সংবাদ প্রতিনিধি, বহরমপুরঃ মাত্র ৬৭ বছর বয়সে থেমে গেল সাংবাদিক অনল আবেদিনের কলম। শুক্রবার সন্ধ্যা ছ’টা ৪৪ মিনিট নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। দিন কয়েক আগে বাড়াবাড়ি হলে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়। সাময়িক সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে যান। আজ শুক্রবার ফের অসুস্থ হলে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এই সাংবাদিক। তিনি রেখে গেলেন তাঁর দুই কন্যা অন্বেষা ও বর্ণমালা এবং স্ত্রী তন্দ্রাকে। তিনি মরণোত্তর চক্ষুদান করেছিলেন। শুক্রবার রাতেই সেই কাজ সম্পন্ন হয়েছে শহীদ ক্ষুদিরাম পাঠাগারের সহায়তায়।
আনন্দবাজার পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে তিনি তাঁর কর্মজীবন শেষ করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি তথ্য ভিত্তিক সংবাদ পরিবেশনে সক্রিয় ছিলেন। যে আরজিকর কান্ড নিয়ে উত্তাল রাজ্য তা নিয়েও সমাজমাধ্যমে তিনি তাঁর তীক্ষ্ম বিশ্লেষণী কলমে প্রশ্ন তুলেছিলেন “রোগীরা সব গেল কোথায়?” সেটিই ছিল সমাজমাধ্যমে তাঁর শেষ পোস্ট। একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন অনল। সোজা কথা স্পষ্টভাবে বলতেই পছন্দ করতেন প্রয়াত এই সাংবাদিক।
চলতি বছর লোকসভা নির্বাচনে তিনি সরাসরি কংগ্রেস দলকে সমর্থন করেছিলেন। বহরমপুরের কংগ্রেসের লোকসভার প্রার্থী অধীর চৌধুরীর প্রচার মঞ্চে উঠেও তিনি সেই সমর্থনের কৈফিয়ত দিয়েছিলেন নিজস্ব ভঙ্গীতে। অধীরও এদিন তাঁর শোকবার্তায় প্রয়াত অনলের যুক্তিবাদী নীতির প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ” সাংবাদিক অনল আবেদিন আর ইহলোকে নেই — একথা ভাবতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। একজন যুক্তিবাদী মানুষ যিনি তাঁর জীবনে হ্যাঁ কে হ্যাঁ আর না কে না বলতে ছিলেন অভ্যস্ত, তীক্ষ্ণ সমালোচনার অস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী। আমার পরম মনের মানুষটিকে হারালাম, জগতের ভালো মানুষদের তালিকা থেকে একটা নাম হারিয়ে গেল। “
আরও পড়ুনঃ অধীর চৌধুরীর পক্ষে ভোট চাইলেন প্রবীণ সাংবাদিক
সাংবাদিক প্রসুন আচার্য সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ” অনল ছিল একজন সেক্যুলার, গনতান্ত্রিক অধিকার সচেতন মানুষ এবং এই নিয়ে আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। যে একই সঙ্গে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা এবং মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধে। এই দুয়ের বিরুদ্ধেই সমান ভাবে ওর কলম চলতো। ইদানিং কালে সাংবাদিকদের অধোগতি, তাদের কর্ম ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা একই সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব ছিল। ভালো গল্প লিখতো। আর সন্ধ্যার আড্ডায় অনলের কোনও বিকল্প নেই। জেলা , অতীত ও সমকালীন রাজনীতি ও ইতিহাসে ওর দক্ষতায় ঈর্ষা করার মত।” এই সময় পত্রিকার সম্পাদক হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় অনল সম্পর্কে লিখেছেন, ” শহরের পাঠককে জেলা চেনানোর এক পথিকৃৎ কারিগর।”
আনন্দবাজারে তাঁর একসময়ের সহকর্মী গৌরব বিশ্বাস লিখেছেন, “হারালাম আমার অগ্রজ সহকর্মী, দাদা ও খুব কাছের এক বন্ধুকে।” আর এক প্রাক্তন সহকর্মী শুভাশিস সৈয়দ মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ছুটে যান হাসপাতালে। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন, “খবরের ভেতর খবর খুঁজে বের করে সেই খবরের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দিনের পর দিন খবর করতেন বলেই তিনি আজকের অনল আবেদিন হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। অনলদাকে ঘিরে এত স্মৃতি, এত কথা কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব, ঠিক বুঝতে পারছি না। সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।” তাঁর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত, প্রাবন্ধিক হাসিবুর রহমান, আনন্দবাজার পত্রিকার বর্তমান ফটোগ্রাফার গৌতম প্রামাণিক, সাংবাদিক হাতেমূল ইসলাম, সাংস্কৃতিক কর্মী সোনালী গুপ্ত ও তাঁর একাধিক সুহৃদ।
প্রয়াত অনল আবেদিনের জন্মভিটে দৌলতাবাদ থানার অন্তর্গত ঘোষপাড়া নওদাপাড়া। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেখানেই দুপুর ১ টার পর তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।