পুলিশ চলে গেলে কী হবে ? কান্না ভেজা গলায় প্রশ্ন জাফরাবাদে

Social Share

সংবাদ হাজারদুয়ারি ওয়েবডেস্কঃ আর কত রাত জীবন হাতে করে কাটাতে হবে? এই প্রশ্নই শোনা যাচ্ছে শমসেরগঞ্জে পা রাখলে। গত কয়েকদিন ধরে দুষ্কৃতি তান্ডবে তছনছ হয়ে গিয়েছে সুতি, ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জ। এলোমেলো হয়ে গিয়েছে জন জীবন। প্রাণ হাতে নদী পেরিয়ে চলে গিয়েছেন মানুষ পড়শি জেলায়। এমনকি পড়শি রাজ্যেও আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁদেরই কেউ কেউ। এলাকায় রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভারি বুটের আওয়াজেও দুষ্কৃতিরা বেপরোয়া।

সোমবার বিকেলে সেই সশস্ত্র পুলিশকে ঘিরে ধরে মুহুর্মুহু ছুড়তে লাগল ইঁট, পাটকেল, সামনে যা পেল। দিশেহারা পুলিশ প্রাণভয়ে ছুটে পালিয়ে রক্ষা পেল। কিন্তু কেন এত হিংসা? কিসের এতো ক্ষোভ এই প্রশ্নই উঠতে লাগল জাফরাবাদ জুড়ে। বিএসএফের বিএসএফের এডিজি ইস্টার্ন কমান্ড রবি গান্ধি অবশ্য বলেছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

রাজ্য পুলিশের এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকারও একই দাবি করেছেন শমসেরগঞ্জে দাঁড়িয়ে। এই জাফরাবাদেই দুষ্কৃতিদের হাতে খুন হতে হয়েছে বাবা ও ছেলেকে। কারা এইভাবে নৃশংস হত্যা করল, সেই প্রশ্নেই ধন্দে পুলিশও। এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম স্পষ্ট করে বলেছেন, ” আলাদা করে এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। দুষ্কৃতিদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য ব্যবস্থা করা হবে।”

শোকস্তব্ধ সেই বাড়িতে সোমবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহঃ সেলিম, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, জেলা সম্পাদক জামির মোল্লারা গিয়েছিলেন। তাঁদের কর্মীর পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। সেই অস্থির জাফরাবাদে বসেই মহঃ সেলিম এই ঘটনার জন্য পুলিশকে দোষী বলেছেন। তাঁরা এলাকা ছাড়ার পরেই অবশ্য দুষ্কৃতিরা পুলিশকে আক্রমণ করেছে। এলাকার মানুষের দাবি, হিন্দু-মুসলিমে ভাগ হয়ে গিয়েছে জঙ্গিপুর।

শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এই ঘটনার পেছনে উস্কানি দিচ্ছে বলে মহঃ সেলিম সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন। পুলিশ সাধারণ মানুষের ডাকে প্রথমে আসেইনি। যখন সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে তারপর পুলিশ এসেছে। তিনি বলেছেন, ” বাবা ছেলেকে খুন করা হয়েছে এরা হিংসার বিরোধী বলে। মুর্শিদাবাদে এমন অনেক মুসলিম নেতা আছে যাঁরা শুভেন্দুর হাত ধরে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছে। শুভেন্দু বিজেপিতে গেলেও তাঁরা মুসলিম বলে বিজেপিতে সরাসরি নাম লেখায়নি কিন্তু তাঁরা বিজেপি’র হয়েই কাজ করছে।”

এলাকার মানুষ বলছেন, এর আগেও জঙ্গিপুরে নানান বিষয়ে অবরোধ হয়েছে, বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কিন্তু এমন হিংসার ঘটনা আগে কোথাও ঘটেনি। এবার যেন থামার কোনও লক্ষণ নেই। এমনভাবে সংখ্যালঘু হিন্দুরা কখনও দুষ্কৃতিদের টার্গেটে পরিণত হয়নি। এবার এতটাই ভয়াবহ পরিস্থিতি যে নিজেদের ভিটে মাটি বেচে অন্য কোথাও অন্য কোনওখানে আশ্রয় খোঁজায় ব্যস্ত হচ্ছেন তাঁরা।

যদিও কোনওরকম কোনও ঘটনা ঘটলে সাধারণ মানুষ যেন পুলিশের শরণাপন্ন হতে পারে তারজন্য শমসেরগঞ্জ থানায় একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। যে কোনও অবস্থায় যে কোনও পরিস্থিতিতে পুলিশ গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেছেন। তবুও প্যানিক কল থামানো যায়নি বলে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ জানিয়েছেন। সাধারণ মানুষ অবশ্য বলছেন, প্যানিক নয়। পুলিশের আড়ালে রীতিমতো হুমকি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন অচেনা কণ্ঠ। সুপ্রতিম সরকার যখন সাংবাদিকদের বলছেন ১৯টি পরিবারকে ফেরানো হয়েছে। তাঁরা নিরাপদে আছেন। তখনও এলাকার একাংশ মানুষ বলছেন ” সে না হয় পুলিশ যতক্ষণ আছেন ততক্ষণ। তারপর ?” তার পরের আর কোনও উত্তর মেলেনি।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights