাধ্যক্ষের পদাধিকার বলে ভরতপুর দুই-এর প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (সুমন) মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চে হঠাৎ জায়গা পেলেন কার ইশারায়? যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রচুর। তিনি জেলা পরিষদেই যান না, অথচ সরকার বরাদ্দ সুযোগ সুবিধা নেন পুরোটা। সে কথা কি বহরমপুর সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের অজানা? এই নেতাকেই একমঞ্চে ডেকে সাসপেন্ডেড বিধায়কের রোষের মুখে পড়েছিলেন বর্তমান যুব সভাপতি ভীষ্মদেব কর্মকার।

মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের বিধায়কের সংখ্যা ২০টি। তারমধ্যে একজন প্রয়াত। একজন নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে জড়িয়ে জেল বন্দি। বহরমপুর সংগঠনের একাংশ শীর্ষ নেতা তাঁর বিরোধী। দলের বর্তমান জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ভালো ছিল না। যে হুমায়ুন কবীরকে ছেঁটে ফেললো দল, তিনিই জীবনের পরিণতির জন্য আঙুল তুলেছিলেন অপূর্বর দিকে। সেই হুমায়ুন দল থেকে বেড়িয়ে তৃণমূলকে হারানোর শপথ নিয়েছেন। সেই হিসেবে জেলায় তৃণমূলের সক্রিয় বিধায়ক এখন ১৭ জন। সবাই ফের টিকিট পাবেন এমন কোনও কথা নয়। কাল মুর্শিদাবাদের ২২টি বিধানসভার মানুষই যাবেন হুমায়ুনের বাবরি মসজিদের শিলান্যাসে।

অনেকে দাবি তুলছেন হুমায়ুন কি দলের স্বার্থে কিছুই করেন নি। তাহলে তাঁকে এইভাবে সর্বসমক্ষে ডেকে অপমান করা হল কেন? কেউ কি বদলা নিতেই এমনভাবে সাজিয়ে দিয়েছিলেন চিত্রনাট্য। তাহলে তিনি কে? যে বাবরি মসজিদের শিলান্যাস করা নিয়ে হাওয়া গরম মুর্শিদাবাদের সেই হাওয়া নিজেই পরখ করতে তিন দিন বহরমপুরে কাটিয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ, সাধারণ প্রশাসন সবার সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু তিনিও কি জানতেন হুমায়ুনকে এই কায়দায় ছেঁটে ফেলা হবে? এর ফল যে দলের বিরুদ্ধে যেতে পারে তা কি আন্দাজ করেন নি কেউ?

আবু তাহের খান বলছেন, ” তৃণমূল দলের সুপ্রিমো মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরই তৈরি। তিনি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্ত আমরা সকলে মেনে চলবো।” হুমায়ুন প্রসঙ্গে বলেন, ” কারও ব্যক্তিগত মত থাকতেই পারে। আর এব্যাপারে আমাদের কোনও মতামত বাতুলতা মাত্র।” যদিও আর একটি অংশের দাবি, ” হুমায়ুন নাগাড়ে যে দাবি করে আসছিলেন, যে ভাবে সুর চড়াচ্ছিলেন তাতে বিরোধীরা সুযোগ পেয়ে যাচ্ছিল সমালোচনার। সেই পথ আটকাতেই দিদিকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে মনে হয়।”

হুমায়ুন কান্ডের পাশাপাশি মঞ্চে স্থান না পাওয়া নেতাদের একটা বড় অংশ ক্ষুব্ধ দলের বর্তমান শীর্ষ নেতাদের প্রতি। তাঁদের যুক্তি বছর খানেক আগে লালবাগে প্রশাসনিক সভায় থাকার অধিকার পাননি মুর্শিদাবাদের চেয়ারম্যান ইন্দ্রজিৎ ধর। কেন তাহলে সাংগঠনিক সভায় শাখা সংগঠনের জেলা নেতাদের ঠাঁই হবে না। সব মিলিয়ে নির্বাচনের মুখে মুর্শিদাবাদে তৃণমূল বড় পরীক্ষার সামনে বলে মনে করছেন রাজনীতির অভিজ্ঞ মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights