বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ পেডিয়াট্রিক ব্রঙ্কোস্কোপি। দীর্ঘস্থায়ী কাশি, ক্রমাগত ফুসফুসে সংক্রমণ, বুকের এক্স-রে পরিবর্তন, সন্দেহজনক যক্ষ্মা থাকলে ওই যন্ত্র দিয়ে শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। সেই যন্ত্র সাধারণত মুর্শিদাবাদের মতো জেলার কলেজ হাসপাতালে থাকার কথাই নয়। সাধারণত আধুনিক উন্নত পরিষেবা যুক্ত হাসপাতালে সেগুলির প্রয়োজন হয়। সেখানেও সেই যন্ত্র থাকে সংখ্যায় একটি, বড়জোর দুটি। মুর্শিদাবাদে সেই যন্ত্র কোভিড কালে জরুরীকালীন ভিত্তিতে কেনার প্রস্তুতি সারা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কেন ? তাও আবার একটা-দুটো নয়, ১১টি। সব মিলিয়ে কম বেশি ১১ কোটি টাকার কাছাকাছি দর হেঁকেছিল সেই যন্ত্র সরবরাহকারী সংস্থা।
আরও একটি বিশেষ সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসকদের একটি অংশের সেই সময় জিজ্ঞাসা ছিল ওই যন্ত্র চালাবে কে? কারণ ওই যন্ত্র কেনার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অপারেটরের প্রয়োজন। তা মিলবে কোথায়? সেই উত্তর অজানা থাকলেও সূত্রের দাবি সেই পেডিয়াট্রিক ব্রঙ্কোস্কোপি কেনার জন্য চিকিৎসকদের ওপর চাপ ছিল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশেরও। যা যাঁদর টিকি না কি বাঁধা ছিল স্বাস্থ্যভবনে।
বর্তমানে যাঁরা ওই হাসপাতালের শিশু বিভাগে চাকরি করছেন তাঁদের কারও কাছে এর কোনও উত্তর নেই। জানেন না বর্তমান হাসপাতাল সুপার অনাদি রায়চৌধুরীও। সুপার হওয়ার আগে ওই হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। এদিন তিনি বলেন, ” এই বিষয়টি আমার জানা নেই।” কিন্তু সেই ১১টি পেডিয়াট্রিক ব্রঙ্কোস্কোপি কেনার জন্য যে কোম্পানির লোক ওই বিভাগের চিকিৎসকদের নাগাড়ে সেধেছিলেন, হাসপাতালের দেওয়ালে সেই স্মৃতি আজও টাটকা। প্রয়োজনে ওই চিকিৎসকদের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কথাও বলেছিলেন কোম্পানির লোকেরা।
কিন্তু বারবার চিকিৎসকদের কাছ থেকে ‘না’ শুনে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ফিরতে হয় তাঁদের। স্বাভাবিকভাবেই যা ভাল লাগেনি স্বাস্থ্য কর্তাদেরও। শুধু তাই নয়, ওই হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেই কোম্পানিও নাকি ভুয়ো। বিশেষ সূত্রের দাবি, কোভিড কালে যে সমস্ত সরঞ্জাম মুর্শিদাবাদ সহ রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে কেনা হয়েছিল সেগুলো সারানোর দায়িত্ব পেয়েছে হাইটস নামে একটি সংস্থা। সেই সংস্থার ইঞ্জিনিয়ররা যখন তা সারাতে পারেন না তখন মূল কোম্পানির খোঁজ পড়ে। কিন্তু বাস্তবে বেশ কিছু সেই সব কোম্পানির হদিশ মেলে না।
যদিও তৎকালীন হাসপাতাল সুপার অমিয় কুমার বেরা এমন কোনও ঘটনার কথা জানেন না বলেই দাবি করছেন। তিনি বলছেন, ” এগারো লক্ষ হলেও না হয় চিন্তা করে দেখতাম এইরকম কোনও যন্ত্র কেনার কথা সেই সময় হয়েছিল কি না। কিন্তু আপনি বলছেন ১১ কোটি টাকা! এতবড় অঙ্কের সামগ্রী কেনার কথা যে হয়নি তা হলফ করে বলতেই পারি।” তাঁর আরও দাবি, ” আরজিকর কান্ডের জেরে এখন এইরকম নানান খবর রটবে।”
হাসপাতালের একটি অংশের দাবি, নতুন মেডিক্যাল কলেজ হিসেবে যে হাসপাতালের অধ্যাপক চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন পড়ুয়াদের উন্নত শিক্ষা দিতে, সেই হাসপাতাল বিগড়ে যায় কোভিডের অন্ধকারে। সেই সময় রোগীদের উন্নত পরিষেবা দিতে মাল্টি চ্যানেল মনিটর থেকে হাইফ্লো ডিভাইস যা যা হাসপাতালে কেনা হয়েছিল সেগুলির অধিকাংশই ছিল যথেষ্ট নিম্নমানের। আর তা নিয়ে চিকিৎসকদের একাংশ ক্ষুব্ধও ছিলেন। কিন্তু তাঁদের কিছু করার ছিল না। চিকিৎসক বেরা দায় ঠেলেছেন স্বাস্থ্যভবনের দিকে। তিনি বলেন, ” ওই সমস্ত যন্ত্রপাতি স্বাস্থ্যভবন দরপত্র ডেকে কিনেছিল। আমরা তা ইন্সটল করে ব্যবহার করেছি মাত্র।”
আরও পড়ুনঃ বন্যা বিধ্বস্ত পুরন্দরপুরে সেতুর স্বপ্ন দেখাল শাসক, তাকে ‘গাজর’ বলল কংগ্রেস