লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা বাড়ানো হচ্ছে নাঃ অধীর

Social Share
সভায় উপস্থিত মহিলা কংগ্রেস সদস্যরা

বিদ্যুৎ মৈত্রঃ লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প যদি সরকারি দলের তুরুপের তাস হয়, সেই তাস কাড়তে মরিয়া বিরোধীরাও। ২০২১ এর নির্বাচনে নামার আগে রাজ্যের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ মহিলা ভোটারের মন জিততে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল তৃণমূল সরকার। সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২.২১ কোটি মহিলা সরাসরি উপকৃত হয়েছেন সরকারের এই আর্থিক সহায়তায়।

আরও পাঁচ লক্ষ উপভোক্তাকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে সাধারণ মহিলারা মাসে হাজার টাকা আর তপশিলি জাতি, উপজাতির মহিলারা মাসে ১২০০টাকা করে আর্থিক সহায়তা পান সরকারের কাছ থেকে। বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরীর দাবি, বাজারের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সমতা রাখতে এই আর্থিক সহায়তা বাড়ানো উচিত।

আজ শুক্রবার মুর্শিদাবাদ জেলা মহিলা কংগ্রেস সম্মেলনের ডাক দিয়েছিল। গত মাসে যুব কংগ্রেসের কর্মীসভা হয়েছে বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে। দলের জেলা কার্যালয় ও যুব কার্যালয় লাগোয়া একফালি রাস্তার ওপর মঞ্চ বেঁধে এদিন অবশ্য মহিলা কংগ্রেসের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এইধরনের কর্মীসভার মধ্য দিয়ে অধীর চৌধুরী পরিচালিত মুর্শিদাবাদ কংগ্রেস নিজেদের ক্ষমতাটা দেখে নিতে চাইছে ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে। আগামীদিনে জেলা কংগ্রেস সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হবে। তারআগে বিভিন্ন ব্লকের নেতৃত্ব বদলে দিয়ে ব্লকস্তরে নিজেদের শক্তি যাচাই অবশ্য নিজেই পরখ করতে পথে নেমেছেন অধীর। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার সম্প্রতী বিজেপিকে আক্রমণ করতে গিয়ে তৃণমূলের প্রশংসা করে জেলার কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের কাছে বিভ্রান্তি তৈরি করে সেই কাজকে আরও কঠিন করেছেন।

বক্তব্য রাখছেন বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরী।

২০২৫-এর গণনা অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদ জেলায় মোট মহিলা ভোটার ২৮ লক্ষ ২৫ হাজার ২৫৫ জন। এমনিতে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সৌজন্যে গ্রামবাংলার মহিলা ভোটারদের একটা বড় অংশ শাসকদলের পক্ষে। অভিযোগ থাকলেও গত লোকসভা নির্বাচনেও জেলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী প্রচার সভায় ভরদুপুরেও ভিড় করে এসেছিলেন সেই মহিলারা। শাসক তাই লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পকে নিজেদের ভোট জোগারের হাতিয়ার করেছে বলে বিরোধীরা অহরহ অভিযোগ করেন। আর এই একটিমাত্র প্রকল্পের সহায়তা দেওয়ার জন্য শাসকদল বুথে বুথে নিজের দলের পতাকাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করেছে বলেও তাদের দাবি। যদিও অনেকক্ষেত্রে বিরুদ্ধ মতের উপভোক্তাকে ভয় দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগও উঠেছে শাসকের বিরুদ্ধে। আর সেই শঙ্কা কাটিয়ে তাঁদের ভরসা দিতে কার্যত অপারগ হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষ করে মুর্শিদাবাদের মতো প্রান্তিক জেলায়। স্বাভাবিকভাবে মহিলা মত তাঁদের পক্ষে থাকলেও সেই মতকে ভোটের বাক্সে টানতে পারেনি সিপিএম, কংগ্রেস।

আর তাদের ভোটের বাক্সে টানতে নেতারা একেক সময় এক এক রকম টোটকা ব্যবহার করেছেন। এদিন দলের সভায় উপস্থিত মহিলাদেরকেও অধীর চৌধুরী মনোবল বাড়াতে বলেন- “কোনও সরকার ইচ্ছে করলো কী করলো না তার উপর কোনও সরকারি প্রকল্প নির্ভর করে না, সে যে ভান্ডারই হোক না কেন। সরকার যখন কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেটা সরকারি পরিকল্পনা, দলের পরিকল্পনা নয়। ক্ষমতায় থাকা দল সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কিন্তু তাতে শাসক বা বিরোধী কোনও দলই হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তাই সরকারি কোনও প্রকল্প কেড়ে নেওয়া হবে বলে তৃণমূল যে ভয় দেখায় তাতে ভীত হবেন না। শুধু আপনারা নয় আপনাদের আশে পাশে থাকা সব মা বোনেদের কথাটা বলবেন। যদি কোনও মহিলার চালু লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা তৃণমূল করে না বলে সরকার কেড়ে নেয় তাহলে আমার কাছে আসবেন। সেই টাকা আমি উদ্ধার করে দিতে না পারলে আমি রাজনীতি করা ছেড়ে দেব।”

জেলা মহিলা কংগ্রেসের এদিনের সম্মেলনে উপস্থিতি হিসেবে সংখ্যাটা মোটেও চোখে পড়বার মতো নয়। স্বাভাবিকভাবেই অধীর চৌধুরীর এদিনের বরাভয় কতটা মুর্শিদাবাদের কোণায় কোণায় পৌঁছাল তা বলাই বাহুল্য। সভায় উপস্থিত কংগ্রেসের এক নেতা প্রসঙ্গক্রমে বলেন, ” দাদা যেটা বলছেন সেই ভয় তো মহিলাদের মধ্যে আছেই। ঘরে বসে হাজার টাকা পেতে সবার ভাল লাগে। কিন্তু দলের পক্ষে তাঁদের টানতে আমাদের মাটির কাছাকাছি যেতে হবে। আমাদের সেই লোকবলের অভাব আছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights