” একটা ভিডিও বার্তা দিতেই পারতেন সাংসদ “

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ এখনও ক্ষত শুকোয়নি। কার্তিক পুজোকে কেন্দ্র করে যে হিংসার আগুনে পুড়েছিল বেলডাঙা, এত সহজে সেই দাগ মুছে ফেলা যায় ? কোথাও কিছু নেই এমন বেমক্কা এক কাণ্ড ঘটে গেল যে উৎসবের রোশনাই ফিকে হয়ে গেল নিমেষে ? হলফ করে বলতে পারবেন তার পেছনে কোনও উস্কানি ছিল না ? – রাগে, অভিমানে কথাগুলো একটানা বলে থামলেন সত্তর ছুঁই ছুঁই ইজাজ আহমেদ। বাড়ি দেবকুন্ডু গ্রামে।

বহরমপুরের ট্রেন ধরবার জন্য বেলডাঙা স্টেশনে ইজাজের পাশেই বসে ছিলেন আনসার মোল্লা। তিনিও প্রবীণ। বললেন, ” আমার শিক্ষকতার জীবন সারা হয়েছে বছর দু’য়েক হল। এখানকার কলোনিতেই বাড়ি। কিন্তু দুটি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এমন ভয়ের সম্পর্ক ছিল না আগে। বছর দুয়েক ধরে এখন সম্পর্কটাই বদলে গিয়েছে। প্রশাসনেরও কেমন যেন শ্যাম রাখি না কূল রাখি মনোভাব।” হরিহরপাড়া ব্লকের মহিষমারা ঘোড়ামারা হাইস্কুলের শিক্ষক বেণুধর দাস বললেন, ” যার ঘা তারই তো ব্যথা লাগবে। তবে কার মনে কী লুকিয়ে আছে তার বহিঃপ্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তো বোঝা যাবে না। আমরা স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করছি এখন।”

যে কথা বলতে ওরা ইতস্তত করছিলেন তা হল রাজনৈতিক কারণেই বদলে গিয়েছে বেলডাঙার চরিত্র। তার জেরেই সেখানে শুরু হয়েছে রেষারেষি। সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘুর মধ্যে নিরন্তর চলছে অস্তিত্বের সংগ্রাম। ঘটনার পর পনের দিন কেটে গিয়েছে, এখনও স্বতঃস্ফূর্ত হাসি ফোটেনি মানুষজনের মুখে। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে জেলাশাসক ও বিএসএফের বহরমপুর রেঞ্জের ডিআইজিকে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে। সোমবার সেই রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হরিশ ট্যান্ডন ও হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। বেলডাঙা কাণ্ডে দুটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। সেই মামলার শুনানি শেষে এই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এলাকার জনপ্রতিনিধি বলতে বেলডাঙার বিধায়ক হাসানুজ্জামান শেখ, রবিউল আলম চৌধুরী।তাঁরা দলবল নিয়ে পুলিশ, সাধারণ প্রশাসনের সঙ্গে নাগাড়ে পরামর্শ করেছেন পরিস্থিতি সামলাতে। অশান্ত বেলডাঙাকে শান্ত করতে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি’র স্থানীয় নেতা, জনপ্রতিনিধিদেরও যথেষ্ট ভূমিকা আছে। ঘর ছাড়ারা ঘরে ফিরেছে। বাদ ছিলেন না ইমাম-পুরোহিতরাও। আহতদের প্রায় সবাই বাড়ি ফিরেছে। গুরুতর আহত একজন এখনও কলকাতায় চিকিৎসাধীন। তাঁকে নিয়ে যদিও উৎকন্ঠার কোনও কারণ নেই বলেই চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

বেলডাঙা (এক) ব্লকের কংগ্রেস সভাপতি আজাদ মন্ডল বলেন, ” বেলডাঙাবাসীই বলছে থানার আইসি যদি ঘটনার প্রথম তিনঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতেন তাহলে এমন রক্তাক্ত পরিস্থিতি হত না।” হাসানুজ্জামান বলছেন, ” দুর্গা পুজোর সময় থেকেই বলে আসছিলাম একটু নজরে রাখুন অপরাধীদের। উনি শোনেননি। সেদিন থেকে শুনলে এই ঘটনা ঘটতো না।” বছর দুয়েক আগে অশান্তির আগুনে যখন জ্বলছিল এই রাঢ় অঞ্চল, তখন বেলডাঙা থানার আইসি ছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে সরিয়ে রাজারহাট থানা থেকে “তালুর মতো এলাকা চেনা” জামালউদ্দিন মন্ডলকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল দায়িত্বে। এবার তাঁর নামেই এলাকাবাসী গাফিলতির অভিযোগ তুলছেন। প্রশাসনের কানেও গিয়েছে সে খবর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানেও সে কথা তুলেছেন এলাকার বিধায়ক, দাবি।

বহরমপুর লোকসভার প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরী বেলডাঙা নিয়ে প্রথম থেকে উদ্বিগ্ন ছিলেন। প্রশাসনিক বিধি ওঠার পর তিনি এক ধর্মীয় সভার আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েওছিলেন। বেলডাঙাবাসীকে উস্কানিতে কান না দিয়ে সম্প্রীতি অটুট রাখার পরামর্শ দিয়ে এসেছেন। অথচ একটি বারের জন্যও নয়া সাংসদ বিখ্যাত ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান এলাকাবাসীর খোঁজ নেননি বলে তাঁর দলেরই নিচুতলার অভিযোগ। তাঁরা দুয়ো দিয়ে বলছেন, “বেলডাঙা নিয়ে নিরাপদ দূরত্বেই থেকেছেন সাংসদ।”

এলাকার তৃণমূল কর্মীরা অধীরের উপস্থিতি নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে বলছেন ” ইউসুফজি একবারও খোঁজ নেননি। আর যাঁকে মানুষ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন তিনি আমাদের ভালো থাকা মন্দ থাকা নিয়ে চিন্তিত।” হাসানুজ্জামান বলছেন, ” তাঁকে আসতে দল থেকেই নিষেধ করা হয়েছিল। আমরা ছিলাম তাঁর হয়ে। তবে এটা ঠিক তিনি তো ফেসবুকে সক্রিয়। একটা ভিডিও বার্তা বেলডাঙাবাসীর জন্য দিতেই পারতেন। কর্মীরা এটাই বলতে চাইছেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights