পারফরম্যান্সের নিরিখে স্বস্তিতে মুর্শিদাবাদ তৃণমূল

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ দলের সর্বভারতীয় নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন পালন করলেন তৃণমূলের নেতারা। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের উত্তর থেকে দক্ষিণে সর্বত্র প্রায় পাড়ায় পাড়ায় নেতার জন্মদিন পালিত হল আড়ম্বরে। মমতা বন্দ্যোপাধায়ের পর অভিষেকই মুখ্যমন্ত্রী মুখ বলে দলের মধ্যে প্রবীণ নবীনের ভেদাভেদকে উস্কে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ। সে সব নিয়ে তৃণমূলের জেলা নেতাদেরও খুব একটা বলবার জায়গা নেই বলছেন তাঁরা। তাঁদের উল্টে লক্ষ্য জন্মদিনে অভিষেকের বিশেষ বার্তা।

অভিষেক এ দিন স্পষ্টই বলেছেন কলকাতা বাদ দিয়ে বাকি জায়গায় দলের জেলা সভাপতি থেকে পুরসভার চেয়ারম্যান পদে বদল আনছে দল। কাদেরকে তিনি চাইছেন তাঁর একটা খসড়া তালিকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি পাঠিয়েছেন বলেও তাঁর জন্মদিনের দিন ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেখানে তিনি আনুগত্যের থেকেও পারফরম্যান্সকে এগিয়ে রেখেছেন। সে দিকে খেয়াল রেখে এদিন জেলাস্তরের নেতাদের একাংশের অভিষেকের জন্মদিন পালন করে কিছুটা নিজেকে সামনে আনার চেষ্টাও বলে মনে করছেন অনেকে।

জেলা পরিষদের সদস্য অশেষ ঘোষ একদিন আগেই বহরমপুরের গ্রান্ট হলে “মুর্শিদাবাদ নিঃশব্দ বিপ্লব”-এর ব্যানারে অভিষেকের জন্মদিন পালন করেন বুধবার। সেই অনুষ্ঠান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, বহরমপুর থানার আইসি, জেলা পুলিশের ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) ফিতে কেটে উদ্বোধন করেন। অশেষ বলেন, ” অভিষেক যেমন দলের একজন শীর্ষ নেতা তেমনি একজন সাংসদও। আমাদের সংগঠন সরকারি রেজিস্ট্রেশন করা একটি ট্রাস্ট। গত দশ বছর ধরে ওইদিন রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। এখানে রাজনৈতিক কথাবার্তাও হয় না। তাই সরকারি পদাধিকারিদের আসতেও মানা নেই।” জঙ্গিপুরেও একই ব্যানারে এই অনুষ্ঠান হলেও সেখানে কোনও সরকারি আধিকারিককে ফিতে কেটে উদ্বোধন করতে দেখা যায়নি।

বৃহস্পতিবার বহরমপুরের পুরপ্রধান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় পুরসভা চত্বরেই দলের নেতার জন্মদিন পালন করেছেন। উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলরাও। পথ চলতি মানুষজনকে মিষ্টিমুখও করানো হয়। যুব নেতার জন্মদিন উপলক্ষে যে কেক পুরসভায় কাটা হয়েছিল তার ওপরে বড় বড় করে লেখা ছিল “শুভ জন্মদিন। অভিষেক ব্যানার্জী স্যার।” দুঃস্থদের বস্ত্রবিতরণও ছিল জন্মদিন পালন কর্মসূচির অন্যতম অঙ্গ। তবে ‘দাদা’ থেকে অভিষেক কেন স্যার তার উত্তর অবশ্য মেলেনি।

ওই পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ভীষ্মদেব কর্মকার আবার একধাপ এগিয়ে সটান অভিষেকের বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে আশীর্বাদ নিয়ে এসেছেন। তার আগে অবশ্য নেতার জন্মদিন উপলক্ষে ভীষ্মদেব ছাত্রনেতাদের নিয়ে পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে গিয়েছেন। মুর্শিদাবাদ জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দলের জেলা কার্যালয়ে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল।

একইভাবে জঙ্গিপুরে বেশ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যুব নেতা অভিষেকের জন্মদিন পালন করেন ওই জেলার দলীয় সভাপতি খলিলুর রহমান, জাকির হোসেনরা। রঘুনাথগঞ্জ এক নম্বর ব্লকের একটি অনুষ্ঠানে জাকিরকে মিষ্টিমুখ করাতেও দেখা গিয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রেই ভিডিও, ছবি যে যেমন পেরেছেন নেতারা তা নিজের মতো করে কেউ সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্টও করিয়েছেন। শমসেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম নিজের এলাকায় দলের নেতার জন্মদিন পালন করেছেন।

তবে আনুগত্যের প্রসঙ্গ বাদ দিলে পারফরম্যান্সের নিরিখে ভাল জায়গায় আছেন দলের দুই জেলার নেতারাই। এমনটাই মনে করছেন জেলা নেতাদের একাংশ। গত লোকসভা নির্বাচনে জেলায় তিনটি আসনই জিতেছে তৃণমূল। মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর তাঁদের জেতা আসন হলেও ব্যতিক্রমী বহরমপুর আসনটিও এবার জিতেছে তৃণমূল। স্বাভাবিকভাবেই দলের অনেকেই মনে করছেন সেই জয়ের কৃতিত্ব জেলা সভাপতি ছাড়াও বিধায়ক, পুরপ্রধান, পঞ্চায়েত সদস্য এমনকি বুথস্তরের কর্মী সহ সবার। ফলে নেতা বদলের কোনও প্রশ্নই নেই বলে দাবি তাঁদের।

যদিও ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর একাধিকবার একাধিক মন্তব্য করে দলের জেলা নেতৃত্বের প্রতি তাঁর ক্ষোভ জানিয়েছেন। সেসবকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে রাজি নয় দলের বর্তমান নেতারা। বরং তাঁরা চাইছেন এবার একটি পুর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি তৈরি করা হোক। সেক্ষেত্রে দল থেকে যাঁরা দূরে আছেন তাঁদেরকে সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে এনে দলকে আরও শক্তিশালী করার দাবি তুলছেন তাঁরা। অন্য একটি অংশ অবশ্য সেই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে। তাঁরা চাইছেন জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকারকে ঘিরে দল যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক। আর সেই বাহিনীই উতরে দেবে ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন।

উত্তর মুর্শিদাবাদে খলিলুরের সভাপতিত্ব মেনে নিতে একাধিক বিধায়কের আপত্তি থাকলেও তাঁকে ওই পদ থেকে সরানো হবে না বলেই দাবি জঙ্গীপুর তৃণমূলের একাংশ। শহর এলাকার ফলাফল লোকসভা নির্বাচনে খারাপ হলেও ওই সাংগঠনিক জেলার পুর চেয়ারম্যানরাও স্বপদে থাকবেন বলেই ওই অংশের দাবি। একইভাবে দক্ষিণ মুর্শিদাবাদের পুরপ্রধানদের না সরানো হলেও কোথাও কোথাও ভাইস চেয়ারম্যান সরানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে দুই জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এসব নিয়ে বাইরে কিছুই বলতে চাইছেন না। তাঁদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে সিদ্ধান্ত নেবেন তাকে মান্যতা দিয়েই তাঁরা দলের কাজ করে যাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights