বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ আরজিকর কান্ডের জেরে ফুটছে শহর। রাত কিংবা দিন ঠিক নেই কিছুই। রোজই কোথাও না কোথাও জমাট বাঁধছেন জনতা। উত্তেজিতও হচ্ছেন কেউ কেউ। সেইরকমই একটি ঘটনার সাক্ষী থাকল শহর বহরমপুর।
মঙ্গলবার শহরের ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকার ফাঁকা দেওয়ালে স্প্রে পেইন্টের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিবাদ জানাতে মাঝরাতে পথে নেমেছিল একদল তরুণ চিত্রশিল্পী। যে দেওয়ালে নিষেধ ছিল না আঁকা লেখা, মূলত সেই দেওয়ালেই তাঁরা কোনও চিত্র কিংবা শব্দ আঁকার কথা ভেবেছিলেন বলে দাবি তাঁদের। আর তা লিখতে গিয়েই ঘটেছে বিপত্তি।
ঘটনাটি ঘটেছে ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকার একটি রেঁস্তোরায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই তরুণ শিল্পীরা ওই রেঁস্তোরার প্রবেশ পথের দু-পাশে ও গ্যারেজের একটি স্তম্ভে লিখেছিলেন প্রতিবাদের ভাষা। গ্রাফিতি চিত্রে তাঁরা লিখেছিলেন “রাষ্ট্র ধর্ষকের হাতিয়ার”, ইংরেজিতে অন্য দেওয়ালে লেখা ছিল “Unmask the state/ uncovered the truth”, রেঁস্তোরার প্রবেশ পথে লিখেছিলেন “Defunct everything”।

সূত্রের দাবি, ওই সব লেখাতেই আপত্তি ছিল রেঁস্তরার এক মালিক সুপ্রিয় দাসের। তিনি বলেন, ” অনুমতি না নিয়ে আমার রেঁস্তোরার দেওয়ালে লেখাতেই আমার আপত্তি জানিয়েছিলাম। ওরা তাতে উত্তেজিত হয়ে যায়। আমার গেঞ্জিতে স্প্রে করে দেয়।”
আসলে গ্রাফিতি আঁকবার জন্য কোনও আগাম অনুমতি নিতে হয় না। চিত্রশিল্পের এই দিকটি এখনও বিতর্কিত। যদিও তরুণ শিল্পীদের পক্ষে সুজিত মন্ডল বলেন, “ওই রেঁস্তরার দেওয়ালে কিছু না লেখার জন্য কোনও বিজ্ঞপ্তি লেখা ছিল না। আমরা তাই লিখেছিলাম।” যদিও তা মুছে দেওয়ার কথা শিল্পীদের পক্ষ থেকে বললেও শেষপর্যন্ত তা মোছা হয়নি। উল্টে বচসা হাতাহাতিতে গড়ায়। গভীর রাতে একে অপরকে হুমকি পাল্টা হুমকি দিয়ে ফিরে যায় নিজের গন্তব্যে। কিন্তু ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় নেট দুনিয়ায়। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে ফেসবুকে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় বৃহত্তর জমায়েতের ডাক দেওয়া হয় ওই রেঁস্তরার সামনে। মাঠে নামে পুলিশ। দু-পক্ষকে থানায় ডেকে বিষয়টি মিটিয়ে দেন বহরমপুর থানার আইসি উদয় শঙ্কর ঘোষ। স্বাভাবিকভাবেই ছেদ পরে জমায়েতেও।

তবে জেলা পুলিশ তাদের স্কুটি নিয়ে উইনার্স টিমের রাতে ঘুরে বেড়ানোর প্রচার করলেও রাতে বিরেতে পুলিশের নজরদারির অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ শহরবাসীর। ইন্দ্রপ্রস্থের বাসিন্দা সংযুক্তা দাস বলেন, “এই ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মেয়েরা কেন, শহরবাসীরও নিরাপত্তা নেই এখানে। যদি কোনও বড় অঘটন ঘটে যেত পুলিশ কী জবাব দিত।” বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই রেঁস্তরার মালিক ও ভাল ছেলে আর তরুণ শিল্পীরাও ভাল ছেলে। একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে বিষয়টি ঘটেছে ঠিকই। তারমানে শহর নিরাপত্তাহীন এটা সরলীকরণ ছাড়া অন্য কিছু নয়। সকলেই আসলে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। শহর ঠিক আছে। শান্তিতে আছে।”