বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ হেভিওয়েট লোকসভা কেন্দ্র বহরমপুর শেষদিনের প্রচারে দেখল সৌজন্যের রাজনীতি। প্রতিদিন প্রতিমূহুর্তের পারস্পরিক বিষোদগারের কুরুক্ষেত্র বঙ্গ যা নিয়ে উত্তাল। অধীর চৌধুরীকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো সংবেদনশীল এলাকায় গো-ব্যাক শ্লোগান দিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি শাখারভ সরকার। সেই শাখারভই এদিন ফুল ছুড়লেন অধীরের দিকে। বললেন “বিজেপি’র সংস্কৃতিই এটা।” যদিও দলের একাংশ নেতা বলছেন, “ওপরে চাকচিক্য ভেতরে চৌচির দল নির্বাচনে জিততে পারবে কি না সন্দেহ।” তাঁরাই বলছেন “এবার লোকে বিজেপিকে চোকার্স বলে ডাকবে।”
আরও পড়ুনঃ ইউসুফকে পাড়া চেনালেন নাড়ুগোপাল
বাইশ গজে দক্ষ ও শক্তিশালী হওয়া সত্বেও বিশ্বকাপের মঞ্চে বারবার শেষ ল্যাপে হেরে যাওয়ায় খেলার দুনিয়ায় চোকার্স তকমা কুড়িয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, বঙ্গের বিজেপিরও সেই দশা। রাজনৈতিক গবেষক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ” বহরমপুরে ততোধিক খারাপ বিজেপির সংগঠন। আরএসএসের ঘাড়ে চেপে কতটা পথ যাবে? সেই দূর্বল সংগঠন নিয়ে চিকিৎসক নির্মল কুমার সাহার সংসদে পৌঁছানো বোধহয় অধরা স্বপ্ন হয়ে থেকে গেল।”
গত বছর বহিরাগত কৃষ্ণ জোয়ারদার আর্যকে বহরমপুরে প্রার্থী করায় দলে হেরে গিয়েছিল বলে জেলার নেতারা অন্দরে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন রাজ্য নেতাদের কাছে। এবার জেলা নেতাদের দাবি মেনে ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করতে দেরি করেননি অমিত শাহরা।
বহরমপুরের জনপ্রিয় চিকিৎসক নির্মল কুমার সাহার নাম ঘোষণা হওয়ার মূহুর্তে আনন্দে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বহরমপুরের একাংশ নাগরিক। বিধানসভা নির্বাচনের মতো লোকসভাও দখল করতে চলেছে তারা, হাবেভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন নেতারা। সময় গড়ালো, উন্মাদনার পারদ চড়ল চড়চড়িয়ে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বহরমপুরে এসে মেপে গেলেন ভবিষ্যৎ। রটে গেল নরেন্দ্র মোদি থেকে অমিত শাহ কেউ বাদ যাবেন না নির্বাচনী প্রচারে বহরমপুরে আসতে। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল যোগী আদিত্যনাথ ছাড়া কেউ এলেন না বহরমপুর লোকসভার প্রচারে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এলেন যেখানে বিভেদের কাঁঁটা পড়েছিল, সেই শক্তিপুরে।
শুনুনঃ বহরমপুরে বিজেপি ও সিপিএম নেতার গরমাগরম ভাষণ
একেবারে শেষ বেলায় এসে সাংবাদিকদের ডেকে এলাকাবাসীকে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য জানালেন, কংগ্রেস কতখানি তৃণমূল ঘেঁষা। দিলেন ‘অধীর চৌধুরী পেতে চলেছেন প্রাক্তনের তকমা’র মতো তামাদি ভাষণ। অথচ বহরমপুর ও হাতিনগরে তাঁরই পথসভায় ভিড়ই হলো না দলের কর্মী সমর্থকদের। শাখারভ বললেন, “গ্রান্ট হলে ভিড় হয়নি ঠিকই কিন্তু হাতিনগরে পরে প্রচুর মানুষের ভিড় হয়েছিল।”
নির্বাচনের শেষদিনের প্রচারেও চওড়া হল দলের ফাটল। দশ কিলোমিটার বাইক র্যালির প্রচারের অধিকাংশ রাস্তা জুড়ে থাকলেন বিধায়ক সুব্রত মৈত্র ওরফে কাঞ্চন। শেষবেলায় হাজিরা দিলেন বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শাখারভ সরকার।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রার্থীর হয়ে শেষ দিনের প্রচার করতে নারাজ জেলা নেতারা যুব মোর্চার ঘাড়ে চাপিয়েছিলেন প্রচারের ভার। যদিও বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি কৌশিক রায় বলেন, “দল মনে করেছে এই প্রচারের ভার আমাদের ওপর নিশ্চিন্তে ছাড়া যেতে পারে। তাই দিয়েছে। এখানে চাপানোর ব্যাপারটি বানানো।” তবে বিজেপি যে চোকার্স তকমা পেতে চলেছে সে কথা মানতে চাননি কৌশিক। তিনি বলেন, ‘চার তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষাই করুন না কেন?”
বহরমপুরের বিধায়ককে বার চারেক ফোন করবার পর উত্তর দিলেন “ব্যস্ত আছি। পরে করছি।” প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার আগের মূহুর্ত পর্যন্ত যে টেলিফোন আসার ছিল সে টেলিফোন এলো না। শাখারভ জানান, তাঁর বাড়ি থেকে বেড়তে দেরি হয়েছিল তাই কাঞ্চন প্রার্থীর সঙ্গে ছিল। বললেন, ” আমি পরে যোগ দিয়েছিলাম। খানিকক্ষণ পরে জরুরি ফোন আসায় আমাকে আবার মাঝপথে ফিরে আসতে হয়। এর মানে দলের মধ্যে বিরোধ আছে তা নয়।”