
সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম পর্বের প্রথম দিন নির্বিঘ্নেই মিটল। আজ সোমবার ছিল বাংলা পরীক্ষা। দেশের কোনও স্কুল বোর্ডের পরীক্ষা এমসিকিউ ধাঁচে এই প্রথম। স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উৎকন্ঠায় ছিলেন। যদিও পরীক্ষা শেষে প্রশ্নপত্র সহজ হয়েছে বলে দাবি করেছেন পরীক্ষার্থীরা। সংসদের বেঁধে দেওয়া নিয়মেই পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মুর্শিদাবাদ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সুদীপ সিংহরায় বলেন ” প্রত্যেক বিধানসভার একজন করে নিয়ে যে প্রতিনিধি দল তৈরি করা হয়েছে তারা সবর্ত্র সজাগ সতর্ক থেকে পরীক্ষার্থীদের যেন কোনও অসুবিধা না হয় তার দিকে খেয়াল রাখছেন।”
কিন্তু ওএমআর সিট পূরণ করতে গিয়ে ভুরি ভুরি ভুল করেছেন পরীক্ষার্থীদের একাংশ। সেই ওএমআর পাল্টে দেওয়া হয়েছে। প্রথম পনের মিনিট বাদ দিলে একঘন্টা পরিদর্শকরা হলে চরকি পাকের মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন পরীক্ষার্থীদের সঠিকভাবে ওএমআর পূরণে সাহায্য করতে। শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এই ছবি প্রায় প্রত্যেক পরীক্ষা কেন্দ্রেই ধরা পড়েছে।
জেলার ইতিউতি কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা শুরুর পরে পৌঁছলেও তাঁদেরকে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়নি বলে দাবি সূত্রের। তবে এসবকে ছাপিয়ে সোমবার ফের সামনে এসেছে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের প্রসঙ্গ।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) জয়ন্ত হালদার বলেন, ” কোথাও কোনও অসুবিধা হয়নি। নির্বিঘ্নেই সব মিটেছে। মেডিক্যাল সংক্রান্ত কোনও অঘটন ও যেমন ঘটেনি তেমনি যানজটেও আটকে পড়েনি কেউ।” তিনি জানিয়েছেন, চলতি বছর মুর্শিদাবাদ জেলায় ৫৬ হাজার ১৯৭ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেবে উচ্চমাধ্যমিক। গত বছরের থেকে এ বছর প্রায় ১৪ হাজার পরীক্ষার্থী বেশি পরীক্ষা দিচ্ছে। গত বছর পরীক্ষার্থী ছিল ৪২ হাজার ১৮৭ জন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৬৫ হাজার ৫৭৯ জন। এই বছর ছাত্রের সংখ্যা ২২ হাজার ৫০৬জন। গত বছরের থেকে পাঁচ হাজার ছাত্র বেশি। ৩৩ হাজার ৬৯১ জন ছাত্রী চলতি বছর পরীক্ষা দিচ্ছেন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৯ হাজার বেশি।
আজ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনেই অনুপস্থিতির হার প্রায় পাঁচ শতাংশ, দাবি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের। সেই অনুপস্থিতি নিয়েই ফের শিক্ষামহলে উঠছে প্রশ্ন। ছাপঘাটি কেডি বিদ্যালয়ের তিন জন ছাত্রকে আজ সকাল ৯.৫৫ মিনিটি অ্যাডমিট দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক কৌশিক দাস। পরীক্ষা শুরু সকাল দশটায়। পরীক্ষাকেন্দ্র প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দূরের আমুহা কদমতলা স্কুলে। কৌশিকবাবু বলেন, “ওই পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করে তাঁদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।” ওই ছাপঘাটি কেডি বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর ৫৪৯ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসছেন। তার মধ্যে অনুপস্থিত ৩৬ জন পড়ুয়া। ছাপঘাটি কেডি বিদ্যালয়ে অন্য স্কুলের ৭৬৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪২ জন অনুপস্থিত। ঔরঙ্গাবাদ গার্লস স্কুলে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন ৩৩৭ জন। তার মধ্যে ১০ জন অনুপস্থিত।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মুর্শিদাবাদ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সুদীপ সিংহরায় বলেন, “ছাত্রীদের উপস্থিতি ছাত্রদের তুলনায় বেশি।” তবে ছাত্ররা কোথায় যাচ্ছে? পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক বলেন, “এটা একটা কারণ হতে পারে।” একাধিক শিক্ষক বলছেন “এই পরীক্ষাটি যে উচ্চমাধ্যমিকের ফাইনাল পরীক্ষা তা বুঝতে পারেনি অনেকেই। অসময়ে পরীক্ষা ও অন্যভাবে পরীক্ষা হওয়ায় পড়ুয়ারা অনেকেই স্কুলের পরীক্ষা ভেবে নিয়েছে।” উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম পর্বে যাঁরা অনুপস্থিত থাকলেন তাঁরা উচ্চমাধ্যমিকে অকৃতকার্য বলেই গণ্য হবেন। সেটা গ্রাহ্যেই আনেননি পড়ুয়ারা। এর জন্য স্কুলগুলিতে উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট না হওয়াকেই দুষছেন। একাংশ শিক্ষকের দাবি, “এগারো ক্লাসেই পড়ুয়াদের হাতে সরকার ট্যাবের টাকা তুলে দিচ্ছে, সেটা পেয়ে পড়ুয়ারা স্কুলের রাস্তা ভুলে যাচ্ছে।”