
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ঋণদাতা বারবার টাকা চেয়েও তা পাচ্ছিলেন না। আর তাই লোকজন নিয়ে বেপাড়ায় গিয়ে তিনি ঠেঙাতে শুরু করেন ঋণ গ্রহীতাকে। ঋণদাতা ও গ্রহীতার সেই বিবাদ মেটাতে গিয়ে ফাঁপড়ে পড়লেন কাউন্সিলর। তাঁর বিরুদ্ধে ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ উঠল এলাকায়। ঘটনাটি ঘটেছে বহরমপুর পুরসভার দু নম্বর ওয়ার্ড কাশিমবাজার এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা-আটটা নাগাদ কাশিমবাজারের পালপাড়ায় সোম মন্ডল নামে মধুপুরের এক ব্যক্তি রাহুল রায়চৌধুরী নামে এক যুবককে ব্যপক মারধর করেন। রাহুলের দাবি, বছরখানেক আগে ১৫ শতাংশ সুদে সোমের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল রাহুল। সেই টাকা শোধ দিতে না পারায় দলগতভাবে রাহুলকে মারে সোম। ওই এলাকা বহরমপুর পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পরে। মারামারির খবর পেয়ে দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন কাউন্সিলর বাবন রায়। অভিযোগ, রাহুলকে বাঁচাতে কাউন্সিলর ও তার দলের ছেলেরা পাল্টা মারে সোমকে। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই সেখানে ছুটে আসেন সোমের স্ত্রী-পুত্রও। তাঁদেরকেও মারেন কাউন্সিলর স্বয়ং, দাবি সোমের স্ত্রী’র।
সেই দাবি অস্বীকার করে কাউন্সিলরের অবশ্য দাবি, “আমি রক্তাক্ত অবস্থায় রাহুলকে হাসপাতালে পাঠাই। পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে অভিযুক্ত সোম মন্ডল ও তাঁর স্ত্রীকে থানায় তুলে নিয়ে যায়।” তাঁর পরামর্শেই সোমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও করেন রাহুল, দাবি কাউন্সিলরের। যদিও সোম মন্ডলের স্ত্রীর অভিযোগ, ” কাউন্সিলর বাবন আমার স্বামীকে বেধড়ক মারে ও আমার গায়ে হাত তোলে।” সে কথা পুলিশকে জানিয়ে কাউন্সিলর ও তার দলবলের বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা লিখিত অভিযোগ করেছেন। কাউন্সিলর অবশ্য মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কাউন্সিলরের দাদাগিরি প্রসঙ্গে পুরপ্রধান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ” আরজিকর কান্ডের পর মেয়েরা যা দাবি করছে তাকেই সত্যি বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সবক্ষেত্রে বিষয়টা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে মহিলার স্বামী আগে গায়ে হাত তুলেছে। এবং এমন মার মেরেছে যে ছেলেটি মরে যেতে পারত। কাউন্সিলর কী করেছে। ওদের পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।” কাউন্সিলর যে ওই দম্পত্তির গায়ে হাত তুলেছে তা অস্বীকার করেছেন পুরপ্রধানও। বহরমপুর থানা সূত্রে জানা যায়, পুলিশ সোমকে গ্রেফতার করেছে ও তার বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১২৬(২)/৭৯/৭৪/৩৫১(৩) /৩(৫) ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
সুদের কারবার বা বেআইনিভাবে টাকার লেনদেনে কোনওভাবেই রাশ টানা সম্ভব হয়নি। অসময়ে টাকার প্রয়োজনে ব্যঙ্ক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম অনেক শিথিল হয়েছে ঠিকই তবু ঠেকানো যায়নি সুদের কারবার। আর সেই চক্রের কবলে পরে অভিযোগ, প্রায়শই ঋণগ্রহীতাকে হেনস্থা হতে হয় ঋণদাতার কাছে। রবিবার সন্ধ্যার এই ঘটনাই প্রমাণ করে আইনের আবডালে গ্রামবাংলায় চড়া সুদে আর্থিক লেনদেনের বাড়বাড়ন্ত চলছেই।