অতিরিক্ত বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে গঙ্গা, পদ্মা, ভাঙছে পাড়, আতঙ্কিত এলাকাবাসী

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ দুয়ারে ভাঙন মুর্শিদাবাদের বিস্তৃর্ণ এলাকায়। প্রশাসনের ঘুম উড়িয়ে অতিরিক্ত বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে গঙ্গা,পদ্মা। সাধারণত, নদী জলস্তর ২১.৯০ মিটার ছুঁলে বিপদসীমা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২২.৫১ মিটার ছুঁলেই অতিরিক্ত বিপদসীমা জানিয়ে লাল সতর্কতা জারি করে প্রশাসন। সেই মাত্রা ছাপিয়ে গঙ্গা, পদ্মা বইছে ২২.৫৫ মিটার উচ্চতায়। গতকাল রাত থেকে ৭০ মিটার পর্যন্ত নদী পাড় ভেঙেছে বলে সেচ দফতর সূত্রে জানা যায়। বালির বস্তা, ছাইয়ের বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন।

নদী তীরবর্তী ফরাক্কা, ধুলিয়ান, সামসেরগঞ্জ, রঘুনাথগঞ্জ ২, লালগোলা, সুতি ১ ও সুতি ২ ব্লকে জারি করা হয়েছে সতর্কতা, জানান গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ বিভাগ একের নির্বাহী বাস্তুকার সঞ্জয় সিংহ। ওই ব্লকগুলিতে মানুষজনকে নদী কিনারা থেকে দূরে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এলাকায় মাইকিং করে সে কথা প্রচার করাও হচ্ছে। নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে স্থানীয় স্কুলে। ইতিমধ্যে পদ্মার জল বেড়ে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লকের শেখআলিপুরে।

নদী গর্ভে পাকা বাড়ি

মঙ্গলবার ভোর রাতে জলের তলায় তলিয়ে গিয়েছে আস্ত তিনটি বাড়ি, গাছ, গবাদি পশু। যদিও প্রাণহানির কোনও খবর নেই। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত তিনটে নাগাদ সামশেরগঞ্জের উত্তর চাচণ্ড এবং মধ্য চাচণ্ড এলাকায় লিচু বাগানের মাটি ধসে যায়। তারপরেই প্রচণ্ড আওয়াজ করে ভেঙে পড়ে তিনটি পাকা বাড়ি। আওয়াজের জেরে ঘুম ভেঙে সেই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী। ভাঙনের আশঙ্কায় অবশ্য আগেই বাড়ি ছেড়েছিলেন বাসিন্দারা। পরে খবর পেয়ে চাচন্ড এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন প্রশাসনের কর্তারা, স্থানীয় পঞ্চায়েত, এলাকার বিধায়ক আমিরুল ইসলামও।

চাচন্ড এলাকায় গত বছর নদী ভাঙন না হলেও সেবার পুজোর সময় সামসেরগঞ্জের প্রতাপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের শিকদারপুর গ্রামের ২৪টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছিল। তলিয়ে গিয়েছিল বিঘার পর বিঘা চাষের জমি। বেশ কয়েক বছর ধরে এই ব্লকে নদী ভাঙন মাথা চাড়া দিয়েছে। নদীর জল উপছে পড়ে ভাসিয়ে দিচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। অসহায় দুর্গতরা প্রশাসনের কাছে বন্যা ঠেকাতে আর্জি জানিয়েছে। আমিরুলও স্বীকার করেন ” এই ঘটনা নতুন নয়। কত মন্দির, মসজিদ তলিয়ে গিয়েছে। চাষের জমি চলে গিয়েছে নদীগর্ভে।”

সেচ দফতর, স্থানীয় পঞ্চায়েত, প্রশাসনের কর্তারা ঘন ঘন বৈঠক করছেন, নজর রাখছেন পরিস্থিতির উপর। বিধায়ক বলেন, ” কালকের ঘটনার পর নতুন করে ভাঙন যাতে না হয় সেচ দফতর, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। বন্যার হাত থেকে মানুষজনকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছি।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাঙন রোধে একশো কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। বিধায়ক বলেন “যেখানে যেখানে কাজ হওয়ার কথা হয়েছিল সেচ দফতরের মাধ্যমে সেই টাকা সেখানে খরচ হয়েছে।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সন্দীপন দাস প্রশ্ন তোলেন ” সেই টাকা কোথায় কোথায় খরচ হল। প্রত্যেক বার প্রতিশ্রুতি দেন বিধায়করা। সামসেরগঞ্জে তিন বিধায়কের বাড়ি। কাটমানির টাকা কার পকেটে ঢুকছে সেই হিসেবে জনসমক্ষে আনতে হবে। আজ মুর্শিদাবাদের মানচিত্র থেকে মুছতে বসেছে ধুলিয়ন,সামসেরগঞ্জ। এরজন্য দায়ি থাকবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দলবল।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights