মহিলা মন রাখতে অপরাজিতায় টান ডেভিডের

Social Share
মহিলা কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন অপূর্ব সরকার

বিদ্যুৎ মৈত্রঃ আরজিকর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল দুনিয়াকে। বাংলায় নারী নিরাপত্তার গলদ নিয়ে লেখা হয়েছে পাতার পর পাতা কাহিনী। নড়েচড়ে বসেছে সরকারও।ধর্ষকদের ফাঁসি দেওয়ার নিদান দিয়ে রাজ্য অপরাজিতা বিল বিধানসভায় পাশ করিয়েছে। যদিও তা এখনও আইনে পরিণত হয়নি। কিন্তু ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে না পারলে রাজ্যের মহিলাদের একাংশের মন নির্বাচনে জিততে কোথাও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে তা বিলক্ষণ টের পায় তৃণমূল। তাই সভা সমিতিতে বিলকে হাতিয়ার করে মহিলাদের মন পড়বার চেষ্টা করেন তৃণমূলের নেতানেত্রীরা।

সোমবার দলের মহিলা কর্মীদের সম্মেলনে সেই পথে হেঁটে বিলের কথা স্মরণ করিয়েছেন তৃণমূলের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সংগঠনের জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিড। দলের লাইন মেনে তিনি এটাও বলেছেন, ” আমরা এই বিলটি পাশ করিয়েছি, কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সেই বিল আটকে রেখেছে। আইনে পরিণত করতে দিচ্ছে না।” ওই সম্মেলনে তিনি মহিলাদের উদ্দেশ্যে তথ্য দিয়ে বলেন, ” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাজেটের প্রায় অর্ধেক টাকা মহিলাদের জন্য খরচ করেন।”

যদিও বিরোধীরা নাগাড়ে রাজ্যে নারী নিরাপত্তার ভুরি ভুরি অভিযোগ তুলে শাসক তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়ে না। ওই সম্মেলনে উপস্থিত তৃণমূলের মহিলা সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক নীলা মুন্সি সেই অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ” এই রাজ্যে মহিলারা যথেষ্ট সুরক্ষিত অন্য রাজ্যের তুলনায়। দিদি মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য যা ভাবেন তা দেশের আর কেউ ভাবেন না।” যদিও National Crime Records Bureau (NCRB)-এর দেওয়া শেষ তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে বাংলায় নারী নির্যাতনের হার ৭১.৮ শতাংশ। ওই বছরই জাতীয় স্তরে নারী নির্যতনের হার ৬৫.৪ শতাংশ। ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন থানায় মহিলাদের বিরুদ্ধে ৩৪ হাজার ৭৩৮টি অপরাধের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। সারা দেশের নিরিখে নারী নির্যাতনের হারে পশ্চিমবাংলার স্থান পঞ্চম, দাবি NCRB-র।

বাংলার যে কোনও রাজনৈতিক দলকে মসনদে বসাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মহিলারা। মোট নির্বাচকের অর্ধেক নারী। সেই অর্ধেক আকাশকে পক্ষে টানতে রাজ্যের শাসক দল হাতিয়ার করেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকে। ২০২১ এর পর ২০২৪। পরপর দুটি নির্বাচনে শাসক তৃণমূলকে ক্ষমতায় ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এই প্রকল্প।

আর সেই প্রকল্পের একজন উপভোক্তাকে দুয়ারে পরিষেবা দিতে আজ অভ্যস্থ হয়েছেন তৃণমূলের কর্মীরা। একইসঙ্গে দলের মহিলা সংগঠনকেও পোক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। কিন্তু মুর্শিদাবাদের তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, ” ইদানিং মহিলাদের কর্মসূচি খুব একটা চোখে পড়ে না। সরকারি প্রকল্পে ভর করে ভোটে জেতে ঠিকই, তবে যাঁরা ভোট দেন তাঁদের সিংহভাগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দেন। তাই আমরা জিতি।”

সেই অভিযোগ ছিল তৃণমূলের বহরমপুর মুর্শিদাবাদ সংগঠনের কাছেও। আর দিন তিনেক পরে নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের সর্বস্তরীয় সভায় যাওয়ার আগে তাই একবার মহিলা সংগঠনও ঝালিয়ে নিলেন জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার। সোমবার জেলা পরিষদের হিজল অনুষ্ঠান বাড়িতে দুপুরে একটি কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল জেলা মহিলা সংগঠনের পক্ষ থেকে।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা সহ বহরমপুর সংগঠনের আওতাভুক্ত বিধায়করাও। ছিলেন বহরমপুর পুরসভার কাউন্সিলরদের একাংশ। ছাত্র সংগঠনের পক্ষে ছিলেন ভীষ্মদেব কর্মকার। সংখ্যালঘু সংগঠনের জেলা সভাপতি আবুল কাউসারও সম্মেলনে হাজির ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন দলের যুব সভাপতিও। যদিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না মুর্শিদাবাদ বিধানসভার চেয়ারম্যান শাওনি সিংহ রায়, তৃণমূলের জেলা মহিলা সংগঠনের প্রাক্তন জেলা সভাপতি শাহানাজ বেগম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights