বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের আপত্তিকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে বৃহস্পতিবার ডেপুটেশন জমা দিয়েছে আইএমএ। তার প্রেক্ষিতে বিধায়কের গ্রেফতার হওয়ার কথা জেলার দুই শীর্ষ কর্তাই তাঁদের জানিয়েছেন বলে ওইদিন দাবি করেছিলেন আইএমএ-র বঙ্গীয় শাখার যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জন ভট্টাচার্য। কিন্তু ২৪ ঘন্টা পরেও বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় জেলা প্রশাসনের প্রতি ক্ষুণ্ণ এই চিকিৎসক সংগঠন।
এদিন রঞ্জন বলেন, ” দেশের শীর্ষ আদালত আমাদের চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সরকারের একজন বিধায়ক চিকিৎসকদের ন্যায্য আন্দোলনের প্রতিবাদ করে জনরোষের নামে একপ্রকার প্রাণে মারের হুমকি দিচ্ছেন। সে কথা জানানোর পরে জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা চলে আসার পর আর নড়লেন না। কেন? সে কথা আমরা আদালতকেও জানাব। আপনারাই বলুন আমরা নিরাপদ কোথায়?”
তাঁকে পুলিশ ডাকেনি। তবে ডাকলে যাবেন জানিয়ে ফের হুমায়ুন হুমকি দিয়ে বলেন, ” পুলিশ কমিশনার কে হবেন? কোথায় কে কোন পদে থাকবে তা দাবি করার কে চিকিৎসকরা? এত ঔদ্ধত্য কোথা থেকে আসে। আমার কথায় চিকিৎসকরা এফআইআরের আবেদন জানিয়েছেন শুনেছি। এরপর চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যু হলে রোগীর পরিবার নিয়ে গিয়ে এসপি অফিস ঘেরাও করব। তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারির আবেদন করব।”
৩২ দিন কেটে গিয়েছে। এখনও অধরা আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী শিক্ষানবীশ চিকিৎসক খুনে জড়িতরা। একজনকে পুলিশ ঘটনার ২৪ ঘন্টা মধ্যেই গ্রেফতার করেছে। এখনও সিবিআই ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে। ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার অগ্রগতি নিয়ে পরবর্তী শুনানিতে শীর্ষ আদালতকে জানাবে সিবিআই । তারমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে হওয়া বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে। যদিও সেদিন মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন এসমা (ESMA: Essential services maintenance act)-র কথা। পাল্টা গণ ইস্তফা দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতেও তাঁরা পিছপা হবেন না বলে শুনিয়ে রেখেছেন চিকিৎসকরাও। ইতিমধ্যে বিষয়টির দিকে নজর দিতে রাষ্ট্রপতিকে চিঠিও পাঠানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছেন জুনিয়ররা।
এই আবহে হুমায়ুন কবীরের বক্তব্য নিয়ে দলের পক্ষ থেকে কোনও কড়া বার্তা না দেওয়ায় হতাশ চিকিৎসকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি চিকিৎসক বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের সময়ও হিন্দু-মুসলমান তথ্য তুলে ধরে সমাজে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করেছিলেন ওই বিধায়ক (হুমায়ুন কবীর)। তখনও দল নিশ্চুপ ছিল। পরে জানা গিয়েছে শাসকদলের প্রচ্ছন্ন কৌশলই ছিল ভোট ভাগাভাগির। জেলার দুই বিজেপি বিধায়ককেও জনরোষের আড়ালে মারবার প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলেন।এক্ষেত্রেও দল টুঁ শব্দ করেনি। এই ঘটনাতেও দলের নেতাদের চুপ থাকার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করায় দলের পক্ষ থেকে কোনও শাস্তি দেওয়া হয়নি তাঁকে। স্বাভাবিক ভাবেই মনে হয় দল ও সরকারের মুখ হিসেবে তাঁকে নিয়ে আসা হয় কৌশলে।”
তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, “হুমায়ুন যা বলেছেন তা তাঁর ব্যক্তিগত বক্তব্য। রাজ্য সবটাই নজরে রেখেছে। আমি মনে করি চিকিৎসকরা ভগবান। তাঁরা যে শপথ নিয়ে এই পেশায় এসেছেন সেটুকু স্মরণ করিয়ে আমাদের জেলার চিকিৎসকদের বলতে চাই আপনারা কাজে ফিরুন। কোথাও কোনও ভয় নেই। আপনারা ভয়মুক্ত পরিবেশেই কাজ করুন।”