
বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ লোকসভা নির্বাচন জয়ের উদযাপন ও একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা করেছিলেন যে মাঠে সেই আমতলা কলেজ মাঠে ফের একবার ‘বিরাট জনসভা’র আয়োজন করলেন সফিউজ্জামান শেখ ওরফে হাবিব মাস্টার। ব্যবধান মাত্র চার মাস। লম্বায় ৫৬ ফুট আর চওড়ায় ৩০ ফুট সেই সভার মঞ্চ জুড়ে বসে ছিলেন তৃণমূলের ছোট, বড় নেতারা। সবাইকে আসন দিলেন, সম্মান জানালেন। পক্ষ নেওয়ার বার্তাও দিলেন কি? আয়োজন দেখে এমনটাই জিজ্ঞাসা রাজনীতির কারবারিদের।
ওয়াকফ সংশোধনী বিলকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক যুদ্ধে নেমেছে তৃণমূল। লক্ষ্য ২০২৬-এর আগে ঘর গুছিয়ে রাখা। একদিকে সংগঠনে রদবদল করা, অন্যদিকে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে শাসকদল বেশ কিছু নয়া পরিকল্পনা আগামীদিনে ঘোষণা করবে বলেই শাসক দলের অন্দরের খবর।
আর এই সময়ে জেলা স্তরের নেতারাও নিজেদের মতো করে তাঁদের পরীক্ষা প্রস্তুতি সেরে ফেলতে চাইছেন। হাবিব মাস্টারও সেই পথেরই অনুসারী। ২০১৮ সালে হাবিব ছিলেন কংগ্রেসের সদস্য। সেবার কংগ্রেসের টিকিট নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট লুঠের অভিযোগ তুলে হারের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তাঁর অনুগামীদের। ভবিষ্যৎ আন্দাজ করে পরে অবশ্য তৃণমূলের পতাকা কাঁধে তুলে নিতেও দ্বিতীয়বার ভাবেননি তেহট্টের ডঃ জাকির হোসেন মেমোরিয়াল হাইমাদ্রাসার এই শিক্ষক।
মুর্শিদাবাদের আর এক চেনা মুখ মোশারফ হোসেন, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি নওদায় তৃণমূলে তখন তিনিই শেষ কথা বলছিলেন। তৃণমূলে নাম লেখানো ইস্তক আবু তাহের খানের ভাগ্নে বলে পরিচিত হাবিবের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যদিও তেমন নিবিড় ছিল না বলেই এলাকার মানুষজনের দাবি। কিন্তু রাজনীতির গুটি চালাচালিতে মোশারফ যখন তৃণমূলে অস্তমিত, হাবিবের তখনই উদয়, তাও বলছেন তাঁরা। ফল মিললো ২০২৩-এ। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে একেবারে শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষের পদ।
লোকে বলে ‘মামা সহায়’ না থাকলে হাবিবের এই উত্থান এত গতি পেত না। ততদিনে এলাকার বিধায়ক হিসেবে জিতে গিয়েছেন সাহিনা মমতাজ বেগম। জনসমক্ষে যিনি হাবিবের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেন। বিধায়ক অনুগামীদের অভিযোগ, ব্লক সভাপতি হাবিব নিজের মতো করে দল চালান। বিধায়ককে পাত্তা দেন না। ব্লক সভাপতির অনুগামীদের পাল্টা অভিযোগ, বিধায়ক যেন নির্বাচিতই হয়েছেন স্বজন পোষণের জন্য।
এই পরিস্থিতিতে ওয়াকফ বিল বিরোধীতা নিয়ে দলীয় কর্মসূচি একপ্রকার নিজের এলাকায় ছিনিয়ে এনে এক বিরাট জনসভা করলেন হাবিব। ডেকে আনলেন তৃণমূল স্তরের নেতাদেরও। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচিত বিধায়ক এলেন না সেই মঞ্চে ” ডাক না পাওয়ায়”। ২০২৬-এর নির্বাচনে দল কী সিদ্ধান্ত নেবে তা সময়ই বলবে।
কিন্তু তাঁর ডাকে মানুষ আসে এই বার্তা তিনি এদিন দলকে দিয়ে রাখলেন। সাক্ষী থাকলেন দলের জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার, রাজ্যের মন্ত্রী আখরুজ্জামান, সাংসদ আবু তাহের খানরা। তিনি নিজে অবশ্য বলছেন, ” এগুলো আমার ভাবনায় ছিল না, নেইও। দল জানে কাকে টিকিট দেবে না দেবে। আমার কাজ দলের কর্মসূচি উতরে দেওয়া আর দলকে এলাকার মানুষের কাছে তুলে ধরা। ব্যাস।” এটাও বলছেন, “মানুষ বলবেন কে তাঁদের খোঁজখবর নেন কে তাঁদের পাশে থাকেন।” আবু তাহের বলছেন, ” ও ছাড়া নওদার মানুষের পাশে থাকে কে? আপনারাই যাচাই করে নিন।” বিধায়ক বলছেন, ” দল বলছে না। হাবিব বলছে আগামী দিনে তিনিই হবেন এই এলাকার বিধায়ক মুখ। আমি আর কী বলব।”