প্রতিশ্রুতি পূরণই লক্ষ্য সন্তু ও বিপ্লবের

Social Share

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ এ রাজ্যে বামেদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতেই পরিকল্পিতভাবে বিরোধীদের শূন্যের ব্যবহার। খাতায় কলমে বাংলায় কোনও বিধায়ক নেই, সাংসদ নেই তাই তারা শূন্য। কিন্তু শূন্যেরও যে গুরুত্ব আছে, সম্প্রতি আরজিকর হাসপাতালের খুন কান্ডে ফের তা প্রমাণ করেছে বাম যুব সংগঠনের ছেলেমেয়েরা। যে ক্ষীপ্রতা ও সাহসে ভর করে শববাহী শকট আটকে পরিকল্পিত একটি মামুলি হত্যার পিছনে যে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র সেদিন তারাই জানিয়েছিল রাজ্যবাসীকে। পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মত গোয়েন্দাদের আতস কাঁচের নিচে ক্রমশ খুলছে সেই জট। আর তাই কলতান দাশগুপ্তের মত উজ্জ্বল এক তরুণ নেতাকে গারদের অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার শাসকের ছল, প্রকাশ্যে আসতে দেরি হয় না। ছাড়া পায় কলতান। এখানেই শূন্যের গেড়ো নয় গুরুত্ব, বলছিলেন পুরনো এক বাম দলের পুরনো এক নেতা।

রাজ্যের এই উথাল পাথাল সময়ে নবগ্রামে প্রথমদিন প্রকাশ্য সমাবেশ ও পরে নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলের অন্দরে বাম যুব সংগঠনের জেলা সম্মেলন শেষ হল রবিবার। ট্রফি জিততে না পারুক মাঠ কামড়ে পরে থাকার মানসিকতা যে দলের আছে, সেই দলের নেতা সাধারণত পরের ম্যাচে বদলায় না। ব্যতিক্রম ছাড়া। লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকে যে জনসংযোগ সিপিএমের তৈরি হয়েছে, আরজিকর কান্ডে তা যে আরও প্রাসঙ্গিক হয়েছে, ফলে আন্দোলনের ধার বেড়েছে যুব নেতৃত্বের কৌশলেই, সে কথা বিরোধীরা ক্ষণে ক্ষণে টের পাচ্ছেন। জেলাস্তরে বিশেষ করে মুর্শিদাবাদে সেই লড়াই বাম যুবরা করেছে সন্দীপন দাস ওরফে সন্তু ও সৈয়দ নুরুল ওরফে বিপ্লবের নেতৃত্বে। বিপ্লবের গলাতেও তাই কোথাও যেন একটু আশার আলো শোনা গেল এদিন।

আর এই দুই নেতার প্রতি দলের ছেলেদেরও যে আস্থা আছে সে কথা বোঝাতে রবিবার সিঙ্গার হাইস্কুলে ৩৩১ জনের মধ্যে ৩১৭ জন প্রতিনিধিই উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন প্রাক্তনীরাও। ২৪ তম এই জেলা সম্মেলনের শুরুটা করে দিয়েছিলেন মীনাক্ষী। শেষ বেলায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি। এই ধ্রুবজ্যোতি জেলা ছেড়ে রাজ্যে যাওয়ায় সন্দীপনকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল পরবর্তী যুব নেতা হিসেবে। সেটা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। পরের বছর ২০২২ -এ তাঁকেই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২৪ এর জেলা সম্মেলনেও দল তাঁর উপরেই ভরসা রাখল। সেই হিসেবে টানা তিনবার জেলায় তাঁর কাঁধেই রয়েছে দলের ভার। ২০২২ সালে আনোয়ার সাদাতকে সরিয়ে সৈয়দ নুরুলকে সভাপতি বেছে নিয়েছিল দল। এবারও তাঁকেই ভরসা করা হয়েছে।

সম্মেলন থেকে বেড়িয়ে বিপ্লব বললেন, “আমরা শূন্য ঠিকই। কিন্তু মানুষ আজ আমাদের কথা শুনেছেন। আমাদের ডাকে পথে নেমেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। আমরা কখনও ভোটের রাজনীতি করি না। তাই ভোট ব্যঙ্ক ফেরাতে হবে এটাও আমাদের লক্ষ্য নয়। আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি এই রাজ্যে মানুষের দুটো হাতে কাজ নেই। তাকে কাজ দিতে হবে। চাষীকে ফসলের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে। স্কুলে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। হাসপাতালে উন্নত পরিষেবা দিতে হবে।আজ পথে নামা মানুষজনও সেই দাবি করছেন।”

হিসেব কষে ৬৭ জনের জেলা কমিটি থেকে ৩৩ জনকে বাদও দেওয়া হয়েছে, বয়স জনিত কারণ সহ অন্য একাধিক কারণে। নতুন আরও ৩৩ জনকে কমিটিতে স্থান দিয়ে গুরুত্বও বাড়ানো হয়েছে। দলের মুখপত্র যুবশক্তির জেলার দায়িত্বে থাকা হাসিরুল ইসলামকে সরিয়ে তাঁকে দলের অন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় এখন থেকে ওই পত্রিকার দেখাশোনা করবেন প্রাক্তন এসএফআই জেলা সম্পাদক শাহনাওয়াজ ইসলামকে।

লক্ষ্য অবশ্যই ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু সেই নির্বাচনেও মানুষ যেন তাঁর নিজের ভোট বামেদের জন্যই বরাদ্দ করেন তার জন্য এখনও অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে। বুথ ভিত্তিক কমিটি তৈরি করতে হবে। ইউনিট কমিটি বাড়াতে হবে বলেও সম্মেলনে নেতারা ঠিক করেছেন।

১৪ অগস্ট মেয়েদের রাত দখল কর্মসূচিতে দলীয় পতাকা ছাড়াই অংশ নিয়েছিল এই যুবরাই। তবু সেই কালো মাথার ভিড়ে প্রশ্ন উঠেছিল “সিপিএম কেন?” সন্দীপন শুধু বললেন, ” ব্যারিকেড করে রাজনৈতিক দল দাগিয়ে অনেকে অনেক কথাই বলেছে। তবু আমরা আমাদের কমিটমেন্ট রেখেছি। আমরা চাই নির্যাতিতার দোষীরা শাস্তি পাক।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights