এক বছরে পুলিশ সমবায়ের লাভ ৮০ লক্ষাধিক

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ গত এক বছরে Murshidabad Police Co-operative credit Society লাভ করেছে ৮০ লক্ষাধিক টাকা। ২০২৩-২০২৪ অর্থবর্ষে ওই পুলিশ সমবায়ের লাভ হয়েছে ৮০ লক্ষ ৫৮ হাজার ৩৮৪ টাকা। সমবায়ের বর্তমান কার্যকারী মূলধন (Working capital) ৬১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা। গত বছর এই সমিতি জাতীয় স্তরের পুরস্কার ( National Co-operative Development Corporation award)  পেয়েছিল নিঁখুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সমিতি পরিচালনার জন্য। সমবায় সমিতির রাজ্যস্তরের খাতায় ‘এ’ গ্রেডের সমিতি নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন যাবত নির্বাচন না হওয়ায় ভগ্ন অবস্থা যখন জেলার প্রায় প্রতিটি সমবায় সমিতির তখন আঁধারে আলোর দিশা এই পুলিশ সমবায়, দাবি পর্যবেক্ষকদের।

২৭ বছরের সেই সমবায় সমিতির ২৯ তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বুধবার। পুলিশ অফিসের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার তথা সোসাইটির চেয়ারম্যান সূর্য প্রতাপ যাদব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) মাজিদ ইকবাল খান, সোসাইটির সেক্রেটারি তথা ডিএসপি হেডকোয়ার্টার তমাল কুমার বিশ্বাস ও সমিতির ম্যানেজার মীর মহম্মদ শামিম সহ অন্যরা। প্রধান অতিথি হিসেবে এদিন ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমবায় সমিতির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মানব বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি বলেন, ” সব দিক থেকে এই সমবায় ভাল কাজ করে চলেছে। পাশাপাশি আগামীদিনে আরও ভাল কাজ করবার সুযোগও আছে।”

জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির উদযাপন সম্মেলনে। নিজস্ব চিত্র

বর্তমানে এই সমবায়ের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজারের কাছাকাছি। অথচ ১৯৯৩ সালে আকস্মিকভাবেই এই সমবায়ের পথ চলা শুরু হয়। সমিতি সূত্রে জানা যায়, জলঙ্গীতে সেই সময় দুষ্কৃতি তান্ডবে নিহত হন একজন এন.ভি.এফ (National Volunteer Force) কর্মী। সরকারি সুযোগ বলতে ডেইলি ডিউটির ভিত্তিতে মাস শেষে সাম্মানিকটুকু ছাড়া আর কিছুই তাঁদের ছিল না। কিন্তু কর্তব্যরত অবস্থায় একজন এনভিএফ কর্মী নিহত হলে অর্থাভাবে পথে বসার জোগাড় হয় পরিবারের। নিহত সেই এনভিএফ কর্মীর পরিবারকে তেমন সাহায্য করতে না পেরে অসহায় বোধ করেন জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৌমেন মিত্র। সময় নষ্ট না করে উপায় খুঁজতে উদ্যোগী হলেন তিনি।

জাতীয় পুরস্কারের ট্রফি। নিজস্ব চিত্র

বহরমপুর রবীন্দ্রসদনে সেই ঘটনার পরপরেই দশ দিনের একটি চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হল মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সৌমেন মিত্রের পরিকল্পনায়। তার থেকে যে ৮৮ হাজার টাকা আয় হল তার বেশিরভাগটাই তুলে দেওয়া হয়েছিল নিহত ওই এনভিএফ কর্মীর পরিবারের হাতে। বাকি টাকায় স্থায়ীভাবে কোনও অস্থায়ী কর্মীর পরিবারকে সাহায্য করবার তাগিদই ছিল সমিতি তৈরির নেপথ্য কাহিনী। আর তার কারিগর ছিলেন প্রাক্তন আইপিএস সৌমেন মিত্র। শুরুর দিন থেকে শামিম আজও সেই সমিতির দায়িত্বে। তাঁকে আজ যোগ্য সহযোগিতা করেন কল্যাণ দত্ত, সনৎ মুখোপাধ্যায়, বিপ্লব চক্রবর্তী, অমল ঘোষ, বরুণ আচার্য্যরা।

সমিতির সদস্যদের স্থায়ী আমানত সহ অন্যান্য আমানত মিলিয়ে জমার পরিমাণ ৪৭ কোটি ৩৩ লক্ষ ২৯ হাজার ৬১৪ টাকা। সদস্যদের ঋণ ও অগ্রিম বাবদ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। তথ্য অনুযায়ী ২ হাজার ৬৭৮ জন পুলিশের নানাস্তরের কর্মীদের ঋণ দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে সিভিক ভলান্টিয়ার আছে এক হাজার একশো ৬২ জন। এই জেলার সিভিক ভলান্টেয়ারদের এই সমবায়ের সদস্য করে তাদের বিপদে আপদে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন আর এক প্রাক্তন পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। তার ফলে সিভিক ভলান্টিয়াররা এই ব্যঙ্ক থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পান।সমিতির আয়ে বাহিনীর নানান উন্নয়নমূলক কাজকর্ম হয়। গত আর্থিক বছরে ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে একটি পুলিশ ব্যারাক।

এই সমবায় সমিতি তৈরির পাশাপাশি ১৯৯৮-৯৯ সালে জেলার পুলিশ সুপার সৌমেন মিত্র পুলিশ হাসপাতাল তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সেই সময় হাসপাতালে ছিল অন্তঃর্বিভাগ ও বহির্বিভাগের সুবিধা। ছোটোখাটো অস্ত্রোপ্রচারের সুবিধাও ছিল। সব সময়ের জন্য দু’জন চিকিৎসক ছিলেন। দশজন নার্স ছিলেন। একজন ফার্মাসিস্ট ছিলেন। তৎকালীন পুলিশ সুপার সৌমেন মিত্রের ডাকে শহরের প্রথম সারির চিকিৎসকরা সপ্তাহে একদিন বিনা পারিশ্রমিকে আসতেন অসুস্থ পুলিশ কর্মীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে।

সদ্য প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পাঁচ শয্যার অত্যাধুনিক ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটের শিলান্যাস করেছিলেন ১৯৯৯ সালে। তখন যদিও তিনি ছিলেন পুলিশ মন্ত্রী। সেই সিসিইউ অবশ্য চালু হয়নি। আগে রোজ সেখানে একজন চিকিৎসক আসতেন, এখন আর তিনিও আসেন না। অথচ পুলিশের জন্য এই হাসপাতাল জরুরী ছিল বলে দাবি একাংশ প্রাক্তন পুলিশ কর্মীরও। বর্তমান জেলা পুলিশ আধিকারিকরা এ ব্যাপারে উদ্যোগী হন না বলেই খেদ তাঁদের। সমবায়ের রোজগার থেকে কী পুলিশ কর্মীদের জন্য হাসপাতাল চালু করা যেতে পারে? সোসাইটির সেক্রেটারি তথা ডিএসপি হেডকোয়ার্টার তমাল বাবু বলেন, ” অনেক কিছু করবার পরিকল্পনা আছে। তারমধ্যে হাসপাতালের ব্যপারেও আশাকরি উদ্যোগ নেওয়া হবে।” অপেক্ষায় পুলিশের নিচু তলার কর্মীরা।

আরও পড়ুনঃ ১১ কোটি টাকার যন্ত্র কেনার চাপ ছিল এমএমসিএইচের চিকিৎসকদের ওপর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights