পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা সভা মণীন্দ্রচন্দ্র বিদ্যাপীঠে

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ পড়ুয়াদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে গত বছর দেশজোড়া সমীক্ষায় এমনটাই দাবি করেছিল এনসিআরবি বা National Crime Records Bureau. সেই সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে সামগ্রিক আত্মহত্যার হার বার্ষিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, আর ছাত্র আত্মহত্যার হার ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাও এই তথ্য পুলিশ কিংবা হাসপাতালের নথিবদ্ধ থাকা তথ্যের উপর নির্ভর করে প্রকাশিত হয়েছিল। নথিভুক্ত নয় এমন আত্মহত্যার সংখ্যা আরও বেশি বলেও গত বছর তাদের বার্ষিক সাধারণ সভায় গবেষণা রিপোর্ট তুলে ধরে Internet Crime Complaint Center (IC3) দাবি করেছিল।

তাঁদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল “শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক আত্মহত্যার প্রবণতা উভয়কেই ধারাবাহিকভাবে ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত দশকে, ০-২৪ বছর বয়সী ব্যক্তিদের জনসংখ্যা ৫৮২ মিলিয়ন থেকে কমে ৫৮১ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে, তবে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার সংখ্যা ৬,৬৫৪ থেকে বেড়ে ১৩,০৪৪ হয়েছে।”

আরও ভয়ংকরভাবে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পড়ুয়া আত্মহত্যা মোট আত্মহত্যার ৭.৬ শতাংশ, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তো বটেই এমনকি কৃষক আত্মহত্যার থেকেও বেশি। আর তাতে ছাত্রদের তুলনায় এগিয়ে ছাত্রীরা। ভারতে পড়ুয়া আত্মহত্যার নিরিখে এগিয়ে মহারাষ্ট্র। তারপর তামিলনাড়ু ও মধ্যপ্রদেশ।

ইউনিসেফের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে ১৫-২৪ বছর বয়সীদের মানসিক স্বাস্থ্য মোটেই ভাল নয়। তাঁরা অবসাদে ভোগে। আর এই মানসিক অস্বাস্থ্যই তাঁদেরকে আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যায় বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে অনেকক্ষেত্রে তাঁদের ওপর অভিভাবকদের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের জন্যই বয়ঃসন্ধীর পড়ুয়া থেকে তরুণ সকলের জীবনে নেমে আসে অবসাদ। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো সঙ্গ দিয়েছে মোবাইল ফোন।

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ শুনছেন পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকরা

এইসব কারণেই কেন্দ্র সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। বৃহস্পতিবার বহরমপুর মণীন্দ্রচন্দ্র বিদ্যাপীঠেও হয়ে গেল পড়ুয়াদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য কীভাবে উন্নতি করা যায় “মন নিয়ে কথা” শীর্ষক একটি আলোচনা সভা। সেখানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নির্মাল্য সাহা।

স্কুলের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ওই সভায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকদের ডাকা হয়েছিল। প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ” পড়ুয়ারা এখন কোনও না কোনও কারণে মন নিয়ে সমস্যায় ভোগে। বাবা-মা কতটা সে বিষয়টা বুঝতে পারেন, কখনও পারেন না। সেই মনের নিয়ন্ত্রণ কীভাবে পড়ুয়ারা করবে, অভিভাবকরাই বা কীভাবে তা বুঝে পদক্ষেপ নেবেন তার জন্যই এই আলোচনা সভার আয়োজন। কু-অভ্যাস ছেড়ে জীবনে সুঅভ্যাস বজায় রাখার শিক্ষা পেলে এই আলোচনা ফলপ্রসু হবে।” পড়ুয়ারাও প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়েছিল। পড়ুয়াদের নানান মানসিক অস্থিরতার সাক্ষী থাকেন শিক্ষকরাও। এদিন তাঁরাও আলোচনায় অংশ নিয়ে জানতে চেয়েছে সমস্যার সমাধানের পথ।

আলোচক নির্মাল্য সাহা এদিন বলেন ” এই আলোচনার মধ্যে যদি দু-জনের মধ্যেও জীবন বোধ গড়ে তোলা যায় তাহলে আলোচনা সার্থক।” তিনি বলেন, ” পাঠ্যবই তথ্য দেয়, কিন্তু মানুষকে দক্ষ হতে হয়। আমরা এটা ধাক্কা খেতে খেতে শিখেছি। আমার পরবর্তী প্রজন্ম সেই শিক্ষাটা আমাদের কাছে পেলে ওরা জানবে আমরা বড় আর ওদের যত্ন করি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights